টিকা, এক স্বর্গীয় আশীর্বাদ

2
678

বছর দুয়েক আগে ‘The Croods’ নামে একটা অ্যানিমেটেড মুভি বের হয়েছিল। মুভিটা অনেকেই দেখেছেন। Croods রা মূলত গুহামানব। সারা পৃথিবী থেকে তারা বিচ্ছিন্ন। গুহাতেই তারা তাদের জীবনের প্রায় পুরোটা কাটিয়ে দেয়। প্রকৃতির নানা প্রতিকূলতার সাথে তারা দিন রাত যুদ্ধ করে টিকে থাকার জন্যে। প্রকৃতির ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা তারা জানে না। তাই তারা ঘটনাগুলোকে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করে। আর তৈরি হয় নান মিথ।

মানুষের ইতিহাসও অনেকটা Croods দের মত। মানুষের কাছে যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগে নি। তখন তারা প্রকৃতির কাছে এমনটাই অসহায় ছিল। আর মানুষের চরম শত্রু ছিল নানা প্রাণঘাতী রোগ। এমন একটি রোগ হলো গুটি বসন্ত বা Smallpox। যে রোগ ছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ। আঠারো শতকের শেষ দিকে প্রায় চার লক্ষ ইউরোপিয়ানদের মৃত্যুর কারণ ছিল এই গুটি বসন্ত। আর যারা মৃত্যু থেকে রেহাই পেত তাদের ভাগ্যে জুটতো অন্ধত্বসহ নানা ধরণের পঙ্গুত্ব। সেই সময়কার অসহায় মানুষগুলোর কথা চিন্তা করলে মন ভারী হয়ে উঠে সাথে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে সেই সব রোগের কথা মনে করে। মুক্তি তখন ছিল অসম্ভব। তাই মানুষ অন্য কোন উপায় না দেখে Croods দের মত নানা মিথ তৈরি করতে থাকে। আর তাতেই মুক্তি লাভের চেষ্টা করতে থাকে। তারা মনে করতে থাকে গুটিবসন্ত দেব-দেবীর অসন্তুষ্টির কারণ। তাই তারা দেবদেবীর সন্তুষ্টির জন্যে পূজা করা শুরু করে। চীনারা তো গুটিবসন্তের দেবীও বানিয়ে ফেলেছিল। তারা দেবীর নাম দিল ‘T’ou- Shen Niang-Niang’। গুটিবসন্তের ফুস্কুড়িগুলিকে তারা ‘সুন্দর ফুল’ বলে মানত। কারণ তারা মনে করত ফুস্কুড়িগুলিকে খারাপ বললে দেবী হয়তো অসন্তুষ্ট হবেন। তারা আরও মনে করত দেবী সুন্দর চেহারার শিশুদের এ রোগ দেন। দেবী এই রোগ ছড়িয়ে দেন বছরের শেষ রাতে। তাই এই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বড়রা শিশুদের কিম্ভূত-কিমাকার মুখোশ পরিয়ে রাখত যাতে দেবী তাদের শিশুদের সুন্দর মনে না করেন!

গুটি বসন্তে আক্রান্ত শিশু
গুটি বসন্তে আক্রান্ত শিশু

আর এক্ষেত্রে ভারতীয়দের দেবী ছিল ‘শীতলা’। ‘শীতলা’ একই সাথে মঙ্গল ও অমঙ্গলের দেবী। তারা মনে করত শীতলা দেবীর ডান হাতে থাকে ঝাড়ু যা দিয়ে তিনি রোগ ছড়িয়ে দেন আর তার বাম হাতে থাকে ঠাণ্ডা পানির পাত্র যা দিয়ে তিনি রোগ সারিয়ে দেন। দেবীর সন্তুষ্টির জন্যে বাড়ির মহিলারা ঘরের চালার উপর ঠাণ্ডা খাবার ও পানি রেখে দিত।

