[বইটির সূচীপত্র এবং সবগুলো খন্ডের লিংক একত্রে দেখুন এখানে]
বোর যেটা করলেন সেটা অবিশ্বাস্য। আমরা শার্লক হোমস আর ব্যোমকেশ বক্সীর গল্পে বুঁদ হয়ে যাই। ক্ষুরধার মস্তিষ্ক ব্যবহার করে গোয়েন্দারা একটা ঘটনার সাথে আরেকটা ঘটনার যোগসূত্র খূঁজে খুঁজে কীভাবে মূল ঘটনার হোতাকে পাকড়াও করেন, সেই বিষয়গুলো আমাদের চমকিত করে। কিন্তু সেসব তো কল্পকাহিনী। বৈজ্ঞানিকরা যেটা করেন সেটা বাস্তব। এবং আরো কঠিন। রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সংশোধন আনতে গিয়ে কী নিপুন দক্ষতায় বোর বিভিন্ন ঘটনা থেকে পাওয়া ক্লু কাজে লাগালেন। তারপর দক্ষ শিল্পীর মতো একটা ঘটনার সাথে আরেকটা ঘটনা জুড়ে দিয়ে তৈরি করলেন একটা পরিপূর্ণ পরমাণু মডেল।
ভাবুন, কে ভেবেছিল, পরমাণুর ভেতরে যে ইলেকট্রন ঘুরছে তার সাথে যোগ আছে প্ল্যাঙ্ক-আইনস্টাইনের কোয়ান্টাম তত্ত্বের? কে ভেবেছিল সূর্যের আলোর যে বর্ণালী নিউটন দেখেছিলেন, সেই বর্ণালীই হদিস দেবে পরমাণুর হাঁড়ির খবর? কে ভেবেছিল রেখা বর্ণালী রেখাগুলো আসালে পরমাণুতে ইলেকট্রনের শক্তিস্তরের শক্তির হদিস দেবে? এত এত ঘটনা জোড়া দিয়ে বোর পরমাণুর ভেতরের জগতের একটা পরিপূর্ণ ছবি তুলে ধরলেন। সেই ছবিই বিজ্ঞানের নতুন দুয়ার খুলে দিল। তরুণ বিজ্ঞানীর সব ঝাঁপিয়ে পড়লেন কোয়ান্টামের মায়াবী জগতে। পরমাণু মডেলের এই সাফল্যের স্বীকৃতিও পেলেন নীলস বোর। ১৯২২ সালে পেলেন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার।
এত কিছুর পরও ত্রুটি ছিল বোর মডেলে। আসলে বিজ্ঞানের জগৎটাই এমন। একটা সমস্যার সমাধান আরেকটা নতুন সমস্যার ডালি মেলে ধরে। তখন আরেকজন এসে সমাধানের চেষ্টা করেন নতুন এই সমস্যার। বোর মডেলেও সেটা হয়েছিল।
বোরের মডেলের বড় দুর্বলতা, এটা দিয়ে হাইড্রোজেন পরমাণুর ভেতরকার খবর যতটা ভালোভাবে জানা যায়, ততটাই দুর্বল সে বড় পরমাণুদের ক্ষেত্রে। সেসব পরমাণুতে অনেকগুলো ইলেকট্রন থাকে। সেসব ইলেকট্রন পরমাণুর ভেতরে কীভাবে থাকে, কীভাবে ঘোরে; সেসব ব্যাখ্যা করতে পারে না বোর মডেল। কেন বড় পরমাণুদের ব্যাখ্যা বোর মডেল দিতে পারে না? কারণ বড় পরমাণুতে একাধিক ইলেকট্রন থাকে। সেসব ইলেকট্রনের মধ্যে পারস্পারিক বিকর্ষণ বল কাজ করে। ইলেকট্রনের নিজেদের ভেতর কাজ করা বিভিন্ন বলের ব্যাখ্যা বোর মডেলে অনুপস্থিত।
বোর মডেলে বলা হয়েছে পরমাণু যখন একটা স্থায়ী শক্তিস্তরে ঘোরে তখন সে কোনো শক্তি বিকিরণ বা শোষণ করে না। শোষণ করা বিষয়টা ব্যাখ্যা না করলেও চলে। কিন্তু চার্জিত কণা বৃত্তাপথে ঘুরতে থাকলে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ বিকিরণ করবে, এটা ম্যাক্সওয়েলের সমকীরণের নীতি। ম্যাক্সওয়েলের নীতি পরমাণুর অভ্যান্তরে খাটে না, সেটা বলেছেন বোর। কিন্তু কেন ঘূর্ণনশীল ইলেকট্রন তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ বিকিরণ করবে না, তার ব্যাখ্যা বোর দিতে পারেননি। তাই ইলেকট্রন কেন সর্পিল পথে গিয়ে নিউক্লিয়াসে গিয়ে পড়বে না, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
