ডায়াবেটিক রোগীর ঘা নিরাময় করবে ন্যানোটেক লোশন

0
413

ডায়াবেটিক রোগীদের গায়ে কোনো ঘা হলে সহজে তা ভালো হয় না। ডায়াবেটিক রোগীর দেহে স্বাভাবিক দেহের মতো রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়া কাজ করে না বলে দীর্ঘদিন ধরে কোনো কাটাছেঁড়া ভালো হতে চায় না বরং দিনের পর দিন কষ্ট দিয়ে যায়। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য আশার আলো নিয়ে এলেন বিজ্ঞানীরা। প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নত কিন্তু গাঠনিক দিক থেকে সরল এক প্রকার ময়েশ্চার ক্রিম বা লোশন কিংবা সোজা সাপ্টা বললে এক প্রকার মলম ডায়াবেটিক রোগীদের ঘা শুকাতে সাহায্য করবে। এই লোশন সফলতার মুখ দেখলে এবং সবার জন্য সহজলভ্য হলে একদিন সকল ডায়াবেটিক রোগীরাই এর সাহায্য নিয়ে কাটাছেঁড়া কিংবা দীর্ঘদিন ধরে লেগে থাকা একরোখা ঘা থেকে মুক্তি পাবেন। এমনটাই বলছেন নর্থ-ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানী ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অ্যামি প্যালার ও রসায়নবিদ চ্যাড মার্কিন মিলে এই পদ্ধতি বের করেছেন। তাঁরা প্রথমে সাধারণ বাণিজ্যিক ময়েশ্চার ক্রিমের সাথে গোলকীয় নিউক্লিক এসিডের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। গোলকীয় নিউক্লিক এসিড (Spherical Nucleic Acids- SNA) হচ্ছে ন্যানো স্কেলে বর্তুলাকার RNA। এই নিউক্লিক এসিডগুলো ক্ষতস্থানে পৌঁছে ঘায়ের জন্য দায়ী উপাদানকে নিষ্ক্রিয় করে ক্ষত সারাতে সাহায্য করবে।

গবেষকদল ইঁদুরের উপর প্রথমে এই পরীক্ষা করে দেখেন। ডায়াবেটিক আক্রান্ত ইঁদুরের ক্ষত স্থানে এই ক্রিম লাগালে তা ৪ দিনের ভেতরে সেরে ওঠে। অন্যান্য প্রাণীদের উপরেও এই পরীক্ষাটি করা হয়। উন্নত স্তন্যপায়ী প্রাণীর বেলায় ক্ষত সেরে ওঠতে ১২ দিনের মতো সময় লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১৮ দিনও লাগে। যেসব ক্ষতে এই ক্রিম লাগানো হয় সেসব স্থানে রক্ত চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে ভালো হতে দেখা যায়।

এই পরীক্ষার আগে প্যালার আরো একটি পরীক্ষা করেছিলেন। তাঁর গবেষণাগারে তিনি দেখতে পান GM3 নামক এক প্রকার এনজাইমকে কেটে সরিয়ে নিলে কিছু বিশেষ কোষ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং তা দ্রুত ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে। এমনকি ডায়াবেটিক রোগীদের বেলাতেও এটা কাজ করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গবেষণাগারে GM3 এনজাইম সরিয়ে নেয়া সাধারণ ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য দুঃসাধ্য ব্যাপার। দরকার সহজলভ্য কোনো পদ্ধতি। পরবর্তীতে তিনি রসায়নবিদ চ্যাড মার্কিনকে নিয়ে আসেন তাঁর গবেষণায়। মার্কিন সাহেব আবার গোলকীয় নিউক্লিক এসিড দিয়ে এমনকিছু তৈরি করেছিলেন যা নির্দিষ্ট কোনো জিনকে টার্গেট করে ধ্বংস করতে পারে। এখানে জানিয়ে রাখা উচিৎ যে ১৯৯৬ সালে মার্কিন ও তার দলই গোলকীয় নিউক্লিক এসিড আবিষ্কার করেছিলেন

Picture2

দুই দিকের দুই গবেষণা একত্রে মিলে ডায়াবেটিক রোগীর জন্য কিছু করতে চেষ্টা করে অবশেষে সফল হওয়া যায়। মার্কিন ও প্যালার তাঁদের এই গবেষণার বিস্তারিত ফলাফল প্রকাশ করেন Proceedings of the National Academy of Sciences জার্নালে।

তাঁদের ডিজাইনকৃত লোশনের ক্ষুদ্রতম এককের ব্যাস ১৩ ন্যানোমিটার। এদের এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এরা ক্ষতস্থানে গিয়ে ঐ এলাকার কোষের GM3 এনজাইমকে নিষ্ক্রিয় করে দিবে। ফলে ক্ষত সেরে ওঠার প্রক্রিয়া তরান্বিত হবে।

শুধু ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষতই নয়, এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে আলসার সহ অন্যান্য ক্ষত সম্বন্ধীয় রোগ নিরাময় করা যাবে। গবেষকদল এই নিয়ে চিন্তা-ভাবনাও করছেন।

⚫ সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.