ডি.এন.এ থার্মোমিটার!

0
452

বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহারকে বিকশিত করতে নানা ধরণের নতুন উপায় খুঁজে চলেছেন। স্তন ক্যানসার নির্ণয় থেকে শুরু করে ভালো টাচস্ক্রিন নির্মান সহ অত্যন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভাবনে তাঁরা ন্যানোটেকনোলজিকে কাজে লাগাবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

কিন্তু এই ধরনের একটি ছোট স্কেলে কাজ করতে গিয়ে একটি  বড় সমস্যা হল তাপমাত্রার উঠা-নামা। অত্যন্ত সুক্ষ একটি গবেষণায় কোন বস্তুর তাপমাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে কিনা বা হলে কতটুকু হচ্ছে তা জানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ অনেক সময় এই সুক্ষ তাপমাত্রার পরিবর্তন গবেষণাকে বাধাগ্রস্থ করে। স্বাভাবিক যে সকল সরঞ্জাম গবেষণায় ব্যবহৃত হয় সেসব আকারে তুলনামূলকভাবে বড় হওয়ায় তা কাজের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এগুলো ব্যবহার করে ক্ষুদ্র কাঠামোর মধ্যে তাপের মান জানা প্রায় অসম্ভব একটা কাজ।

এই বিষয়টিকে বিবেচনা করে  কানাডার গবেষকরা বিশ্বের ক্ষুদ্রতম প্রোগ্রামযোগ্য থার্মোমিটার তৈরি করেছেন। যার গঠন ডি.এন.এ দ্বারা এবং আকারে মানুষের চুলের চেয়ে বিশ হাজার গুণ ছোট। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলটির মতে, এই নতুন ডিভাইস তৈরিতে তাঁদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে ৬০ বছরের পুরানো একটি গবেষণা। গবেষণাটি ছিল: ডিএনএ অণুর একটি নির্দীষ্ট তাপমাত্রার পরিবর্তনে অনুলিপন। গবেষণাটি নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েই এই  নতুন ক্ষুদ্র থার্মোমিটার প্রযুক্তির ভিত্তি হিসেবে ডি.এন.এ-এর ব্যবহারের কথা গবেষক দলটির মাথায় আসে।

গবেষণা দলের সদস্য অ্যালেক্স ভ্যালি-বেলিসলে বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, প্রাণরসায়নবিদরা  আবিষ্কার করেন যে এক ধরনের ক্ষুদ্র অনু-প্রাণের ভেতর অবস্থিত  প্রোটিন অনু বা আরএনএ (ডিএনএ একটি অণু অনুরূপ) একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় অনুলিপন ঘটায় যা একটি ন্যানো-মিটারের মতন কাজ করে। ঐ প্রাকৃতিক ন্যানোমিটারগুলো মানুষের চুলের চাইতে বিশ হাজার গুণ ক্ষুদ্র আকৃতির, এবং এরা একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় অনুলিপন ঘটাতে সক্ষম।”

মূলত, ডিএনএ চারটি নিউক্লিওটাইড (একটি, টি, সি, জি) নিয়ে গঠিত, যারা পরষ্পরের সাথে নানা ধরণের প্যাটার্ন তৈরি করে যুক্ত থাকে। গবেষক দলটি ডি.এন,এ গঠনে এমন একটি ডিজাইন করতে সক্ষম হয়েছিল, যা একটি প্যাটার্নে তৈরি এবং একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় অনুলিপন ঘটাতে সক্ষম। যেটা কাজ করবে থার্মোমিটারের মতন এবং কিছু কিছু দিক থেকে সাধারণ থার্মোমিটারের চেয়েও অনেক নিঁখুত।

আরেকজন গবেষক আর্নাড ডেসরোসিয়ের্স বলেন, “এই ডি.এন.এ কাঠামোর সাথে আলোকসংবেদী একটি ডিভাইস যোগ করার মাধ্যমে খুব সহজেই বানানো হয়েছে ৫ ন্যানোমিটার ব্যাসের এই ডি.এন.এ থার্মোমিটার যা চমৎকারভাবে তাপমাত্রার পরিমান নির্দেশ করে চলে।”

এই নতুন থার্মোমিটারের উদ্ভাবন গবেষকদের গবেষণায় আরও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছে গবেষণা দলটি। এতোদিনের গবেষণার ক্ষেত্রে অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এ থার্মোমিটারটি কাজে লাগবে।

বর্তমানে দলটি তাদের এই নতুন উদ্ভাবিত ডি.এন.এ থার্মোমিটারের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের গবেষণার রিপোর্ট নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে “ন্যানো লেটারস” নামক বিজ্ঞান জার্নালে।

⚫ সাফায়েত আহমেদ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.