জন্মান্ধ নবজাতকের দৃষ্টি ফিরে এলো স্টেম সেলের মাধ্যমে

0
421

স্টেম সেলের মাধ্যমে জন্মান্ধতা সহ চোখের ছানি পড়া, ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু, ত্রুটিপূর্ণ লেন্স ইত্যাদির চিকিৎসা হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে নবজাতক ও খরগোশের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা এমনটাই বলছেন। স্টেম সেল হচ্ছে দেহের বিশেষ ধরনের কোষ, যারা প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো কোষে রূপান্তরিত হতে পারে।

ঠিকঠাক ও ত্রুটিহীনভাবে দৃশ্য দেখতে হলে চোখের লেন্স ও লেন্সের উপরের টিস্যুর আবরণ কর্নিয়া অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে। স্বচ্ছতায় ঘাটতি দেখা দিলে পরিষ্কারভাবে দেখতে সমস্যা হয়। যাদের চোখের লেন্স বা কর্নিয়ায় অস্বচ্ছতা আছে তাদের এই ত্রুটি সংশোধনের জন্য কৃত্রিমভাবে ইমপ্ল্যান্ট করতে হয় নয়তো কারো দান করা চক্ষু প্রতিস্থাপন করতে হয়। এই দুই প্রক্রিয়াই একে তো কিছুটা বিপদজনক তার উপর এগুলো সবচেয়ে ভালো সমাধানও নয়- এমনটাই বলেন গবেষকেরা।

নতুন গবেষণায় গবেষকেরা ২ বছরের নিচের ১২ টি শিশুকে নিয়ে পরীক্ষা করেন। এদের সবাই জন্ম থেকে চোখের ছানি সম্পন্ন। এই ছানি শিশু বয়সে অন্ধ হয়ে যাবার প্রধান কারণ। গবেষকেরা সার্জারির মাধ্যমে শিশুদের ছানি সরিয়ে খুব সতর্কতার সাথে লেন্স এপিথেলিয়াল স্টেম (lens epithelial stem cells) নামে কিছু কোষ ছড়িয়ে দেন। এই স্টেম কোষেরা পরবর্তীতে পরিবর্তিত ও পুনরুৎপাদিত হয়ে চোখের লেন্স গঠন করে।

গবেষকদের হিসাব মতে এই চিকিৎসায় নবজাতকেরা ১ মাসের ভেতরেই সুস্থ হয়ে ওঠে। এই স্টেম কোষ সার্জারির ফলে ছানি পড়া চোখের তুলনায় ২০ গুণ পরিষ্কার স্পষ্ট দেখতে পায়।

এর আগে কখনো স্টেম কোষের মাধ্যমে চোখের লেন্স পুনর্গঠন করা হয়নি। প্রথমবারের মতো এমন একটি চমৎকার কাজ করে গবেষণার প্রধান ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির চক্ষু বিশেষজ্ঞ ড. কাং ঝাং বলেন “আমরা আমাদের শরীরের প্রয়োজনে যেকোনো ধরনের কোষ উৎপাদন করতে নিজেদের শরীরের স্টেম কোষ ব্যবহার করতে পারি।” চোখের জন্য প্রয়োজন হলেও ব্যবহার করা যায়।

Picture1
স্টেম কোষ প্রয়োজন অনুসারে ভিন্ন কোষে রূপান্তরিত হতে পারে। ছবিঃ উইকিমিডিয়া কমন্স এর সৌজন্যে।

চোখের ছানি লেন্সের মাঝে কিছুটা অস্বচ্ছ অবস্থার সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এটিই অন্ধত্বে উপনীত হতে ভূমিকা পালন করে। সমস্ত পৃথিবীতে প্রায় ২০ কোটি মানুষ আছে যারা চোখের ছানি রোগে ভোগে। গবেষকদের মতে এই স্টেম কোষের চিকিৎসা পদ্ধতি বিপুল পরিমাণ মানুষের উপকারে আসবে। গবেষক দলের প্রধান ড. ঝাং বলেন “আমরা এই পদ্ধতিটি শিশুদের উপর প্রয়োগ করে দেখেছি। শিশু ও বড়দের চোখের গঠন ও কার্যপ্রণালী মোটামুটি একই। আমরা আশা করছি বড়দের জন্যও এই চিকিৎসা ফলপ্রসূ হবে। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে স্টেম কোষকে অধিক হারে পুনরুৎপাদন করার জন্য হয়তো কিছু একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

মানব শিশুর উপর এই পরীক্ষাটি করার আগে তারা ইঁদুর ও খরগোশের উপর করে দেখেছিলেন। তবে এটি নিয়ে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে। গবেষক দল খুব অল্প পরিমাণ মানব নমুনার উপর পরীক্ষাটি করেছেন। সকলের জন্য এটি উন্মুক্ত হতে গেলে এই গবেষণাটিকে আরো অনেক মানুষের উপর প্রয়োগ করতে হবে এবং সফল হতে হবে। আশা করা যায় এই পরীক্ষাটি উত্তীর্ণ হবে এবং আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্ব সহ সমগ্র বিশ্বে চক্ষু চিকিৎসার ভালো একটি পদ্ধতি হিসেবে আবির্ভূত হবে।

রিপোর্টার: সিরাজাম মুনির

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.