ত্রুটি ছিল হাইড্রোজেন পরমাণুর বর্ণালীর জন্য বোরের দেওয়া ব্যাখ্যাতে। বোর পরমাণু মডেলের বহু আগেই হাইড্রোজেন পরমাণুর বর্ণালী নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিলেন বিজ্ঞানীরা। ঊনবিংশ শতাব্দীর ৮০’র দশকেই বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন হাইড্রোজেন বর্ণালীর চারটি রেখার কোনোটিই একক রেখা নয়। প্রতিটা রেখা কয়েকটি সূক্ষ্ম রেখা দিয়ে তৈরি। তবে অনেক বিজ্ঞানী এটাকে মানতে চাননি। তাঁরা মনে করতেন বর্ণালী রেখাগুলো একক রেখা, এদের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। বোরও ছিলেন সেই দলে। বর্ণালী রেখাগুলোকে একক রেখা ধরে নিয়েই তিনি পরমাণু মডেল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কিন্তু বোরের মডেল প্রতিষ্ঠিত হবার পরপরই নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হলো, বর্ণালীরেখার কোনেটিই একক রেখা নয়। বরং অতি সূক্ষ্ম বহু বর্ণালীরেখার সমন্বয়ে তৈরি একেকটি রেখা। এইসব সূক্ষ্ম বর্ণালীরেখাগুলোকে নাম দেওয়া হলো মিহিগড়ন । মিহি বর্ণালীরেখার উৎসই বা কী, কী এদের ব্যাখ্যা বোর মডেল সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি।
এর পরই বোরের কাছে একটা চিঠি আসে। জার্মানি থেকে। বোর তখন সদ্য কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে যোগ দিয়েছেন। চিঠির প্রেরক আর্নল্ড সোমারফেল্ড। সেই চিঠিই পরমাণুর গঠন সম্পর্কে নতুন করে ভাবায় বোরকে।
বোরের মডেলে পরমাণুর শক্তিস্তরগুলোকে কতগুলোকে নম্বর দেওয়া হয়েছিল। এই নম্বর প্রকাশ করা হয় n দিয়ে। n-এর নামকরণ করা হলো কোয়ান্টাম সংখ্যা হিসেবে। এই সংখ্যা পরমাণুর ভেতরে অনুমোদিত শক্তিস্তর নির্দেশ করে। প্রত্যেকটি শক্তিস্তরেই বৃত্তাকার। n-এর যদি ৪ হয় তাহলে পরমাণুতে শক্তিস্তর থাকবে চারটি। সামারফেল্ড সেই কক্ষপথের আকারে পরিমার্জনের কথা বললেন। বললেন ইলেকট্রনের কক্ষপথ আসলে শুধই বৃত্তাকার নয়। বৃত্তাকার কক্ষপথের সাথে কতগুলো উপবৃত্তাকার কক্ষপথেও ঘোরে ইলেকট্রন। একটা বৃত্তাকার কক্ষপথের জন্য অনেকগুলো উপবৃত্তাকার কক্ষপথ থাকে। সোমারফেল্ড সেই উপবৃত্তার কক্ষপথের নাম দিলেন উপস্তর।
