দীর্ঘশ্বাস না ফেললে মৃত্যুও ঘটতে পারে আপনার

0
562

আপনি প্রতিদিন কতবার দীর্ঘশ্বাস ফেলেন? আপনি যে পরিমান ভাবছেন একটি নতুন গবেষণা অনুযায়ী তারচেয়ে দশগুণও বেশী হওয়ার সম্ভাবনা আছে সংখ্যাটি।

মানুষ প্রকৃতপক্ষে প্রতিঘন্টায় গড়ে প্রায় ১২ বার দীর্ঘশ্বাস ফেলে, অর্থাৎ প্রতি পাঁচ মিনিটে একবার। কিন্তু এই শব্দবহুল প্রশ্বাস যে ক্লান্তির বা হতাশার ইঙ্গিতই দেয় এমন নাও হতে পারে। বরং, বিজ্ঞানীদের কথা অনুযায়ী এধরণের দীর্ঘশ্বাস ফুসফুসকে কর্মক্ষম রাখার জন্য প্রয়োজনীয়।

ইউনিভার্সিটি ও ক্যালিফোর্নিয়া, লসএঞ্জেলেস (ULCA) এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি দীর্ঘশ্বাসের উৎস আবিষ্কার করেছেন যাকে তাঁরা জীবনরক্ষাকারী রিফ্লেক্স বলছেন। এই দীর্ঘশ্বাস ফুসফুসের যেগুলো অ্যালভিওলাই নামে পরিচিত বায়ুথলিকে গুটিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। ULCA এর নিউরোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং এই গবেষণার একজন সহ-গবেষক জ্যাক ফেল্ডম্যান বলেন “মানুষের ফুসফুসে একটি টেনিস কোর্টের সমান পৃষ্ঠতলীয় ক্ষেত্রফল রয়েছে যা বুকের ভেতর গুটিয়ে থাকে। প্রকৃতি এর অভ্যন্তরে ৫০০ মিলিয়ন বায়ুথলির ব্যবস্থা রেখেছে যেগুলো এ্যালভিওলাই নামে পরিচিত। প্রতিটি এল্যাভিওলাস একটি ছোট গোলক যার ব্যস ০.২ মিলিমিটার (০.০০৮ ইঞ্চি)”।

এই ক্ষুদ্র, গোলাকার থলিগুলো ফুসফুসের রন্ধ্রের মধ্য দিয়ে রক্তে পর্যাপ্ত অক্সিজেন গমন নিশ্চিত করে, ফেল্ডার যেগুলোকে ভেজা বেলুনের সাথে তুলনা করেন। তিনি বলেন, “আপনি কখনো একটি ভেজা বেলুন ফোলানোর চেষ্টা করেছেন? এটা খুবই কঠিন কাজ। কারণ পানি বেলুনের ভেতর লেগে থাকে। অ্যালভিওলাস গুটিয়ে গেলে একই ঘটনা ঘটে এবং এগুলো গুটিয়ে গেলে গ্যাস আদান-প্রদানের জন্য এর পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্র আর বিদ্যমান থাকে না।”

অন্যভাবে বললে, যদি মানুষ দীর্ঘশ্বাস না ফেলত তাহলে গুটিয়ে যাওয়া অ্যালভিওলাসগুলো আর পুনরায় কর্মক্ষম হতো না, এবং ফুসফুস ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতো। ফেল্ডম্যান বলেন, একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস অ্যালভিওলাস পুনরায় ফুলে ওঠার ক্ষেত্রে সাহায্য করে যা মানুষ প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর নেয়।

ফেল্ডম্যান বলেন, “আগের কালে যখন লৌহ ফুসফুস ব্যবহার করা হতো কিছু রোগের ক্ষেত্রে, তখন ফুসফুসের স্বাভাবিক আয়তনের চেয়ে বড় নিঃস্বাস নেওয়া যেত না ফলে অনেক রোগী অ্যালভিওলাস গুটিয়ে গিয়ে মারা যেত। কিন্তু এখন যারা ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা নেয় তাদের লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রতি মিনিট দুয়েকের মধ্যে তারা একবার বড় নিঃশ্বাস নেয় যা দীর্ঘশ্বাসের ভুমিকাটি পালন করে।“

তাই একটি দীর্ঘশ্বাস একটি দ্বিগুণ নিঃশ্বাসের মতো, এবং এটা একটি শশব্দ হাফঁ ছেড়ে বাঁচার মতো নিঃশ্বাস হতে হয় না। তবে, ফেল্ডম্যান বলেন, দীর্ঘশ্বাস আসলে ভিন্ন ভাবে আবেগের বিষয়-আশয়ের সাথে জড়িত, কেননা দীর্ঘশ্বাসের পরিমানের সাথে মানসিক চাপের সম্পর্ক আছে। মানসিক চাপ অবস্থায় মস্তিষ্ক পেপটাইড অণু নিঃসরণ করে। এই অণুগুলো প্রোটিন গঠনের একক। এদের মধ্যে কিছু পেপটাইড বম্বেসিন (bombesin) এর সাথে সম্পর্কিত।

বম্বেসিন স্তন্যপায়ীদের মধ্যে দেখা যায় না এবং এই গবেষকদের মতে একধরনের বিষাক্ত বস্তু যা ইউরোপীয় লাল-পেট ব্যাঙ্এর চামড়ায় পাওয়া যায়। তবে স্তন্যপায়ীরা এই পদার্থটির সাথে মিথষ্ক্রিয়া দেখায় এবং মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে নিউরোমেডিন বি (neuromedin B) এবং গ্যাস্ট্রিন (gastrin) নিঃসারক পেপটাইড এই বস্তুটির সমতুল্য। ফেল্ডম্যানের নিজেরই পূর্ববর্তী একটি গবেষণায় দেখা গেছে মস্তিষ্কের বিশেষ অংশে বম্বেষ্টিন সংঞ্চালন করলে তা ইঁদুরের দীর্ঘশ্বাসের হার ঘন্টায় স্বাভাবিক ২৫ বার হতে ৪০০ বারে তুলে দেয়, অথচ এই সময় তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের হার একই থাকে বা কিছুটা হ্রাস পায়।

বিজ্ঞানপত্রিকা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.