সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্ক গবেষণায় বড় একটি অগ্রগতি সম্পন্ন করেছেন। তাঁরা কৃত্রিমভাবে গবেষণাগারে মানুষের মধ্যমস্তিষ্ক বা mid-brain তৈরি করেছেন। এর ফলে মস্তিষ্ক ও মস্তিষ্কজাত বিভিন্ন রোগব্যাধি সম্পর্কিত গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যাবে তুলনামূলকভাবে সহজে। যেমন পার্কিনসন বা বার্ধক্যজনিত রোগের গবেষণা করা সম্ভব হবে কৃত্রিম এই মস্তিষ্ক দিয়ে।
উল্লেখ্য মোটা দাগে মানুষের মস্তিষ্ককে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এরা যথাক্রমে পশ্চাতমস্তিস্ক (hind-brain), মধ্যমস্তিষ্ক, ও অগ্রমস্তিষ্ক (fore-brain) ফোর ব্রেইন। এদের মাঝে ক্ষুদ্র অংশ মিড ব্রেইন বা মধ্য মস্তিষ্ক তৈরি করেছে বিজ্ঞানীরা। মধ্য মস্তিষ্ককে বলা যায় তথ্যের হাইওয়ে। মানব দেহের অনেক তথ্য এর মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়াজাত হয়ে যায়। এটি নিয়ন্ত্রণ করে শ্রবণ-ইন্দ্রিয়, চোখের নড়াচড়া, দেখার ক্ষমতা, অঙ্গ সঞ্চালন ইত্যাদি। মধ্য মস্তিষ্কের অংশটিতে dopaminergic neurons নামে একধরনের নিউরনের উপস্থিতি আছে যা দেহের জন্য ডোপামিন তৈরি করে। ডোপামিন মানব মনে প্রেম-ভালোবাসা ও আবেগ-অনুভূতির সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এটি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। যেমন বিভিন্ন গ্রন্থি বা পেশী সঞ্চালনের জন্য মোটর নিউরন নিয়ন্ত্রণ করা, প্রেরণা-উদ্দীপনা নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি।
ডোপামিনের উৎপাদন বেশি হলে শরীর ও মনের জন্য ইতিবাচক কাজগুলো করা যায় সহজে। পুরো শরীর থাকে পরিবেশের অনুকূলে। কিন্তু এর পরিমাণ যদি কমে যায় তাহলে নেতিবাচক ফলাফল দিতে পারে। এর ফলে জন্ম নিতে পারে অনুভূতিহীন Parkinson’s Disease (PD) এর মতো রোগ। এই রোগের জন্য উন্নত ও উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা। সিঙ্গাপুরের গবেষকদের তৈরি করা কৃত্রিম মস্তিষ্ক এই রোগের গবেষণায় একটা মাইলফলক হতে পারে। কারণ জীবন্ত মানুষের মস্তিষ্ক তো আর যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করা যাবে না। কৃত্রিম মস্তিষ্ক হতে পারে ভালো একটি বিকল্প। যেমন নতুন কোনো ওষুধ তৈরি করলে তা ঝুঁকি নিয়ে আর জীবন্ত রোগীকে খাইয়ে পরীক্ষা করতে হবে না, অনিশ্চিত এই পরীক্ষাটি কৃত্রিম মস্তিষ্কেই করে ফেলা যাবে।
এই কাজের জন্য বিজ্ঞানীরা স্টেম কোষ ব্যবহার করেছেন। স্টেম কোষকে মস্তিষ্কের অঙ্গাণু হিসেবে বেড়ে উঠতে দিয়েছেন। সব মিলে এরা প্রায় ২ থেকে ৩ মিলিমিটার লম্বা। ক্ষুদ্র হলেও এই অংশটি মানব মস্তিষ্কের অনেক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এদের মাঝে আছে dopaminergic neuron এবং নিউরোমেলানিন। পারকিনসন্স রোগ নিয়ে গবেষণা করতে এগুলোর প্রয়োজন পড়বে।
গবেষণার সাথে যুক্ত গবেষক Duke-NUS Medical Schoo এর অধ্যাপক Shawn Je বলেন “এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা যে আমাদের তৈরি করা কৃত্রিম মধ্য মস্তিষ্ক স্বাভাবিক মস্তিষ্কের মতোই বেড়ে উঠেছে। কোষগুলো বিভাজিত হয়েছে, স্তরে স্তরে সজ্জিত হয়ে ক্লাস্টার গঠন করছে এবং স্বাভাবিক মস্তিষ্কের মতোই ত্রিমাত্রিক পরিবেশে তারা রাসায়নিক ও বৈদ্যুতিকভাবে সক্রিয়। এখন নতুন কোনো প্রতিষেধক ওষুধ সরাসরি মানুষের মাঝে প্রয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষা না করে এর মাঝে প্রয়োগ করে পরীক্ষা করা যাবে। যা ওষুধ শিল্পের উন্নয়নে বিপ্লব বয়ে আনবে।”
– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