পশ্চিম আফ্রিকার নাইজেরিয়ার ইউরোবা জনগোষ্ঠীর ধর্মের নাম ‘ইউরোবা । এই ধর্মের লোকেরা মনে করতো ‘সপোনা’ দেবতার অসন্তুষ্টির কারণে তাদের গুটিবসন্ত হয়। সমাজে সপোনা নামটি উচ্চারণ করাও ছিল কঠোর নিষেধ। কারণ এতে দেবতার অসম্মান হয়। দেবতার সন্তুষ্টির জন্যে পূজা করতো পুরোহিতরা। লোকজন পুরোহিতদের প্রচুর সম্মান করতো। ধীরে ধীরে লোকজন ধরে নেয় যদি পুরোহিতরা রাগান্বিত হয় তাহলে তারাও গুটিবসন্ত ছড়িয়ে দিতে পারে। কারণ পুরোহিতরা দেবতার খুব কাছের লোক! পরে দেখা গেলো পুরোহিত ব্যাটারা নিজেরা ইচ্ছে করেই গুটিবসন্তের খোসপাঁচড়া দিয়ে লোকদের মাঝে রোগ ছড়িয়ে দিত!! জাপান, ইউরোপ, আফ্রিকাসহ পৃথিবীর আরও অনেক জায়গায় এ ধরণের বিশ্বাস প্রচলিত ছিল।

কিন্তু এত কিছুর পরেও যা হবার তাই হতো। তারা রোগে ভুগে মারা যেত, কিন্তু তাদের দেবীরা তাদের রোগ থেকে রক্ষা করতো না। সত্য ছাড়া যেহেতু মুক্তি নেই তাই তারা সেই কুসংস্কারের বেড়াজালে ঘুরপাক খেত।

The Croods’ মুভিতে ‘Guy’ যেভাবে Croods দের পথ দেখিয়েছিল, যেভাবে Croods দের অন্ধকার থেকে আলোতে এনেছিল, জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে ছিল, সেই ভূমিকা এখানে পালন করল বিজ্ঞানীরা। তারা আবিস্কার করল রোগ সৃষ্টির কারণ। আবিস্কার করলো রোগ প্রতিরোধের উপায় টিকা বা Vaccine.

ধারণা করা হয় ১৬ শতকের আগেই চীন বা ভারতে টিকা দেয়ার প্রচলন শুরু হয়। যদিও তা এখনকার টিকা ছিল না। সর্বপ্রথম ১৭৯৬ সালে টিকা আবিস্কার করেন এডওয়ার্ড জেনার। তিনি এক গোয়ালিনীর কাছ থেকে জানতে পারেন তার কখনও গুটিবসন্ত হয় নি কারণ তার আগে গোবসন্ত হয়েছিল। জেনার গোয়ালিনীর এই তথ্যকে তার পরীক্ষায় ব্যবহার করেন। জেনার আট বছর বয়সী এক ছেলের বাহুতে গোবসন্তের ফুস্কুড়ি প্রবেশ করান। ফলে ছেলেটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর ছেলেটি আর কখনও গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয় নি। কিন্তু এটি কিভাবে কাজ করেছে এডওয়ার্ড তা জেনার জানতেন না।

পরবর্তীতে এ পাস্তুর বের করেন কিভাবে এ পদ্ধতিটি কাজ করে। পাস্তুর এর নাম দেন ভ্যাক্সিন। ভ্যাক্সিন নামটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘Vacca” যার মানে গরু। জেনারের কাজের প্রতি সম্মান দেখিয়ে পাস্তুর এই নামটি রাখেন। পাস্তুর রেবিস ও এন্থ্রাক্সের টিকা আবিস্কার করেন। টিকা আবিস্কারের ক্ষেত্রে অন্যতম একজন ব্যক্তিত্ব হলেন Maurice Hilleman। তিনি হাম, মাম্পস, হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, জলবসন্ত, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা আবিস্কার করেন।

