জর্জ গ্যামো একজন রাশিয়ান তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ছিলেন। তিনি মহাবিশ্ব উদ্ভবের বিগব্যাং তত্ত্বের অন্যতম প্রবক্তা। এই তত্ত্ব নিয়ে যখন কাজ করছিলেন সেই সময়ে রাশিয়ায় স্তালিনের শাসনকাল চলছিলো। বিজ্ঞান গবেষকদের অনেক গবেষনা মার্কসবাদের সাথে যায় না এই অযুহাতে সেই সময় রাশিয়ায় প্রচুর বিজ্ঞানীকে অপদস্থ এমনকি জেল-জুলুমের স্বীকার হতে হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক ডগমার সাথে যায়না বলে তো আর তিনি তাঁর গবেষণালব্ধ তত্ত্ব ত্যাগ করে দিতে পারেন না। তাই রাশিয়া থেকে পালিয়ে আমেরিকায় গিয়ে জর্জওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দিলেন। সেখানে তাঁর পরিচয় হয় রালফ আলফারের সাথে। আলফার বয়সে নবীন এবং সবে পিএইচডিতে যোগ দিয়েছেন। এই দুজন বিগব্যাং তত্ত্ব নিয়ে আগ্রহী ছিলেন তাই একযোগে এই তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন।
আলাফারের পিএইডির শেষ দিকে তাঁরা পদার্থবিজ্ঞানের রাজকীয় জার্নাল Physical Review তে Origin of the Chemical Elements নামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিলেন (এটি কসমোলজির ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা)। মজার ব্যাপার হলো দুজনে মিলে কাজ করলেও গ্যামো এই গবেষণাপত্রে নিউইয়র্কের কোরনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত গবেষক হ্যান্স বেথে’র নাম যুক্ত করে দিলেন। বেথে অবশ্য এসবের কিছুই জানতেন না। তিনি নিজে নামকরা গবেষক হলেও গ্যামোর গবেষণায় যুক্ত ছিলেন না। তাহলে গ্যামো কাজটি কেন করলেন? গ্যামো ছিলেন অত্যন্ত রসিক মানুষ। তিনি লক্ষ্য করলেন আলফারের নামের সাথে গ্রীক প্রথম বর্ণ আলফার বেশ মিল আছে। তাঁর নিজের নামের সাথে গ্রিক তৃতীয় বর্ণ গামার মিল আছে। মাঝে বিটা হিসেবে কারো উপস্থিতি থাকা দরকার। তিনি বেথে’র নামের সাথে বিটার সাদৃশ্য খুঁজে পেলেন। তাই মাঝে বসিয়ে দিলেন তাঁর নাম! এই গবেষণাপত্রটি পরবর্তীতে আলফা-বিটা-গামা পেপার হিসেবে পরিচয় পেয়ে যায়।
(বেথের নাম যুক্ত করায় আলফার অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। এটি তাঁর পিএইচডি গবেষণা এবং বেথে কোনো অবদান না রেখেই স্বীকৃতি নিয়ে নেবেন এটি তাঁর মেনে নিতে কষ্ট হলো। এই বিষয়ে জার্নালের এডিটর বেথে সাথে যোগাযোগ করলেন। তখনই বেথে গবেষণা পত্রটি প্রথমবারের মতো দেখার সুযোগ পেলেন। তিনি দেখে বললেন, আ-হা, এটা খুবই ইন্টারেস্টিং একটা বিষয়, আমার পছন্দ হয়েছে। নাম যু্ক্ত করতে আমার কোনো আপত্তি নেই। এভাবে তিনজনের নামই অন্তর্ভুক্ত হলো। )