ওকলাহোমার এক মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষার্থী রসায়নে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত কিছু আবিষ্কার করেছে। আমরা জানি, কার্বন সাধারণত চারটি বন্ধন গঠন করে। সে দেখিয়ে দিয়েছে কার্বনের পক্ষে সাতটি বন্ধন পর্যন্ত গঠন সম্ভব। কার্বনের এতো অধিক সংখ্যক বন্ধন আগে কল্পনার ও অতীত ছিল।
মাধ্যমিক স্তরের রসায়নবিদ্যা সাধারনত কার্বনের বহুমুখিতা সম্পর্কে ধারনা দেয়। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে যে কার্বনের বহিঃ খোলসে চারটি ইলেকট্রনের ঘাটতি রয়েছে, তাই কার্বন চারটি পর্যন্ত বন্ধন গঠন করার চেষ্টা করে। কার্বনের এই বিশেষ ক্ষমতা জৈবিক কোন কিছু গঠনের প্রধানতম মৌলিক ভিত্তি। এই চারটি বন্ধন অনেক গুরুত্বপূর্ণ অণুর মধ্যে পাওয়া যায়, যেমনঃ ডিএনএ থেকে অ্যালকোহল, এমনকি হীরাতে পর্যন্ত। কিন্তু এই গল্পের আরো অনেকটাই বাকি।
কিছু ব্যতিক্রমধর্মী পরিস্থিতিতে কার্বন চারটির বেশি বন্ধন তৈরি করতে পারে। এই উপাদানগুলিকে ঐ বিশেষ ক্ষেত্রে হাইপারকার্বন বলা হয়। ১৯৫০ এর দশকে দেখা যায় যে কার্বন কখনও কখনও পাঁচটি বন্ড তৈরি করতে পারে। এবং ২০১৬ সালে জার্মানীর একটি দল ছয় বন্ধনের হাইপারকার্বন তৈরী করে দেখায়। ঐ গবেষনাপত্রের সূত্র ধরেই এই আবিষ্কারের শুরু। ওকলাহোমা বিজ্ঞান ও গণিত স্কুলে ড. এ কে ফজলুর রহমান কার্বন বিষয়ে বক্তৃতার সময় শিক্ষার্থীদের ২০১৬ সালের সেই গবেষনাপত্রের কথা জানান। তিনি তাদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন কার্বনের ছয় অপেক্ষা বেশি বন্ধনের সম্ভাবনা সম্পর্কে চিন্তা করার জন্যে। অপ্রত্যাশিতভাবে তার একজন শিক্ষার্থী, জর্জ ওয়াং, অকল্পনীয় একটি কাজ করে বসল। সে দেখাল যে কার্বনের ছয় বন্ধন শেষ সীমা ছিল না। কার্বনের পক্ষে সাতটি পর্যন্ত বন্ধন থাকা সম্ভব।
ইনভার্স এর রিপোর্ট অনুযায়ী ডঃ রহমান, জর্জ ওয়াং এর গণনার সত্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এটি কার্বন এবং হাইড্রোজেনের সাতটি বন্ধনের স্থিতিশীলতা তো দেখিয়েছেই, উপরন্তু এটাও দেখিয়েছে যে, এই দুটি নির্দিষ্ট উপাদান দিয়ে তৈরী আট বন্ধনের সংস্করণ স্থিতিশীল হবে না। এই গণনাগুলি এখন Journal of Molecular Modeling এ প্রকাশিত হয়েছে।
দলটি দেখিয়েছে, কার্বন পরমাণু দিয়ে পিরামিডের আকৃতি তৈরি করা সম্ভব। এর তলদেশটি হবে ষড়ভুজাকৃতির কার্বনের বেষ্টনী এবং চূড়াটি ঐ ছয়টি কার্বনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। যেহেতু প্রতিটি কার্বন একটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে, শেষ পর্যন্ত চূড়ার কার্বনটির ও সাত বন্ধন থাকবে।
হাইপারকার্বন অণুগুলি অত্যন্ত অস্বাভাবিক যৌগ, তাই এটি বৈপ্লবিক কিছু ঘটাতে পারে। এই ধরনের কাঠামো জৈব রসায়নে একটি সম্পূর্ণ নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করতে পারে। এর ব্যবহারিক প্রয়োগ হতে পারে হাইড্রোজেন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে। ঐ গবেষণা পত্রে রাসায়নিক সংশ্লেষণের মত নতুন ক্ষেত্রগুলোর ও উল্লেখ করা হয়েছে। [লাইভ সায়েন্স অবলম্বনে]
-পুলক বড়ুয়া