n-এর মানের জন্য থাকবে একাধিক উপস্তর। সেই উপস্তরের সংখ্যাকে সোমারফেল্ড l দিয়ে চিহ্নিত করলেন। একটা প্রধান শক্তিস্তরের জন্য উপস্তর সংখ্যা l=০,১,২…হ-১টি। ধরা যাক, একটা পরমাণুতে ৪ শক্তিস্তর আছে। প্রতিটি শক্তিস্তরের জন্য একটি করে প্রধান কেয়ায়ন্টাম সংখ্যা থাকবে সেই পরমাণুটির। যেমন প্রথম শক্তিস্তরের জন্য প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা n = ১, দ্বিতীয় শক্তিস্তরের জন্য কোয়ান্টাম সংখ্যা n = ২, তৃতীয় শক্তিস্তরের জন্য প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা n = ৩, চতুর্থ শক্তিস্তরের জন্য প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা n = ৪। যে শক্তিস্তর নিউক্লিয়াস থেকে যত দূরে তার প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যার মান সবচেয়ে বেশি। যেমন n = ১ যে শক্তিস্তরের সেটি নিউক্লিয়াসের সবচেয়ে কাছের শক্তিস্তর। তারপরেই যে শক্তিস্তটা তার কোয়ান্টাম সংখ্যা n = ২। এভাবে তৃতীয় ও চতুর্থ ইত্যাদি শক্তিস্তরের কোয়ান্টাম সংখ্যা যথাক্রমে n = ৩ ও n = ৪ ।
n = ৪ দিয়ে একটি মাত্র শক্তিস্তর বোঝাবে। সেটা ওই পরমাণুর চার নম্বর শক্তিস্তর। কিন্তু এর জন্য চারটি আলাদা উপস্তর থাকবে। হিসাবটা দেখে নেওয়া যাক। আগেই দেখেছি l=০,১,২…n-১। সুতরাং n = ৪ হলে l=০,১,২,৪-১। অর্থাৎ l=০,১,২, ৩।
l এর চারটে ভিন্ন্ ভিন্ন মান পেলাম। ৩ হলো l-এর সর্বোচ্চ মান। এর জন্য যে উপস্তর পাবে সেটা উপবৃত্তাকার হলেও কিছুটা বৃত্তের মতো। l=৩ এর জন্য গোলগাল একটা উপস্তর পাব। l-এর মান যত কমতে থাকবে উপস্তর তত উপবৃত্তাকার হবে। তিনটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথ l=১, l=২ ও l=০। l-এর মান শূন্য বলে কিন্তু তার জন্য উপস্তর ভ্যানিশ হবে না। বরং সবচেয়ে উপবৃত্তাকার কক্ষপথটি আমরা পাবো l=০ হলে। নিচের ছবির দিকে লক্ষ করলেই ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন আশা করি। পরমাণুর তৃতীয় শক্তিস্তরের জন্য স = ৩, সুতরাং তৃতীয় শক্তিস্তরে সব মিলিয়ে মোট কক্ষপথ তিনটি। সুতারং l=০,১,২। এখানেও l=২ হলো এই কোয়ান্টাম সংখ্যার সবচেয়ে বড় মান। তাই তৃতীয় শক্তিস্তরের সবচেয়ে গোলগাল উপস্তরটি পাব l=২ হলে। l=১ ও l=২ এর জন্য পাব আরও দুটি উপস্তর। l=০ যে উপস্তরের সেই উপস্তরটি সবচেয়ে বেশি উপবৃত্তাকার।
পরমাণুর দ্বিতীয় শক্তিস্তরের জন্য n = ২, সুতরাং তৃতীয় শক্তিস্তরে সব মিলিয়ে মোট কক্ষপথ তিনটি। সুতারং l=০,১। এখানেও l=১ হলো এই কোয়ান্টাম সংখ্যার সবচেয়ে বড় মান। তাই তৃতীয় শক্তিস্তরের সবচেয়ে গোলগাল উপস্তরটি পাব l=১ হলে । l=০ জন্য পাব আরও একটি উপস্তর। সেটিই সবচেয়ে উপবৃত্তাকার।
পরমাণুর প্রথম শক্তিস্তরের জন্য n =১। একটাই মাত্র কক্ষপথ। সুতরাং n=০।
তাহলে হিসাবটা দাঁড়ায়, যেসব পরমাণুর প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা ৪। অর্থাৎ বোরো হিসেবে বৃত্তাকার শক্তিস্তর (কক্ষপথ) অর্থাৎ বৃত্তাকার কক্ষপথ চারটি, সোমারফেল্ডের হিসাব বলছে সেই পরমাণু চতুর্থ স্তরে ৪টি, তৃতীয় স্তরে মোট ৩টি, দ্বিতীয় স্তরে ২টি এবং প্রথম স্তরে ১টি উপবৃত্তাকার কক্ষপথ থাকবে। তাহলে সেই পরমাণুতে মোট উপবৃত্তাকার কক্ষপথ (অরবিটাল) ১০টি।