এখন চলুন জেনে নেই কিভাবে টিকা কাজ করে। মানুষের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি বৈশিষ্ট্য হলো আমাদের দেহে বাহির থেকে কোন কিছু প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে এবং এর সাথে বস্তুটিকে চিনে রাখে যাতে পরবর্তীতে এটি প্রবেশ করলে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেটিকে নিস্ক্রিয় করে দিতে পারে। দেহের এ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে যদি নির্দিষ্ট রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করা যায় তাহলে আমরা পরবর্তীতে সেই রোগে আক্রান্ত হব না। টিকার মাধ্যমে এই কাজটিই করা হয়। এখন আমরা দেখব কি দিয়ে ভ্যাক্সিন তৈরি করা হয়। যে রোগের ভ্যাক্সিন দেয়া হয় সে রোগের জীবাণুটি মেরে কিংবা তার রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা নষ্ট করে জীবিত অবস্থায় অথবা জীবাণুর অংশ বিশেষের রোগ সৃষ্টির ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেহে প্রবেশ করানো হয়। ফলে দেহ অণুজীবটিকে বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে এবং অণুজীবটিকে চিনে রাখে। ফলে অণুজীবটিকে নিস্ক্রিয় করার অ্যান্টিবডি শরীরে তৈরি হয়ে যায়। তাই পরবর্তীতে সেই রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে দেহ জীবাণুটিকে চিহ্নিত করে মেরে ফেলে।

টিকা কয়েক প্রকারের হতে পারে। এক প্রকারের টিকা হলো মৃত অণুজীব দিয়ে তৈরি, আর কিছু টিকায় জীবিত অণুজীবটিই ব্যবহার করা হয় কিন্তু তার রোগ তৈরির ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে অণুজীবের অংশ-বিশেষ ব্যবহার করা হয়। সেই ক্ষেত্রে সেই অংশ-বিশেষের রোগ তৈরির ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া হয়। আরও কয়েক ধরণের টিকা আছে। যেমনঃ ডিএনএ টিকা, সাবইউনিট টিকা, কনজুগেট টিকা, পলিসেকারাইড টিকা, আউটার টিকা।

এখন আমরা দেখি কিভাবে টিকা তৈরি করা হয়। প্রথমে এন্টিজেন তৈরি করা হয়। ভাইরাসকে প্রাথমিক কোষ যেমন মুরগির ডিম অথবা ধারাবাহিক কোষ (Continuous Cell) যেমন মানুষের কোষের কালচারে তৈরি করা হয়। আর ব্যাকটেরিয়াকে তৈরি করা হয় বায়োরিয়েক্টরে। আবার ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার রিকম্বিনেন্ট প্রোটিনকে ইস্ট, ব্যাকটেরিয়া কিংবা কোষের কালচারে দিয়ে এন্টিজেন তৈরি করা যেতে পারে। রিকম্বিনেন্ট প্রোটিনের ক্ষেত্রে সেটিকে আলট্রাফিকেশন ও কলাম ক্যামোথেরাপির মাধ্যমে শুদ্ধ করা হয়। অবশেষে এর সাথে সহযোগী বস্তু (Adjuvant), স্টেবিলাইজার ও রাসায়নিক সংরক্ষক (Preservative) ব্যবহার করে টিকা তৈরি করা হয়। সহযোগী বস্তু অ্যান্টিজেনের কার্যকারিতা বাড়ায়, স্টেবিলাইজার এটিকে বেশি সময় সংরক্ষণে সাহায্য করে। আর রাসায়নিক সংরক্ষক টিকাকে অন্য কোন কিছু দিয়ে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। ১৯২৮ সালে ডিপথেরিয়ারটিকা দেয়ার ফলে ১২ জন শিশু মারা যায়। কারণ টিকায় রাসায়নিক সংরক্ষক না থাকার কারণে তাতে স্টেফাইলোকক্কাস ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল। সাধারণত বেশ কয়েক ধরণের রাসায়নিক সংরক্ষক ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি হলো থাইয়োমারসল, ফিনক্সিইথানল এবং ফরমালডিহাইড। থাইয়োমারসল ব্যাকটেরিয়ার বিপক্ষে বেশ কার্যকর হলেও যুক্তরাষ্ট্র , ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সহ বেশ কয়েকটি দেশে শিশুদের ভ্যাক্সিনে থাইয়োমারসল নিষিদ্ধ। এতে মার্কারি থাকার কারণেই এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অনেকে বলে থাইয়োমারসল ব্যবহারের ফলে অটিজম হয়। যদিও এই বক্তব্যের পক্ষে কোন নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

