প্রথমবারের মতো নিউট্রিনো তারকার সংঘর্ষে উৎপন্ন মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত

0
441

সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো ১৩ কোটি আলোক বর্ষ দূরের দুটি নিউট্রন তারকার সংঘর্ষ চিত্রিত করতে সক্ষম হয়েছেন। এই ঘটনাটির নাম দেওয়া হয়েছে GW170817। এটি এমন একটি ঘটনা যা মহাকর্ষীয় তরঙ্গের উৎস এবং এর দিকটির তথ্য পূর্ব থেকেই গণনা করা গেছে।

এই আবিষ্কারের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্তকরণ জ্যোতির্বিদ্যার যেটি পূর্ব থেকেই এই ঘটনা অনুমান করে প্রস্তুত থাকতে পেরেছে এবং ঠিক কোন দিকে তাকাতে হবে তা পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এটি বিশ্বের প্রথম ঘটনা যেখানে আলোকীয় এবং মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্তকরণের কাজ একই সাথে সংঘটিত হয়েছে।

এই খুবই চমাৎকার একটি বিষয়। ইতিপূর্বে চারটি ঘটনায় মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে যখন প্রথমবারের মতো মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত করা হয়েছিলো তখন তা ছিলো দুটি ব্ল্যাক হোলের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন। সেই ঘটনা সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছিলো এবং এই বছর পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কারও দেওয়া হয়েছে এই আবিষ্কারের কারণে। ব্ল্যাক হোল দৃশ্যমান নয় তাই সংঘর্ষের দিকটি যথাযথভাবে নির্ণয় করা যায় নি।

ইতিপূর্বে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত করার জন্য দুটি ডিটেক্টর ছিলো LIGO নামের। দুটি ডিটেক্টরই হুবহু একই রকম এবং দুটিই একই প্রকল্পের অধীনে কার্যকর আছে। তবে এই বছরের শুরুর দিকে VIRGO নামের তৃতীয় একটি ডিটেক্টরের নির্মানকাজ শেষ হয় কার্যকর হয়ে উঠে যা ইতালিতে স্থাপন করা হয়। এই তৃতীয় ডিটেক্টরটি সংঘর্ষ ঘটার স্থানটি নির্ণয়ের যথার্থতা দশগুণ বাড়িয়ে দেয়। প্রথম দুটি সংঘর্ষ LIGO’র ডিটেক্টর দুটি একা সনাক্ত করলেও তৃতীয় সংঘর্ষ হতে VIRGO’র সহায়তা পাওয়া গেছে।

এতদ স্বত্বেও ব্ল্যাক হোল থেকে আলো নিগর্ত না হওয়ায় এদের যথাযথ অবস্থান নির্ণয় করা দুঃসাধ্য, বড়জোর এদের দিকটি নির্ণয় করা যেতে পারে। কিন্তু দুটি নিউট্রন তারকার সংঘর্ষের ক্ষেত্রে এই ঝামেলা নেই। এগুলো খুবই দৃশ্যমান তাই আগে থেকেই একটি সম্ভাব্য সংঘর্ষ গণনা করে ফেলা যায়। নিউট্রন তারকা দুটির এই সংঘর্ষ আলোক টেলিস্কোপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের জন্য সারা বিশ্বের ৭০ টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সক্রিয় ছিলো। এই পর্যবেক্ষক যন্ত্রগুলো আকাশের হাইড্রা নক্ষত্রপুঞ্জের একটি ছোট অংশের দিকে তাকিয়ে ছিলো যেটি NGC4993 নামক গ্যালাক্সির খুব কাছে।

গত ১৭ আগষ্ট সনাক্তকারী যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে সংঘর্ষোন্মুখ তারকাগুলো হতে উৎপন্ন গামা রে বিস্ফোরণ সনাক্ত করা হয় প্রায় ১০০ সেকেন্ড ধরে। অন্যদিকে ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষের ক্ষেত্রে এই বিস্ফোরণ সনাক্ত করা যায় কেবল এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ পরিমাণ। তখন থেকেই অনুমান করে নেওয়া হয় দুটি নিউট্রন তারকার মধ্যে একটি সংঘর্ষ ঘটতে যাচ্ছে। তার পর গত দুই মাস ধরে বিজ্ঞানীরা অপেক্ষা করছিলেন এই সংঘর্ষের উৎপন্ন মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ধরার। অবশেষে যথাযথ সময়ে গতকাল এই সংঘর্ষে উৎপন্ন মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত হয়।

যদিও ১৩ কোটি আলোকবর্ষ দূরে সংঘর্ষটি ঘটেছে তবুও এটি এতোই উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছে যে সৌখিন জ্যোতির্বিদদের মাঝারি মানের টেলিস্কোপের মাধ্যমেই এই বিষ্ফোরণ দেখা গেছে! আপনারা নিচের ভিডিওটি দেখুন। একেবারে কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে NGC4993 গ্যালাক্সিটি। আর তার ঠিক উপরেই বিষ্ফোরনে সৃষ্টি হয়েছে রক্তিম আভা।

জ্যোতির্বিদগণ দীর্ঘদিন ধরে অনুমান করে আসছেন নিউট্রন তারকার সংঘর্ষে গামা বিস্ফোরণ নির্গত হয়। তবে এই প্রথম LIGO আর VIRGO ডিটেক্টরের মাধ্যমে তাঁরা বিষয়টি নিশ্চিত হলেন।

-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.