জলবায়ু পরিবর্তনে বৃহস্পতি ও শুক্রের আশ্চর্যজনক প্রভাব

0
665

আপনার যদি মনে হয়ে থাকে আমরা বৃত্তাকারে সূর্যের চারপাশে ঘুরছি তাহলে সেটাকে ভুল বলা যায় না। অবশ্য আমরা যে কক্ষপথে আবদ্ধ তা আমাদের কল্পনার চেয়ে বেশ বড়। পৃথিবীর কক্ষপথটি বৃহস্পতি ও শুক্র এই দুইটি গ্রহের মহাকর্ষীয় বল দ্বারা বিকৃত হয় এবং এই আশ্চর্যজনক ঘটনাটি প্রতি ৪০৫,০০০ বছর পরপর ঘটে –বহুদিন যাবত প্রমাণের অপেক্ষায় থাকা এই বৈজ্ঞানিক অনুকল্পটি অবশেষে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন।

রাটগারস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূচৌম্বকীয় গবেষক ডেনিস কেন্ট বলেন,”এটি একটি বিস্ময়কর ফলাফল কেননা প্রায় ৫ কোটি বছর আগে থেকে গ্রহগুলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহের এই প্রভাব সম্পর্কে অনুমান করা হচ্ছিল এবং প্রভাবটি প্রায় ২১.৫ কোটি বছর আগে থেকে বিদ্যমান বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন পৃথিবীর আবহাওয়া, পরিবেশ, ডাইনোসর, স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং জীবাশ্মের পরিবর্তনের ঘটনাগুলোকে এই ৪০৫,০০০ বছরের পর্যায়ক্রমিক চক্র দ্বারা সুস্পষ্টভাবে একটি অপরটির সাথে সংযুক্ত করতে পারবেন।“

বিগত কয়েক দশক যাবত বিজ্ঞানীরা এই ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করে আসছেন যা মিলানকোভিচ চক্র বলে পরিচিত। এর প্রভাবে সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণায়মান আমাদের এই পৃথিবীর প্রায় বৃত্তাকার কক্ষপথটি পৃথিবীর বৃত্তাকারে ঘূর্ণনরত অবস্থায় প্রায় ৫ শতাংশ পর্যন্ত উপবৃত্তাকার হয়ে যায়।

কিন্তু কত বছর আগে থেকে পৃথিবী ও সৌরজগতে এর প্রভাব রয়েছে সে ব্যাপারটি আগে অনেক বিতর্কিত ছিল।

আরিজোনার সংরক্ষিত ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক হতে উত্তোলিত প্রাচীন শিলা থেকে আমরা এ ব্যাপারে আরো ভালভাবে জানতে পারছি।

২০১৩ সালে কেন্ট ও তার দল পার্কে ১৫০০ ফুট লম্বা (৪৫৭ মিটার) খনন করে যে প্রাচীন শিলার নমুনা উদঘাটন করেন সেগুলোর রেডিওআইসোটোপ বিশ্লেষণ করে তাঁরা শিলার বয়স এবং পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের মেরুতে বৈপরীত্বের আভাস পান।

যখন তাঁরা নিউ জার্সির বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত নিওয়ার্ক বেসিন নামক প্রাগৈতিহাসিক হ্রদ হতে সংগৃহীত পলিমাটির সাথে তুলনা করলেন তখন তারা প্রতি  ৪০৫,০০০ বছর পরপর ঘটা এই মহাকাশীয় চক্র সম্পর্কে জানতে পারেন যা সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর ঘূর্ণনকে প্রায় ২১.৫ কোটি বছর আগের ট্রায়াসিক যুগ থেকে প্রভাবিত করছে।

কেন্ট বলেন,”আরো অনেক ছোট কক্ষপথ রয়েছে কিন্তু আপনি যখন এত বছর আগের বিষয়ে কিছু বলেন তখন আপনি কোন কক্ষপথ নিয়ে কাজ করবেন তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে কেননা কক্ষপথগুলোও সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু এই কক্ষপথটির বৈশিষ্ট্য হলো এটি এককভাবে সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় না। বরং অন্যান্য কক্ষপথগুলো এটিকে অধিক্রমণ করতে পারে।“

প্রতি ৪০৫,০০০ বছর পরপর এই পর্যায়ক্রমিক চক্রটি ডাইনোসরের আবির্ভাবের পূর্ব থেকে চলমান এ ব্যাপারটি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে এই আবিষ্কারটি আরো অনেক গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। যেমন আমরা জীবাশ্মের উৎপত্তি ও জীবের বিবর্তনকে কীভাবে ব্যাখ্যা করছি তা এবং গ্রহগুলোর গতিবিধি আরো ভালভাবে অনুধাবনের সুযোগ তৈরি করেছে।

বস্তুত বিজ্ঞানের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচিত বিষয় কিভাবে বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহ দুইটি পৃথিবী থেকে এত বিশাল দূরত্বে অবস্থিত থেকেও পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে উষ্ণতা ও শীতলতার হ্রাস-বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। এমন নয় যে গবেষকগণ এখানে জলবায়ুর পরিবর্তনে মানুষের কর্মকাণ্ডকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। বরং এখানে মিলানকোভিচ চক্রের মত অতিক্ষুদ্র প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে যা আমাদের ক্ষুদ্র জীবনকালে আমাদের নজরে পড়ে না।

কেন্ট বলেন,”যে সকল প্রভাব-বিস্তারকারী কারণে আমাদের পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটতে পারে সেগুলোর তালিকায় যদিও এই ব্যাপারটি বেশ নিচে। অপরদিকে আমরা যে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাসে ত্যাগ করছি বর্তমানে এটিই জলবায়ুর জন্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। এই বিপুল কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রভাবই আমরা এখন ভোগ করছি। গ্রহগুলোর গতির প্রভাব খুবই সূক্ষ্ম। [Science Alert অবলম্বনে]

-আবরার আলী

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.