ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ২০১৮ সালেই বাজারে আসবে কৃত্রিম অগ্ন্যাশয়

0
342

যুক্তরাজ্যের গবেষকরা পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম অগ্ন্যাশয় (pancreas) তৈরি করেছেন, এবং এটি ২০১৮ সালের মাঝেই বাজারে কিনতে পাওয়া যাবে। এটি ব্যবহার করে ডায়াবেটিস রোগীরা কোনো প্রকার ইনজেকশন ছাড়াই তাদের গ্লুকোজ লেভেল পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বড় ধরনের খবর, কারণ টাইপ- ১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের এখন দুটি যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়- একটি গ্লুকোজ লেভেল পরীক্ষা করার জন্য অন্যটি সঠিক মাত্রায় ইনসুলিন প্রবেশ করানোর জন্য। উভয় যন্ত্রেই ইনজেকশন দেয়া লাগতো। আর লোকমাত্রই জানে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাটাছেরা কতটা ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু সামনে বাজারে আসতে যাওয়া কৃত্রিম অগ্ন্যাশয় একাই দুটি কাজ করতে পারবে এবং এতে কোনো ঝুঁকি থাকবে না।

উল্লেখ্য অগ্ন্যাশয় হচ্ছে মানবদেহের পরিপাক তন্ত্রের অন্তর্গত একটি গ্রন্থি। অগ্ন্যাশয় থেকে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ইনসুলিন নির্গত হয়। এই ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো একভাবে যদি অগ্ন্যাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বং তাতে যদি ইনসুলিন নির্গত হওয়া বন্ধ হয়ে যায় তাহলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অর্থাৎ গ্লুকোজগুলো দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তিতে পরিণত হচ্ছে না। ফলে দেখা দেয় ডায়াবেটিস। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে অর্থাৎ গ্লুকোজকে দেহের শক্তিতে রূপান্তর করতে কৃত্রিমভাবে ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয়।

মানবদেহে অগ্ন্যাশয়ের অবস্থান।
মানবদেহে অগ্ন্যাশয়ের অবস্থান।

যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরীক্ষামূলকভাবে কিছু রোগীর উপর কৃত্রিম অগ্ন্যাশয় ব্যবহার করে দেখেছেন এবং এতে ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছেন। তাদের যন্ত্রের কার্যপ্রণালী ও বিবরণ দিয়ে European Association for the Study of Diabetes এর জার্নাল ডাবেটোলজিয়া’তে প্রকাশ করেছেন।

যন্ত্রও খুব একটা জটিল নয়। স্মার্ট ফোন আকৃতির একটি যন্ত্র পেটের কাছে এঁটে থাকবে শুধু। যন্ত্রও ‘স্মার্ট’ভাবেই কাজ করবে। প্রথমে একটি সেন্সরের মাধ্যমে যন্ত্র রক্তে চলমান গ্লুকোজের মাত্রার রিডিং নিবে। এবং সে অবস্থা অনুসারে উপযুক্ত পরিমাণে ইনসুলিন গ্রহণের কথা জানিয়ে দিবে। এবং ত্বকের মধ্য দিয়ে ইনসুলিন প্রবেশ করিয়ে দিবে।

রোগী ভেদে কারো কারো দিনে এমনকি ৫/৬ বার করেও ইনসুলিন নিতে হয়। এতে করে উপযুক্ত পরিমাণে ইনসুলিন প্রবেশ না হবার একটা ঝুঁকি থাকে, এই যন্ত্র আসলে সেই ঝুঁকিটা আর থাকবে না। তার উপর অনেকে আছে ইনসুলিন গ্রহণে অনিয়মিত। এমন অবস্থায় যন্ত্র যখন বাজে পরিস্থিতির রিডিং দিয়ে রাখবে তখন ইনসুলিন নেয়াতে অনিয়মিত হবার প্রবণতা কমে যাবে।

প্রয়োজনীয় যন্ত্রগুলো।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রগুলো।

২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের বাজারে আসলেও আন্তর্জাতিক বাজারে আসতে আরো কিছু সময় লাগবে। আমেরিকার Food and Drug Administration এই যন্ত্রের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখছে। ধারণা করছে ২০১৭ সাল নাগাদই অনুমোদন পেয়ে যাবে।

তবে এই যন্ত্রের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। যেমন সময়। দ্রুতগতিতে এটি কাজ করতে পারে না। সবকিছুর হিসাব নিকাশ করতে কিছুটা সময় নেয়। এই ত্রুটি হয়তো এর পরবর্তী কোনো ভার্সনে সারিয়ে আনা যাবে।

-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.