ডিমের সাদা অংশ আর মানুষের অশ্রু এদের মধ্যে মিল রয়েছে কী? আয়ারল্যান্ডে সংঘটিত নতুন একটি গবেষণা অনুযায়ী এই দুটিই বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগনো যেতে পারে। এর জন্য কৃতিত্বের দাবীদার এদের মধ্যে বিদ্যমান একটি এনজাইম।
এই এনজাইমটির নাম লাইসোজাইম এবং নতুন এই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী এটি লালা এবং স্তন্যপায়ীর দুধের মধ্যেও থাকে। গবেষণাটি ২ অক্টোবর জার্নাল অব এ্যাপ্লায়েড ফিজিক্সে প্রকাশিত হয়েছে। এই এনজাইমটি ব্যক্টেরিয়ারোধী; এটি ব্যাক্টেরিয়াকে আক্রমন করে এর কোষ প্রাচীর দুর্বল করে দেয়।
যখন লাইসোজাইম স্ফটিকাকারে থাকে তখন এর একটি বৈদ্যুতিক ধর্ম প্রকাশিত হয় যার নাম পিয়েজোইলেক্ট্রিসিটি। অর্থাৎ, এই অবস্থায় এনজাইমটি যান্ত্রিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে পরিণত করতে পারে। এতে চাপ প্রয়োগ করা হলে এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে এই ধর্ম ব্যবহার করে।
যদিও পিয়েজোইলেক্ট্রিসিটি পরিভাষাটি অদ্ভুত শুনতে, কিন্তু আমাদের চারপাশেই এটির বহুল ব্যবহার রয়েছে। যেমন: আমাদের মোবাইল ফোনেই ভাইব্রেশন তৈরির জন্য এই ধরনের বৈশিষ্ট্যযুক্ত পদার্থ ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, হাড়, কাঠ, তন্তু এবং কিছু প্রোটিনের এ ধরনের বৈশিষ্ট্য আছে, তবে সেগুলো লাইসোজাইমের মতো কার্যকরী নয়।
লাইসোজাইমের পিয়েজোইলেক্ট্রিক ধর্ম পরীক্ষা করার জন্য এর স্ফটিক নিয়ে গবেষকগণ পর্দার মধ্যে স্থাপন করেন। তারপর এই পর্দায় চাপ প্রয়োগ করে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমান মেপে দেখা হয়। গবেষকগণ দেখতে পান এই বিদ্যুৎ পিয়েজোইলেক্ট্রিক যন্ত্রে বহুল ব্যবহৃত কোয়ার্টজ স্ফটিকের সমান। তবে লাইসোজাইমের সুবিধা হলো এটি জীবদেহের বস্তু, ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর অপরিসীম প্রয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে।
লাইসোজাইম অবিষাক্ত তাই চিকিৎসার সাথে সম্পর্কিত নানা যন্ত্রপাতি, অঙ্গ প্রতিস্থাপন পর্যবেক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এটিকে ব্যবহার করা সম্ভব। গবেষকগণ আরো আশা করেন ভবিষ্যতে লাইসোজাইমের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে স্থাপিত যন্ত্রপাতিতে নিরবচ্ছিন্ন এবং স্থায়ী বিদ্যুৎ উৎসের যোগান দেওয়া সম্ভব হবে। [Livesciene অবলম্বনে]
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক