সহজ একটি চিন্তন পরীক্ষা বা Thought Experiment এর মাধ্যমে মানবজাতির অস্তিত্বের শেকড়ে প্রবেশ করতে পারবো। নানাভাবেই সেটা করা যায়। তবে এখানে আমরা সময়কে অবলম্বন হিসেবে ধরে নেব।
চিন্তন পরীক্ষা হচ্ছে সে সমস্ত পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ যেখানে সবকিছুই করা হয় মনে মনে বা কল্পনায়। এই চিন্তন পরীক্ষার সুবিধা হচ্ছে যে জিনিস বাস্তবে পাওয়া সম্ভব নয় তা নিয়েও ভাবনা-চিন্তা করা যায়। যেমন হঠাৎ করে সূর্য গায়েব হয়ে গেলে পৃথিবীর কী হবে? কিংবা হঠাৎ করে পৃথিবী অদৃশ্য হয়ে গেলে চাঁদের কী হবে? চাঁদ কি নতুন কক্ষপথ তৈরি করে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরবে নাকি অন্য কোনো গ্রহের উপগ্রহ হিসেবে ঘুরবে, এমনসব মজার মজার জিনিস যা বাস্তবে কখনোই হবার নয়। বাস্তবে যদিও এমন কিছু হয় না, কিন্তু এই চিন্তন পরীক্ষা থেকেই জন্ম নিয়েছে অনেক বড় বড় কালজয়ী আবিষ্কার।
আমরা এখন যে ব্যাপারটাকে কল্পনায় পরীক্ষা করতে যাবো আসলে সেটাও বাস্তবে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। তবে সম্ভব বা অসম্ভব এখানের আলোচ্য বিষয় নয়। এখানের জন্য তা খুব দরকারিও নয়। চিন্তার মাধ্যমে পরীক্ষাটা করে গেলে ব্যাপারটা অনুধাবন করতে সহজ হবে এই যা।
কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব জোগাড় করে সবাই মিলে একটি টাইম মেশিনে চড়ে বসি। মারা হলো ইঞ্জিনে স্টার্ট। চলে যাওয়া হলো ইতিহাসে, দশ হাজার বছর আগের সময়ে। এবার দরজা খোলা হলো। দরজা পেরিয়ে কাদেরকে দেখা যাচ্ছে?
আজকের দিনে যে স্থানটি ইরাক দেশ, টাইম মেশিনে দশ হাজার বছর আগে গিয়ে যদি সে স্থানে থামা হয় তাহলে দেখা যাবে সেখানকার মানুষেরা মাত্র কৃষি আবিষ্কার করছে। আজকের দিনে আমরা যত সহজে খাবার খাই, বাজার থেকে চাল, ডাল, তেল, নুন, আটা, ময়দা, শাঁক-সবজি যত সহজে কিনে আনতে পারি, একটা সময় এসবের কিছুই ছিল না। কৃষি আবিষ্কারের আগে মানুষেরা যাযাবরের মতো চলতো ফিরতো, সামনে যা পেতো তাই খেতো। কিছু না পেলে না খেয়ে থাকতো।
ঐ সময়ে ইরাকে অল্প স্বল্প কৃষির বিকাশ হচ্ছিল আর বাকি পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষেরাই ছিল শিকারি-সংগ্রাহক। তারা বন্য প্রাণী শিকার করতো এবং ফলমূল সংগ্রহ করতো। শিকার ও সংগ্রহ করতো বলে তাদের বলা হয় ‘শিকারি-সংগ্রাহক’। তাদের ভাষা শুনতে চেষ্টা করলে কিছুই বোঝা যাবে না। তারা যে পোশাক পড়ে থাকবে তা দেখলে একদমই উদ্ভট মনে হবে। তবে তাদেরকে যদি সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে আজকালকার যুগের পরিষ্কার কাপড়-চোপড় পড়িয়ে দেয়া হয় এবং পাশাপাশি চুলের মাঝে আধুনিক কাটিং লাগিয়ে দেয়া হয় তাহলে সত্যিকার আধুনিক মানুষ আর তাদের মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেখলে বোঝাই যাবে না যে তারা দশ হাজার বছর আগেকার মানুষ। এই মানুষগুলোকে আধুনিক মানুষের সাথে বিয়ে (ক্রস) করিয়ে দিলে দিব্যি সন্তান-সন্ততি উৎপাদন করতে পারবে।
এবার ঐ দশ হাজার বছর আগেকার মানুষ থেকে কোনো একজনকে নিজের সঙ্গী করে নেয়া হলো। হতে পারে সে আমাদের প্রায় ৪০০ তম দাদুভাই। তাকে নিয়ে আবারো টাইম মেশিনে চেপে বসলাম। আরো দশ হাজার আগেকার সময়ে চলে যাওয়া হলো, সেখানে হয়তো ৮০০ তম দাদুভাইয়ের দেখা পাওয়া যেতে পারে। এই সময়ের মানুষেরা সবাই ছিল শিকারি-সংগ্রাহক, তখনো কৃষির বিকাশ হয়নি। কিন্তু, আবারো উল্লেখ করছি, তারা দেখতে বেশি উদ্ভট হলেও তাদের দেহ আজকের আধুনিক যুগের মানুষের মতোই ছিল আর তারাও আধুনিক মানুষের সাথে মিলে সন্তান উৎপাদন করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। তাদের মাঝে থেকেও একজনকে সাথে করে টাইম মেশিনে নিয়ে, আরো দশ হাজার বছর আগে চলে যাওয়া হলো। এখান থেকেও একজনকে নেয়া হলো এবং আরো দশ হাজার বছর আগে চলে যাওয়া হলো। এভাবে এই প্রক্রিয়া বারবার চালিয়ে যাওয়া হলো।
দশ হাজার বছর করে লাফ দিতে দিতে একসময় কয়েক মিলিয়ন বছর আগেকার সময়ে উপস্থিত হয়ে গেলাম। ঐ সময়ে গিয়ে টাইম মেশিন থেকে নামলে, নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এমনসব মানুষের দেখা পাওয়া যাবে যারা জাতিতে মানুষ হলেও আমাদের থেকে একদমই আলাদা। আধুনিক মানুষ আর তাদের মাঝে অনেক অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। ভ্রমণের প্রথম দিকে যাদের টাইম মেশিনে নেয়া হয়েছে তাদের সাথে মিলে সন্তান-সন্ততির জন্ম দিতে পারবে না এই সময়ের মানুষেরা। কিন্তু তারা প্রথম দিকের মানুষদের সাথে মিলে সন্তানের জন্ম দিতে না পারলেও ঐ শেষ দিকে যাদেরকে টাইম মেশিনে নেয়া হয়েছিলে তাদের সাথে মিলে সন্তানের জন্ম দিতে পারবে। মানে ঐ সময়ে ‘লেটেস্ট’ যাদেরকে দলে নেয়া হয়েছিলে তাদের সাথে মিলে সন্তান উৎপাদন করতে পারবে।
অনেকেই হয়তো ব্যাপারটা আচ করে ফেলেছে। ক্রমে ক্রমে ঘটে যাওয়া সূক্ষ্ম কিছু পরিবর্তন একসময় বড় ধরনের পার্থক্যের সৃষ্টি করে। ঘরের দেয়ালের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখি, সেকেন্ড মিনিট ও ঘণ্টার কাটা আছে অটাতে। ঘণ্টার কাটার দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে এটা নড়ছে না বললেই চলে। কিন্তু ৬০ মিনিট শেষে দেখা যাবে একটু একটু করে এটি ঠিকই এক ঘর পরিমাণ দূরত্ব পার করে ফেলেছে। ধীর প্রক্রিয়ায় অনেক কিছু হয়ে যাচ্ছে, এই ব্যাপারটা জীববিজ্ঞানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিবর্তন নিয়ে আলোচনার সময় অনেকেই এই ব্যাপারটি অনুধাবন করতে পারে না। এটি না বোঝার ফলে অনেক অপ্রয়োজনীয় তর্ক ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
এখন আপাতত আমাদের অতীতে ভ্রমণে করার মাঝে বিরতি দেই। কোনো একটা স্টেশনে গিয়ে নামি। ধরি যে স্টেশনে নামলাম তার নাম ‘ছয় মিলিয়ন বছর অতীত’। মানে এখন থেকে ছয় মিলিয়ন বছর আগেকার সময়ে গিয়ে বিরতি দিলাম। ঐ সময়ে টাইম মেশিন থেকে নেমে কী দেখতে পাবো?