এবার আসা যাক বর্ণালীর সমস্যায়। আমরা দেখেছিলাম, হাইড্রোজেন পরমাণুর বর্ণালীরেখাগুলো অনেকগুলো মিহি রেখার সমন্বয়ে তৈরি। এসব মিহিরেখার ব্যাখ্যা দেয় উপবৃত্তাকার উপস্তরগুলো।
উচ্চশক্তিস্তর থেকে নিম্মশক্তিস্তরে নামার সময় ইলেকট্রন বর্ণালী বিকিরণ করে। আবার উপস্তরগুলো থেকে নিচের শক্তিস্তর বা উপস্তরে এলেও বর্ণালী বিকিরণ করে ইলেকট্রন। প্রধান শক্তিস্তর আর উপস্তর মিলিয়ে যে যে বর্ণালীগুলো তৈরি হয়, সেগুলো মিলে একটা বর্ণালীরেখা তৈরি করে। এমনিতে এদের আলাদা করে বোঝা যায় না। তবে খুব সূক্ষভাবে সূক্ষ্ম যন্ত্রের সাহায্যে দেখলে এদেরকে আলাদাভাবে বোঝা যায়।
বর্ণালীর মিহিরেখাগুলোর সমাধান এভাবেই করলেন বোর আর সোমারফেল্ড দুজন মিলে। সেই সাথে নতুন একটা কোয়ন্টাম সংখ্যার আবির্ভাব হলো। এটাকে l চিহ্নিত করা হয়েছে, সেটা আমরা আগেই দেখেছি। সোমারফেল্ড এই কোয়ন্টাম সংখ্যার নামকরণ করলেন অরবিটাল কোয়ান্টাম সংখ্যা।
সমস্যার শেষ এখানেই হলো না। নতুন করে আরেকটা সমস্যা দেখা দিল বোর-সোমারফেল্ড পরমাণু মডেলে। আসলে বিজ্ঞানের জগৎটাই এমন, একটা সমস্যার সমাধান করতে না করতেই আরেকটা সমস্যা দেখা দেয়। তার মানে এই নয়, নতুন সমস্যাটা আগে ছিল না। ওটাও ছিল, পুরনো সমস্যার আড়ালে ঘাপটি মেরে তাই একে দেখা যায়নি। নতুন এই সমস্যার কথা বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই জানতেন। কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান হয়নি বলে এই সমস্যা নিয়ে মাথায় ঘামননি কেউ আগে।
১৮৯৭ সাল। ডাচ বিজ্ঞানী পিটার জিম্যান লক্ষ করেন এক অদ্ভুত ঘটনা। পরমাণুর বর্ণালী রেখাগুলো চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে স্থাপন করলে সেগুলো আর একক রেখা থাকে। কয়েকটি রেখায় ভাগ হয়ে যায়। এ সমস্যাটা কিন্তু মিহিগড়নের সমস্যা নয়। এটা তৈরি হচ্ছে চৌম্বকক্ষেত্রের কারণে। নিচের ছবিটা দেখলে অনুমান করা যায় কিছুটা। শুধু চৌম্বকক্ষেত্রেই নয়, বিদ্যুৎ আর চুম্বক আলাদা নয়, তাই এ ঘটনা তড়িৎক্ষেত্রেও ঘটা উচিৎ। ১৯১৩ সালে জার্মান বিজ্ঞানী জোহান স্টার্ক দেখলেন, তড়িৎক্ষেত্রের ভেতরেও বর্ণালীরেখাগুলো ভাগ হয়ে যায়।
এভাবে চৌম্বকক্ষেত্রে বর্ণালীরেখার ভাগ হয়ে যাওয়ার মানে কী? নিশ্চয়ই বর্ণালীরেখার সাথে চৌম্বকক্ষেত্রের সম্পর্ক আছে। আর বর্ণালীরেখার সাথে পরমাণু গঠনের সম্পর্ক আছে, তাতো আমরা দেখলামই। তাহলে চৌম্বক্ষেত্রের ভেতর বর্ণালী রেখার এই ভেঙে যাওয়ার বিষয়টা নিশ্চয়ই পরমাণু ভেতররে গঠনগত কোনো বৈশিষ্ট্যের কারণে হয়। সেটা কীভাবে?
