দক্ষিণ পেরুর শুষ্ক উপত্যকা জুড়ে অদ্ভুত কিছু সর্পিল আকৃতির পাথরের গর্ত প্রত্নতাত্ত্বিকদের কয়েক প্রজন্ম ধরে বিভ্রান্ত করে রেখেছে। কিন্তু গবেষকদের বিশ্বাস তাঁরা সম্ভবত স্যাটালাইটের ছবি এবং উপাত্ত্ব ব্যবহার করে পুকুইয়ো নামক নাজকা গর্তের রহস্য সমাধান করতে পেরেছেন।
গবেষকদের দাবি গর্তগুলো একটি ‘অত্যাধুনিক’ জলবাহী পদ্ধতি যা প্রাচীন নাজকা সভ্যতা ভূগর্ভস্থ জলস্তর থেকে পানি উত্তোলনের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
নাজকা সভ্যতা খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ সালে আবির্ভূত হয়ে ৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিলো। আর এই অঞ্চলের অধিবাসীরাই নাজকা লাইন নামে পরিচিত এক সুবিশাল বৈশিষ্ট্যহীন ভূদৃশ্য নির্মান করেছিলো।
ইতালির ইনস্টিটিউট অফ মেথোডোলজি থেকে রোজা ল্যাসাপোনারা বলেন, এই গর্তগুলিই নাজকা অধিবাসীদের ভয়াবহ খরার আঘাত থেকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করেছে। গর্তের জমাকৃত পানি ফানেল বা চুঙ্গী আকৃতির গর্ত দিয়ে জমিতে পরিবহন করা হতো যা কৃষিকাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। আজকের এই দৃশ্যমান অবস্থা দেখে এটা প্রমাণিত হয় যে, পুকুইয়ো পদ্ধতিটি অবশ্যই এখনকার দৃশ্যমাণ অবস্থার তুলনায় আরও উন্নত ছিলো।
পুকুইয়ো পদ্ধতিটি নাজকার একটি শহরের কাছে পাওয়া যায় এবং এটা ধারণা করা হচ্ছে, এই অঞ্চলে বসবাসরত প্রাচীন নাজকা সভ্যতাই এটি তৈরী করেছিলো।
গর্তগুলো এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে যাতে ঘূর্ণিগুলো ধীরে ধীরে চুঙ্গীর ভেতরে প্রবেশ করে। তবে এগুলোর মাঝে অনেকগুলো গর্ত অদৃশ্য হয়ে গেলেও কিছু কিছু গর্ত অক্ষত অবস্থায় কার্যকর থাকতে দেখা গেছে। এর মানে এসব এলাকার কিছু কিছু অঞ্চল এখনও পানি পেয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্কতম স্থানের একটি এই উপত্যকার কৃষি কাজে সারা বছর নিয়মিতভাবে পানির ব্যবহার করতে পারায় পুকুইয়ো পদ্ধতি যথেষ্ট অবদান রেখেছে। প্রত্নতত্ত্ববিদ্গণ দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এটা ধারণা করছেন, পুকুইয়ো পদ্ধতি একটি নালা পদ্ধতির অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হতো কিন্তু তা কিভাবে কাজ করতো সে সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নিতে পারেনি। তবে এই গর্তগুলি নিকটবর্তী পিকু উপত্যকায় দেখতে পাওয়া অসংখ্য গর্ত থেকে সতন্ত্র ছিলো, যা সম্ভবত নাসকা সম্প্রদায় ব্যবহার করেতো।
ডক্টর ল্যাসাপোনারা এবং তাঁর দল স্যাটালাইটের ছবি পরীক্ষা করে দেখেন কিভাবে পুকুইয়ো পদ্ধতি সমগ্র নাজকা অঞ্চল জুড়ে প্রাচীন পরীখার যোগাযোগের অংশ হিসেবে ব্যবহার করেছে। তারা ঐ অঞ্চলের মাটির বর্তমান আর্দ্রতা ও গাছপালার পরিবর্তনও পরীক্ষা করে দেখেছেন।
ল্যাসাপোনারা এবং নিকোলো মাসিনি বলেন, প্রকৌশলীর দিক থেকে এর অনেক কৃতিত্ব থাকা সত্বেও নাজকা তখনও প্রকৃতির খেয়ালের উপর নির্ভশীল ছিলো। এই পরিবেশ চরম প্রকৃতির এবং শুষ্ক থাকা সত্বেও এই অঞ্চলটি নাজকা, প্যারাকাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতার বসবাস ছিলো যা প্রারম্ভিক অন্তর্বর্তী যুগকে (200 BCE-500 AD) জনবহুল করে তুলেছিলো।
তবে নাজকা সম্ভবত পেরুর মরুভূমিতে বিশাল বিশাল ভূদৃশ্য এবং উপমার জন্য বিখ্যাত। একারণে এই সভ্যতার লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান ছিলো বলেও ধারণা করা হয়। কিন্তু ল্যাসাপোনারার দাবি পুকুইয়োর নির্মাণ কৌশল প্রমাণ করে তারা কতো অত্যাধুনিক ছিলো। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তাদের প্রচেষ্টা, নির্মাণ ও নির্মিত স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়া। [ডেইলী মেইল- অবলম্বনে]
-শফিকুল ইসলাম
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া