যদি আমরা ঐ সময়টায় আফ্রিকা গিয়ে নামি তাহলে আমাদের ২ লক্ষ ৫০ হাজার তম পূর্বপুরুষকে দেখাতে পাবো। সংখ্যাটা ঠিক ঠিক ২ লক্ষ ৫০ হাজার হবে তা না। কিছু বেশিও হতে পারে আবার কিছু কমও হয়ে পারে। আমাদের ২ লক্ষ ৫০ হাজার তম দাদু ভাই হবে বনমানুষ বা ape, তারা দেখতে অনেকটা শিম্পাঞ্জীর মতো। তারা আমাদের পূর্বপুরুষ হলেও আমাদের থেকে একদমই আলাদা। আমাদের আর তাদের মাঝে অনেক পার্থক্য থাকবে। এমনকি তারা শিম্পাঞ্জী থেকেও অনেক আলাদা, তারা শিম্পাঞ্জীদের সাথে মিলে কোনো সন্তান-সন্ততির জন্ম দিতে পারবে না।
কিন্তু তারা মানে ৬ মিলিয়ন বছর আগের বনমানুষেরা, ৫ মিলিয়ন ৯ শত নব্বই হাজার বছর আগের প্রাণীর সাথে মিলে ঠিকই সন্তানের জন্ম দিতে পারবে। হয়তোবা ৫ মিলিয়ন ৯ শত-হাজার বছর আগের প্রাণীর সাথে মিলেও সন্তানের জন্ম দিতে পারবে কিন্তু ৪ মিলিয়ন বছর আগের প্রাণীর সাথে মিলে সন্তানের জন্ম দিতে পারবে না।
খেয়াল করি, এখানে বারবার বলা হচ্ছে অমুক বছর আগের প্রাণী তমুক বছর আগের প্রাণীর সাথে মিলে সন্তানের জন্ম দিতে পারবে বা পারবে না। এক সময়ের প্রাণীর সাথে আরেক সময়ের প্রাণীর সন্তান জন্ম দেবার ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একে অপরে মিলে তখনই কেউ সন্তানের জন্ম দিতে পারবে যখন তারা উভয়ে একই প্রজাতির প্রাণী হয়। যদি দেখা যায় দুই গোত্র বা দুই সময়ের প্রাণী একত্রে মিলে সন্তানের জন্ম দিতে পারছে না তাহলে বুঝতে হবে তারা ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির সদস্য।
যখন আমরা দেখছি আমাদের পূর্বপুরুষের লম্বা লাইনের মাঝে এক সময়ের প্রাণীর সাথে আরেক সময়ের প্রাণী মিলে নতুন কোনো সন্তানের জন্ম দিতে পারছে না তখন বুঝতে হবে, আমরা একই লাইনের হলেও সময়ের সাথে সাথে প্রজাতিগত দিক থেকে আমরা আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম।
টাইম মেশিনে মাধ্যমে দশ হাজার বছর করে সময়ের মাঝে লাফ দেবার খেলাটা আবারো চালু করি। এবার চলে যাই পঁচিশ মিলিয়ন বছর আগে। সেখানে আমরা আমাদের দেড় মিলিয়ন তম দাদু ভাইয়ের দেখা পাবো। সংখ্যাটা যে ঠিক ঠিক দেড় মিলিয়নই হবে এমন নয়, এখানেও সংখ্যার কিছুটা কম-বেশ হতে পারে। এই সময়ের প্রাণীগুলোর লেজ থাকলেও এরা বনমানুষ হবে না। সাদামাটা চোখে এদের দেখলে আমরা হয়তো এদের বলবো ‘বানর’। কিন্তু তারা আজকের যুগের বানরদের থেকে অনেক ভিন্ন। বানর এক প্রজাতির এরা অন্য প্রজাতির। এই প্রাণীরা বানরদের সাথে মিলে কোনো সন্তানের জন্ম দিতে পারবে না। সমস্ত ভ্রমণেই দেখতে পাবো একটু একটু পরিবর্তন অনেক বড় কিছুর জন্ম দিচ্ছে। একটু একটু করে হিমালয়ের উচ্চতা বেড়ে যায়। কারো চোখে ধরা পড়ে না কিন্তু বেড়ে যায়।
