বর্তমানে শুক্র গ্রহ যে অবস্থায় আছে তাতে বসবাস তথা প্রাণ ধারণের কথা কল্পনাও করা যায় না। এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এত পরিমাণ বেশি যে অনায়াসেই সীসা গলিয়ে ফেলতে পারবে। পুরো বায়ুমণ্ডল সালফিউরিক এসিড আর কার্বন ডাই-অক্সাইড এর বিষাক্ততায় পরিপূর্ণ। এবং অবশ্যই এতে পানির কোনো অস্তিত্ব নেই। পানি নেই মানে প্রাণ ধারণ একদমই সম্ভব নয়। বর্তমানে এতে প্রাণ ধারণের উপযোগী পরিবেশ না থাকলেও সাম্প্রতিক ও পূর্ববর্তী কিছু গবেষণা বলছে এই গ্রহটি একসময় প্রাণ ধারণের উপযোগী ছিল।
সম্প্রতি জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিজ্ঞানী শুক্রের বসবাসযোগ্য পরিবেশের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তাঁরা মডেল তৈরি করে দেখিয়েছেন অনেক অনেক আগে শুক্র গ্রহ দেখতে কেমন ছিল। শুক্র গ্রহ একসময় কী হারে ও কেমন বেগে ঘুরত এবং কত পরিমাণ সূর্যালোক এতে অপতিত হতো তা চারটি মডেলের মাধ্যমে দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এরপর তাঁরা বলেছেন কয়েকটি বিষয় যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে এই গ্রহে একসময় প্রাণ ধারণের উপযোগী পরিবেশের অস্তিত্ব ছিল। তাঁদের দেয়া সময়কাল অনুসারে ২.৯ থেকে ৭১৫ মিলিয়ন বছর আগে বিদ্যমান ছিল এই পরিবেশ। তাপমাত্রা ছিল আজকের পৃথিবীর তাপমাত্রার মতোই। এমনকি তুষারপাতও হতো এবং সমুদ্রও ছিল তাতে।
উল্লেখ্য কোনো গ্রহে প্রাণ ধারণের উপযোগী পরিবেশ বলতে গ্রহের এমন একটা অবস্থাকে বোঝানো হয় যেখানে গ্রহটি তার সূর্য থেকে খুব বেশি দূরেও থাকে না আবার খুব কাছেও থাকে না। তাপমাত্রা খুব বেশিও থাকে না, আবার খুব কমও থাকে না। পানি বরফ ও বাষ্প এই দুইয়ের মাঝে তরল আকারে থাকে। পাশাপাশি বায়ুমণ্ডল সহ আবহমণ্ডলের অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রাণ ধারণের জন্য দরকারি উপাদানগুলো উপস্থিত থাকে।
তবে এটাই প্রথম গবেষণা নয় যা শুক্রের প্রাণ ধারণের উপযুক্ত পরিবেশ সম্বন্ধে ধারণা দেয়। শুক্র গ্রহের এই বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়ে আগেও অনেক গবেষণা হয়েছিল। যেমন ২০১০ সালেও একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছিলেন শুক্রের ঘনত্ব, আকার ও উপাদানের মিশ্রণ পৃথিবীর ঘনত্ব, আকার ও উপাদানের মতোই। সম্ভবত এই দুই গ্রহ একই রকম আদি পদার্থ থেকে গঠিত হয়েছে।
তবে নতুন এই গবেষণাটি একটু ভিন্নরকম। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মডেল তৈরি করে দেখিয়েছেন অতীতে শুক্র দেখতে কেমন ছিল। দেখা যায় পৃথিবীর মতো এখানেও গ্রিন হাউজের অস্তিত্ব ছিল। তবে শুক্রে গ্রিন হাউজের স্তর তার জন্য ক্ষতিই ডেকে এনেছে। গ্রিন হাউজের প্রভাবের ফলে এর তাপমাত্রা দ্রুতগতিতে বেড়ে গিয়েছিল এবং বায়ুমণ্ডল ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। এতে করে তাপমাত্রা আরো বেড়ে গিয়েছিল। নারকীয় যজ্ঞ বলতে যা বোঝায় অনেকটা তেমনই চলছিল শুক্রের বুকে।
গবেষণা প্রবন্ধে গবেষকরা বলছেন “আজকের দিনের শুক্র হয়তো বসবাসের অনুপযোগী, তাপমাত্রা ৭৫০ কেলভিন, বায়ুমণ্ডল পৃথিবী থেকে ৯০ গুণ হালকা কিন্তু অতীতে একটা সময় ছিল যখন শুক্রের অবস্থা এত নারকীয় ছিল না, এমটা সময় ছিল যখন শুক্র ছিল প্রাণ ধারণের উপযোগী।[iflscience, sciencealert অবলম্বনে]
-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ
All comment are hypothecal.
শিরোনামে সেই কারণেই একটি প্রশ্নবোধক যুক্ত করা হয়েছে।