নিজের ফাটল নিজেই সারিয়ে তুলবে ইলেকট্রনিক চিপ

0
311

ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর কোনো এক জায়গায় ক্ষুদ্র একটা সমস্যা হলে পুরো যন্ত্রটাংশটাই নষ্ট হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামান্য এই ক্ষতির জন্য পুরো যন্ত্রটিই বাতিল হয়ে যায়। সম্প্রতি এই সমস্যার সমাধানে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সেই দিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয় যখন আমাদের ব্যবহার করা নিত্যদিনের পণ্যসমূহ নিজের ক্ষতি নিজেই সারিয়ে তুলবে। এর পেছনের নায়ক হিসেবে কাজ করবে আত্মচালিত ন্যানো কণা যারা যন্ত্রে সংঘটিত ক্ষতি শনাক্ত করতে পারবে এবং নিজে থেকে ভ্রমণ করে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান সারিয়ে তুলবে।

ক্ষুদ্র স্কেলে মাইক্রোস্কোপিক চিড় বা ফাটল ইলেকট্রিকাল সার্কিটে বিদ্যুৎ প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। এর ফলে অবধারিতভাবেই ইলেকট্রনিক পণ্যে তার প্রভাব পড়ে। যন্ত্রে কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দেয়। সার্কিটগুলো বড় হলে এই সমস্যা সহজেই সারিয়ে তোলা যেত, কিন্তু আধুনিক যন্ত্রগুলোর সার্কিট অত্যন্ত ক্ষুদ্র হওয়াতে এগুলো মেরামত করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। মেরামত করা তো পরের ব্যাপার, কোথায় ফাটল ধরেছে সেটা বের করাই দুঃসাধ্য।

এই সমস্যা সমাধানে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীরা খেটেখুটে ‘ন্যানো মোটর’ এমন এক যন্ত্রের ডিজাইন করেছেন যেটি নিজে থেকেই চালিত হয়ে ক্ষুদ্র সার্কিটের ফাটল খুঁজে বের করে তা মেরামত করবে।

এই যন্ত্রের ব্যবহার করা হবে সোনা ও প্লাটিনামের কণা। এরা বিদ্যুৎ পরিবাহী। ফাটলের জায়গায় এরা গিয়ে প্রথমে নিজেরা মিলে একটি পরিবহণ সেতু তৈরি করবে। ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদ্যুৎ প্রবাহ আবার চালু হবে। এরপর ফাটল মেরামতে নেমে যাবে, সার্কিট পূর্ণ করবে। আবারো সচল হয়ে যাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস। এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকরা। ন্যানোমোটরগুলোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বহন করবে, এর সাহায্যেই মোটরগুলো চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির সরবরাহ পাবে।

মানুষের রক্তে বিদ্যমান প্লাটিলেট (platelets) ক্ষুদ্র অঙ্গাণুর কর্মপদ্ধতি থেকে উৎসাহিত হয়ে গবেষক দল এই মোটরের নকশা করেন। তাঁরা তাদের এই নকশার বিস্তারিত তুলে ধরেন আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির ২৫১ তম সম্মেলনে। এটি অনুষ্ঠিত হয় এ মাসের ১৩ তারিখে। মানবদেহের এই প্লাটিলেটগুলো কোনো ক্ষত স্থানের সন্ধান পেলে সবাই মিলে ঝাপিয়ে পড়ে রক্তপাত বন্ধ করা সহ অন্যান্য জটিল প্রক্রিয়ায় ক্ষত সারিয়ে তোলে।

Picture1
বিজ্ঞানীরা উদ্দেশ্যকৃতভাবে একটি ক্ষুদ্র সার্কিট নষ্ট করে ন্যানোমোটরের মাধ্যমে তা ঠিক করেন।

তাঁদের নকশা করা ন্যানোমোটর তৈরি করতে প্রথমে তারা সোনার পরমাণু দিয়ে অনেকগুলো ক্ষুদ্র ন্যানো গোলক তৈরি করেন। অতঃপর প্রতিটি গোলকের অর্ধেক অংশ প্লাটিনামের পরমাণু দিয়ে আবৃত করে দেন। যে জ্বালানী থেকে শক্তি নিয়ে গোলক চালিত হবে তাদেরকে সক্রিয় করতে কাজে লাগে এই প্লাটিনামের প্রলেপ। এই প্রলেপের ফলে সোনার ন্যানো গোলক পানি বিদ্বেষী হয়, যা ন্যানো গোলককে তার কাজে সুবিধা প্রদান করে।

ইলেকট্রিকাল সার্কিটে ফাটলগুলো পানি বিদ্বেষী হয়। এক পানি বিদ্বেষী পদার্থ আরেক পানি বিদ্বেষী পদার্থকে সনাক্ত করে নেয় (রতনে রতন চেনে!)। ফাটলে কোনো একটি গোলক উপস্থিত হলে ঐ স্বভাব ধর্মের কারণে অন্যান্য গোলকগুলোও প্রথমটির পথে পথে এসে হাজির হয়। অনেকগুলো গোলক একত্র হলে ফাটলে তড়িৎ প্রবাহের ত্রুটি সংশোধন সম্পন্ন হয়। সার্কিট পূর্ণ হয়ে গেলে অতিরিক্ত গোলকগুলো অন্য কোনো ফাটলে ব্যবহৃত হবার জন্য প্রস্তুত হয়।

সিরাজাম মুনির

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.