আবারো টাইম মেশিনে চড়ে বসি। চলে যাই দশ হাজার বছর করে করে। এই বেলায় অতীতের অনেক অনেক বছর পর্যন্ত কোনো স্টেশনেই তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন চোখে পড়বে না। অনেকগুলো সময়-লাফ দেবার পর তেষট্টি মিলিয়ন বছর আগের সময়ে গেলে চোখে পড়ার মতো কিছু একটা পরিবর্তন দেখতে পাবো। এই সময়ে আমাদের সাত মিলিয়ন তম পূর্বপুরুষের সাথে হ্যান্ডশেক করতে পারবো। তারা দেখতে অনেকটা আজকের দিনের লেমুর বা গালাগোর মতো হবে। গালাগো হচ্ছে বড় বড় চোখ-ওয়ালা একধরনের প্রাণী যারা আফ্রিকা অঞ্চলে বাস করে।
তেষট্টি মিলিয়ন বছর আগের এই প্রাণীটিই আজকের যুগের সকল লেমুর ও গালাগো জাতির পূর্বপুরুষ। এবং সকল আধুনিক বানর, শিম্পাঞ্জী এমনকি আমরা মানুষের পূর্বপুরুষও এটিই। দেখতে লেমুরের মতো হলেও এরা আলাদা প্রজাতি। স্বাগত জানিয়ে তাদেরকেও আমাদের টাইম মেশিনের ভ্রমণে সঙ্গী করে নেই। তাদের সাথে নিয়ে আরো আরো দূরের অতীতে চলে যাই।
১০৫ মিলিয়ন বছর আগের স্টেশনে যদি আবার থামি তাহলে আমরা আমাদের ৪৫ মিলিয়ন তম পূর্বপুরুষের দেখা পাবো। তিনি সকল আধুনিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর পূর্বপুরুষ। স্তন্যপায়ী হচ্ছে তারা যারা জন্মের পর থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের দুধ খেয়ে বড় হয়। যেমন মানুষ, গরু, কুকুর ইত্যাদি। তবে মারসুপিয়াল ও মনোট্রিম জাতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের পূর্বপুরুষ তিনি নয়। মারসুপিয়াল হচ্ছে সে সকল প্রাণী যাদের থলি আছে, যেমন ক্যাঙ্গারু। ক্যাঙ্গারু জন্মের পর তার মায়ের থলিতে থাকে অনেকদিন। থলি অনেকটা ব্যাগের মতো, পেটের সাথে লেগে অতিরিক্ত একটা পর্দা তৈরি হয়েছে যা ব্যাগের মতো কাজ করে। অস্ট্রেলিয়ায় এই ধরনের প্রাণী পাওয়া যায়।
মনোট্রিম প্রজাতির প্রাণীরা একটু অন্যরকম। ডিম দেয় এবং বাচ্চাকে দুধও খাওয়ায়! এদের অধিকাংশ প্রজাতিই বিলুপ্ত। যে দুই একটা এখনো টিকে আছে তাদের পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনি অঞ্চলে। ছবিতে আমাদের ৪৫ মিলিয়ন তম দাদুভাইকে দেখা যাচ্ছে। সে তার সবচেয়ে প্রিয় খাবার, একটি পোকা মুখে নিয়ে বসে আছে। তাকে দেখতে অনেকটা ভিন্নরকম দেখালেও সে-ই সকল স্তন্যপায়ীর পূর্বপুরুষ।
৩১০ মিলিয়ন বছর আগের স্টেশনে গিয়ে নামলে দেখবো আমাদের সামনে আমাদের ১৭০ মিলিয়ন তম পূর্বপুরুষ উপস্থিত হয়ে আছে। তিনি সকল স্তন্যপায়ীর তো পূর্বপুরুষই পাশাপাশি সকল আধুনিক সরীসৃপেরও পূর্বপুরুষ। সরীসৃপ হচ্ছে সে সকল প্রাণী যারা বুকে ভর দিয়ে চলে। যেমন টিকটিকি, সাপ, কুমির, কচ্ছপ ইত্যাদি। আমরা মাঝে মাঝে বিশাল বড় প্রাণী ডায়নোসরের নাম শুনে থাকি। এই ডায়নোসরেরও পূর্বপুরুষ তিনি। আকাশের এত এত পাখিদেরও পূর্বপুরুষ তিনি। সে দেখতে আজকের দিনের টিকটিকির মতো। দেখতে আমাদের থেকে একদমই আলাদা হলেও, ইতিহাসের শৃঙ্খলে আমরা তার সাথে বাধা। ইতিহাসের চলার পথে আমরা তার সাথে যুক্ত। সেই মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে থেকে শুরু করে আজকের দিন পর্যন্ত স্তন্যপায়ীরা অনেকটাই পালটে গেছে, কিন্তু টিকটিকির মতো প্রাণীগুলো খুব একটা পাল্টায়নি। তারা প্রায় তাদের পূর্বপুরুষের মতোই রয়ে গেছে।
