হাইপারলুপ প্রযুক্তির প্রথম প্রদর্শন

0
440

মাসদুয়েক আগে লাস ভেগাসের মরুভূমিতে হাইপারলুপ ওয়ান প্রথমবারের মতো হাইপারলুপ প্রযুক্তির সম্পূর্ণ পরীক্ষা পরিচালনা করে এবং তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয় যে তাদের প্রযুক্তি সত্যিই কাজ করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী তাঁদের পরীক্ষামূলক ট্রলিতে স্থাপনকৃত মোটরটি ১ সেকেন্ডে ০ থেকে ৯৬ কিমি [৬০ মাইল প্রতি ঘন্টায়] গতি তুলতে সক্ষম হয় এবং ২.৫ Gs বল উৎপাদিত করে।  এই প্রাথমিক পরীক্ষায় বিখ্যাত ‘লুপ’ প্রযুক্তি সংযুক্ত ‍ছিলনা তাই ট্রলিগুলো কিভাবে বাতাসের প্রতিরোধ ছাড়া এত দ্রুত আগাতে পারে তা নজরে আসেনি। কিন্তু এই ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এই মোটরটিই একটি গাড়িকে ঘন্টায় ১,১২৬ কিমি [৭০০ মাইল] এর অবিশ্বাস্য গতিতে চালিত করতে পারে। ইলন মাস্ক প্রথম যখন এই হাইপারলুপের ধারণা নিয়ে আসেন তখন থেকেই মানুষ এই প্রযুক্তি নিয়ে ভয় প্রকাশ করেন। ট্রেনের বিকল্প হিসেবে এবং সম্ভাব্য বায়ু ভ্রমণের জন্য এটি অল্প চাপের নলের ভেতর দিয়ে চুম্বকের সাহায্যে ঘন্টায় ১,২০০ কিমি [৭৪৫ মাইল] পর্যন্ত গতি তুলতে সক্ষম হবে। যদি এটা নির্মিত হয় তবে একটি হাইপারপুল আপনাকে ৩০ মিনিটের মধ্যে লস এঞ্জেলেস থেকে সানফ্রান্সিকোতে নিয়ে যাবে কিংবা ২ ঘন্টায় নিউ ইয়র্ক থেকে চীনে। এখন আমাদের কাছে প্রমাণ হিসেবে এর প্রথম ভিডিওটি রয়েছে যা এই ধরণের ট্র্যাক ভিত্তিক মোটর ধারণাকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

ডেমোটি দেখতে তেমন আকর্ষণীয় নয় এবং এতে একটি ট্র্যাক রয়েছে [কোন লুপ নেই]। একটি ছোট রোলারকোষ্টারের মতো দেখতে ট্রলি রয়েছে যা ৩০ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মাঝে চলাচল করে। এখন পর্যন্তও এর কোন গতিরোধক নেই, তাই ট্রলিটি ট্র্যাকের শেষে গিয়ে লাঙ্গল সদৃশ বস্তু  বালিতে নামিয়ে দেয়।

সর্বোচ্চ গতিতে পৌছানো এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছিলনা। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পরিচালনাপদ্ধতি নামক নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষার উপরই মূলত নজর রাখা হয়েছিল, যা ট্র্যাকের মাঝে স্থাপন করা হয়েছিল। আর এটা সফল হয়েছে।

তাহলে কিভাবে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পরিচালনাপদ্ধতিটি কাজ করে? হাইপারলুপ ওয়ান পূর্বের হাইপারলুপ প্রযুক্তির ব্যপারে বেশ শান্তই রয়েছে। কারণ হাইপারলুপ তৈরীর শুরু থেকেই এটি প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জস গিইগেল বলেন, “সাধারণ মোটরের মত এর কোন পৃথক অংশ নেই। গিইগেল এই মোটরকে ব্লেড হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা আপনি সাধারণ ইলেক্ট্রোনিক মোটরগুলোর ভেতরে পেতে পারেন। যখন এটা চালু করা হয়, এটা থেকে প্রায় ২ফুট [৬০ সেমি] লম্বা এবং ৬ ইঞ্চি [১৫ সেমি] প্রশস্ত ব্লেডগুলো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তি তৈরী করে এবং সম্মুখ বরাবর চালিত করে।”

অন্য কথায়, এই পদ্ধতিটি মূলত চৌম্বকপরিচালনা পদ্ধতির সাহায্যে চালিত হয়। তাতে সম্ভবত কোন শব্দের সৃষ্টি করবে না। কিন্তু এটা যখন অল্প চাপের নলের ভেতর বাতাসের কোন প্রতিরোধ ছাড়াই প্রবেশ করবে তখন বায়ুগতিবিদ্যায় প্রতি ঘন্টায় ১,১২৬ কিমি গতি তুলবে।

গিইগেল বলেন, নলের ভেতর ঘর্ষণ কম হওয়ার কারণে একটি ট্র্যাকের মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশের মাঝে মোটর স্থাপন করার প্রয়োজন হবে। পরবর্তী ধাপ হচ্ছে এর একটি পরিপূর্ণ যন্ত্র তৈরীকরা। হাইপারলুপ ওয়ান আশা করছে ২০১৬ এর শেষের দিকে তারা এটা তৈরী করতে সক্ষম হবে। সিইও রব লয়েড বলেন “আমরা বায়ুমন্ডলে উত্থান প্রযুক্তি, অল্প চাপের নলের ভেতর বায়ুগতিবিদ্যা প্রযুক্তিসহ নল পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছি। শুধুমাত্র এটি সম্পূর্ণরূপে তৈরী করা শেষ হলেই এর প্রদর্শন করতে পারব।”

যদি এটা তৈরী সম্পন্ন হয় তবে দেখতে ঠিক এমনি হবে!!

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.