পৃথিবী থেকে এ পর্যন্ত একমাত্র যে রোগটি ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে নির্মূল হয়েছে সেটি হচ্ছে গুটিবসন্ত। সর্বশেষ ১৯৭৭ সালে সোমালিয়ায় গুটিবসন্ত দেখা গিয়েছিল। WHO ২০০০ সালের মধ্যে পোলিও রোগ নির্মূলের লক্ষ্যসীমা ঠিক করেছিল। লক্ষ্যসীমাটি পূর্ণ না হলেও পোলিও এখন প্রায় নির্মূলের পথে। এখন পোলিও আফগানিস্তান, ভারত, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যেই কেবল সীমাবদ্ধ।

টিকা মানবজাতিকে নানা প্রাণঘাতী রোগ থেকে মুক্তি দেয়ার পরও কিছু কিছু মানুষ শুরু থেকেই টিকার বিরোধিতা করে আসছে। তারা বলে থাকে টিকা আসলে কোন কাজই করে না। রোগ তার স্বাভাবিক নিয়মেই নাকি নির্মূল হয়ে যায়! সাথে বলা হয় টিকা শরীরের জন্যে নিরাপদ নয়। আর একটি বড় কারণ দেখানো হয় টিকার ব্যবহার নাকি স্রষ্টার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার শামিল! ব্যাপারটা একটু পরেই খুলে বলছি।

ব্রাজিলের বাধ্যতামূলক ভ্যাক্সিনেশনের বিপক্ষে কার্টুন। ১৯০৪ সালে
ব্রাজিলের বাধ্যতামূলক টিকাদান কর্মসূচীর বিপক্ষে কার্টুন। ১৯০৪ সালে

জেনার গুটিবসন্তের টিকা আবিস্কারের আগে Edmund Massey নামের একজন ইংরেজ ধর্মতত্ত্ববিদ বলেন, ‘ঈশ্বর রোগ দেন পাপীদের শাস্তি দেয়ার জন্যে। তাই টিকা দিয়ে রোগ প্রতিরোধ শয়তানের কাজ’। একইভাবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তালেবানরা ফতোয়া দিয়েছে, টিকা নেয়া মানে আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া। বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে নাইজেরিয়ার কিছু মুসলিম ধর্মীয় নেতা তাদের অনুসারীদের শিশুদের পোলিও টিকা খাওয়াতে নিষেধ করেন। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে নাইজেরিয়াসহ পার্শ্ববর্তী দেশে পোলিও ছড়িয়ে পড়ে। অনুসারীরা পোলিও’র সাথে সাথে অন্য টিকা নেয়াও বন্ধ করে দেয়। ফলে নাইজেরিয়ায় শুধুমাত্র ২০০৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ২০০০০ জন হাম রোগী পাওয়া যায়। যার মধ্যে প্রায় ৬০০জন মারা জান। একইভাবে ২০০৬ সালে পৃথিবীর মোট পোলিও’র অর্ধেক পাওয়া যায় কেবল নাইজেরিয়াতেই।

আবার কিছু খ্রিষ্টান বিরোধীরা বলতেন, ‘ঈশ্বর ঠিক করেন কে গুটিবসন্তে মারা যাবে। তাই টিকা দেয়া ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া। যা পাপের শামিল’ আরেক গোষ্ঠী হলো ইসরাইলের Haredi Burqa Sect সম্প্রদ্বায়। তারা কোন চিকিৎসাতেই বিশ্বাস করে না। টিকা তো দূরের কথা! এগুলো শোনার পর মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা এত পথ অতিক্রম করার পর, এত জ্ঞানের আলো জ্বালানোর পর কি সেই Croods দের মত মিথের জগতেই পরে আছি?!

বিভিন্ন ধর্মে স্বর্গকে বর্ণনা করা হয়েছে রোগ-জরা মুক্ত জায়গা হিসেবে। আর টিকা এই ধুলোমাখা পৃথিবীতে কাজ করছে রোগ নির্মূলের লক্ষ্যে। সেক্ষেত্রে টিকাকে স্বর্গীয় আশীর্বাদ বললে মনে হয় না খুব একটা দোষ হবে!

-সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ
অনুজীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.