সময় ভ্রমণ করতে করতে আমরা অনেক দূরে চলে এসেছি। প্রথমে যে বলেছিলাম আমাদের মাছ জাতীয় এক পূর্বপুরুষের কথা, সেই মাছের সময়ে যেতে আর বেশি দূর অতিক্রম করতে হবে না। ৩৪০ মিলিয়ন বছর আগের সময়ের স্টেশনকে টার্গেট বানিয়ে টাইম মেশিনে করে আরো একটা ভ্রমণ সেরে ফেলি। এখানে দেখতে পাবো আমাদের ১৭৫ মিলিয়ন তম পূর্বপুরুষকে। সে দেখতে হবে অনেকটা গুই সাপের মতো। সে অন্য প্রজাতির প্রাণীর পাশাপাশি সকল উভচর প্রাণীর পূর্বপুরুষ। উভচর হচ্ছে সে সকল প্রাণী যারা পানিতে এবং ডাঙ্গায় দুই পরিবেশেই বাস করে। যেমন ব্যাঙ, গুই সাপ ইত্যাদি।
আরেকটা লাফ দিয়ে ৪১৭ মিলিয়ন বছর আগের সময়ে চলে গেলে দেখতে পাবো আমাদের ১৮৫ মিলিয়ন তম পূর্বপুরুষকে। সে দেখতে মাছের মতো। যার আনুমানিক আকৃতি নীচের এই ছবির মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
এখানের প্রাণী দেখা শেষ হলে আমরা আরো অতীতে চলে যেতে পারি। সে যাত্রায় অনেক অনেক পূর্বপুরুষের দেখা পাবো। প্রথমদিকে থাকবে চোয়াল ওয়ালা মাছ, তারপর দেখবো চোয়াল ছাড়া মাছ। তারপর এর চেয়েও সরল আকৃতির মাছ।
এরপর… এরপরও হয়তো অনেক কিছুই দেখতে পাবো কিন্তু সেই বিষয়ে প্রমাণিত তথ্যাদি আমাদের হাতে এখনো আসেনি। ঐ সময়কার ফসিল আমাদের কাছে ধরা দেয়নি। তাই ফসিলের তথ্য ছাড়াই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। ফসিল হচ্ছে সবচেয়ে শক্ত ও অকাট্য প্রমাণ। এই অকাট্য প্রমাণটি না থাকার কারণে এখানের ব্যাপারগুলো কিছুটা ধোঁয়াশাময় হয়ে গেছে। বিজ্ঞানের আলোকে অনেকে অনেক ধরনের তথ্য দিয়েছেন। তবে এটা নিশ্চিত যে একদম অতি সরল কোনো প্রাণ থেকে ধীরে ধীরে জটিল প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় তারা জটিল হয়েছে তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে কিন্তু এটা নিশ্চিত যে তারা সরল থেকে ধীরে ধীরে জটিল হয়েছে।
তথ্যসূত্র
দ্য ম্যাজিক অব রিয়্যালিটি, রিচার্ড ডকিন্স, অনুবাদ: সিরাজাম মুনির শ্রাবণ, রোদেলা প্রকাশনী, ২০১৭
অলঙ্করণ: Dave McKean
-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ
সহ-সম্পাদক, বিজ্ঞান ব্লগ
(লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল)
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া
যে থিওরী অনেক আগেই ব্যর্থ হয়েছে সেটাকে আবার কেন জীবিত করার চেষ্টা!