সোমারফেল্ড হাত দিলেন নতুন সমস্যা সমাধানের কাজেও। তিনি কোনো কাজ একা করছেন না কিন্তু। যেটাই করছেন বোরের সাথে চিঠিতে যোগাযোগ করেই করছেন। সোমারফেল্ড একটু অন্যভাবে ভাবতে শুরু করলেন।
পরমাণুর সাথে সৌরজগতের অনেকটা মিল আছে। সৌরজগতের কেন্দ্রের থাকে সূর্য। এর চারপাশে ঘুরছে গ্রহগুলো। এর কারণ সূর্য মহাকর্ষ বলের সাহায্যে তাঁর গ্রহগুলোকে টানছে নিজের দিকে। অন্যদিকে গ্রহগুলোও পরস্পরকে নিজেদের মহাকর্ষ বল দিয়ে টানছে। তাই আন্তঃগ্রহীয় একটা আকর্ষণ বল সেখানে কাজ করে। তাই সূর্যসহ সৌরজগতের সবগুলোগ্রহ প্রায় একই সমতলে থাকে।
এখন কথা হচ্ছে বহু ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণুগুলো কি একই সমতলে থাকতে পারে? সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে মহকর্ষীয় টান রয়েছে। কিন্তু পরমাণুর ভেতরের ইলেকট্রনগুলোর মধ্যে মহাকর্ষীয় বল কাজ করার সুযোগ নেই। পরমাণুর ভেতরের জগতে নিউটনীয় বলবিদ্যা কাজ করে না, সেটা আগেই বলেছি। তবে সমধর্মী চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে, বিপরীতধর্মী চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। তাই ইলেকট্রনগুলোর ভেতর পারস্পারিক বিকর্ষণ বল কাজ করা উচিৎ। তাই যদি হয়, তাহলে কি ইলেকট্রনের সবগুলো কক্ষপথ কি একই সমতলে থাকতে পারবে?
পারার কথা নয়। সূতরাং চৌম্বকত্বের প্রভাব থাকা উচিৎ। সোমারফেল্ড বললেন, সেটাই হচ্ছে পরমাণুর ভেতরের জগতে। আসলে পরমাণুর ভেতরে ইলেকট্রনের কক্ষপথগুলি বৃত্তাকার আর উপবৃত্তাকারই নয়। এদের আরেকটি ধরন আছে। সেটা হলো চুম্বকীয় শক্তিস্তর। সুতরাং তাদের জন্য যোগ করতে হবে আরেক ধরনের কোয়ান্টাম সংখ্যা। তৃতীয় সেই কোয়ান্টাম সংখ্যার নাম হলো ম্যাগনেটিক কোয়ন্টাম নাম্বার বা চৌম্বক কোয়ান্টাম সংখ্যা। এই সংখ্যাটিকে m দিয়ে চিহ্নিত করা হলো।
একটা নির্দিষ্ট প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা n-এর জন্য চৌম্বক কোয়ান্টাম সংখ্যার মান হবে m = +/-n। n = ৩ এর জন্য চৌম্বক কোয়ান্টাম সংখ্যা হবে তাহলে, m = +/- ৩টি। অর্থাৎ মোট চৌম্বক শক্তিস্তর থাকবে -৩, -২, -১, ০ +১, +২, +৩। মোট সাতটি। বর্ণালী রেখাগুলো চৌম্বকক্ষেত্রের ভেতর কেন ভাগ হয়ে যায়, তাঁর চমৎকার ব্যাখ্যা পাওয়া চৌম্বক কোয়ান্টাম সংখ্যা দিয়ে। সূতরাং আরো একটা সমস্যার সমাধান করলেন সোমারফেল্ড। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, বোরের পারমাণমিক মডেল আরো একটা সমস্যাই পতিত হলো। সেই সমস্যার সমাধানটা বেরুল এক তরুণ বিজ্ঞানীর হাত ধরে। তবে সেটার গল্প আগামী অধ্যায়ে।
[বইটির সূচীপত্র এবং সবগুলো খন্ডের লিংক একত্রে দেখুন এখানে]
বিজ্ঞান পত্রিকায় সম্পূর্ণ বইটি পড়া যাবে। তবে কেউ সংগ্রহে রাখতে চাইলে অনলাইনে কেনা যাবে ০১৫৫ ৭৭৭ ৯৩২৩ নম্বরে ফোন করে।
-আব্দুল গাফফার রনি
বিজ্ঞান লেখক
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]
Protiti shokti sthore electron nucleus ke kendro kro ghure,kintu electrongulo ekhne jhetu shomo dhormi charge e ase ta hole to onumodito shokti sthore ei electron gulu thakte parbena,kenona shomo dhormi charge porosh porke bikorshon Kore.tahole ei electron gulu ak shokti sthore ek shathe nucleus ke ghure kibhabe