সূর্য সংক্রান্ত সবচেয়ে ধাঁধাময় রহস্যের সমাধান

0
670

সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা মাত্র ৫৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অথচ এর পৃষ্ঠের বাইরের দিকের তথা বায়ুমন্ডল বা করোনার তাপমাত্রা কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই ধরনের গরমিলের কারণ বিজ্ঞানীরা এতদিন ধরতে পারছিলেন না। তবে, অবশেষে তাঁরা ধারনা করছেন এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।

সূর্যের পৃষ্ঠের তুলনায় বায়ুমন্ডলের (করোনা বলা হয়) তাপমাত্রা বেশী হওয়ার একটি সম্ভব্য কারণ ধরা হয়েছিলো এর ন্যানোফ্লেয়ারের মাধ্যমে। ন্যান্যোফ্লেয়ার হলো সূর্যপৃষ্ঠে সৃষ্ট ক্ষুদ্র সৌর উদ্গীরণ যা করোনাতে শক্তি এবং প্লাজমা পদার্থ ছড়ায়। এর মাধ্যমে এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই প্রস্তাবনা প্রথম দেওয়া হয়েছিলো ১৯৬০ এর দশকে। তবে প্রস্তাবনা দেওয়ার পর হতে আজ অব্দি এসব ক্ষুদ্র উদ্গীরন খুঁজে পাওয়া যায় নি। ন্যানোফ্লেয়ারগুলো সেকেন্ডে কয়েকহাজার বিস্ফোরণ তৈরি করে ধারনা করা হয়।

তবে, বর্তমানে জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির শিন-নোসুকে ইশিয়াওয়ার সৌজন্য আমরা এই ধরনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছি। ২০১৪ সালে প্রেরিত নাসার প্রেরিত FOXI-2 নামের একটি রকেটে ছোট একটি মাত্র জানালা ছিলো সূর্য হতে নির্গত এক্সরে বিকিরণ পরিমাপ করার জন্য। এই বিজ্ঞানী এবং তাঁর সহকর্মীবৃন্দ এই রকেটের সংরক্ষিত এক্সরের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে এই তাপমাত্রার পার্থক্যের রহস্য উদ্ঘাটন করেন।

এই আবিষ্কার নিয়ে ইশিকাওয়া স্পেস.কম কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যাখ্যা করেন, “আমাদের ধারনা সাধারণ সৌর উদ্গীরণের তুলনায় ন্যানোফ্লেয়ার মিলিয়ন হতে বিলিয়ন গুণ পর্যন্ত ছোট হয়ে থাকে। তবে প্রচুর সংখ্যায় উদ্গীরিত হয় বলে এদের শক্তির পরিমান বিপুল হতে পারে।” রকেটের দেওয়া তথ্য হতে সূর্যের একটি সক্রিয় অঞ্চলে দৃষ্টি কেন্দ্রীভুত করা হয়। এই অঞ্চলে দৃশ্যমান তেমন কোনো উদ্গীরন চোখে না পরলেও বিকিরিত এক্সরে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এখানে অত্যন্ত শক্তিশালী প্লাজমার উপস্থিতি রয়েছে যা ১০ মিলিয়ন কেলভিনের বেশী উত্তাপ সৃষ্টি করে।

গবেষকগণ বলছেন এধরনের উচ্চশক্তির প্লাজমা কেবলমাত্র ন্যানোফ্লেয়ারের মাধ্যমেই তৈরি হতে পারে। পরবর্তীতে গবেষকগণ দেখতে চান সূর্যের পৃষ্ঠে কী পরিমান ন্যানোফ্লেয়ারের উদ্গীরণ ঘটছে এবং মোট শক্তির পরিমান কত। এই উদ্দেশ্যে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর প্রস্তুস্তি চলছে যার মাধ্যমে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে ন্যানোফ্লেয়ার সনাক্ত করা হবে। তবে এদিকে তথ্য সংগ্রহের জন্য রকেট পাঠানো বন্ধ হচ্ছে না। FOXSI-2 এর স্থলাভিষিক্ত হতে ২০১৮ সালের অগাষ্টে একটি রকেট উৎক্ষেপনের পরিকল্পনা হয়েছে এবং এর অপেক্ষাকৃত উচ্চ সক্ষমতার সনাক্তকারী যন্ত্রপাতি দিয়ে আগের চেয়ে আরো যথাযথভাবে সূর্যের ন্যানোফ্লেয়ার পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.