প্রথম বারের মতো বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশারা মুরগী বা মুরগী জাতীয় কিছু প্রাণীকে এড়িয়ে চলে। মুরগির পালকে এমন কিছু উপাদান আছে যা মশাদেরকে দূরে রাখে। মশাদের গন্ধের অনুভূতি আছে এবং ঐ অনুভূতির মাধ্যমে মশারা মুরগির বিশেষ উপাদান শনাক্ত করতে পারে। মুরগির এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে মানুষ মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে পারে।
উল্লেখ্য ম্যালেরিয়া রোগ মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ম্যালেরিয়ার জীবাণুকে তার জীবনচক্র সম্পন্ন করতে হলে মশকীর দেহ প্রয়োজন হয়। মাধ্যম হিসেবে মশকীর দেহ না পেলে ম্যালেরিয়া বেড়ে উঠতে পারে না। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত কোনো রোগীকে যদি কোনো মশা কামড়ায় তাহলে মশা তাতে আক্রান্ত হয়ে যায় এবং নিজের দেহে ম্যালেরিয়াকে বেড়ে উঠার পরিবেশ তৈরি করে দেয়। আক্রান্ত মশা পরবর্তীতে যে সুস্থ মানুষকে কামড়াবে তারা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবে।
ইথিওপিয়ার Addis Ababa University ও সুইডেনের Swedish University of Agricultural Sciences এর কিছু গবেষক মিলে মশা ও মুরগির এই বিশেষ দিকটি খুঁজে পেয়েছেন। Anopheles arabiensis নামে একধরনের মশকী সাহারার দক্ষিনের আফ্রিকায় ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে থাকে। মানুষ, গবাদি পশু, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি প্রাণীকে এরা আশ্রয় হিসেবে নেয়। এসব প্রাণীতে তাদের জন্য উপযুক্ত উপাদান আছে। মুরগি সহ আরো কিছু প্রজাতি আছে যারা এসব মশকীর জন্য দরকারি উপাদান ধারণ করে না। এরা মশাদের জন্য উপযুক্ত নয়। মশারাও তাদেরকে এড়িয়ে চলে। আর মশারা তাদের শনাক্ত করার কাজটি করে তাদের গন্ধ শনাক্ত করার ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে। Malaria Journal-এ প্রকাশিত তাদের গবেষণা প্রবন্ধ এমনটাই বলছে।
গবেষণা দলের প্রধান রিকার্ড ইগনেল বলেন “আমরা খুব অবাক হয়েছিলাম মুরগির গা থেকে নিঃসরিত গন্ধ হতে ম্যালেরিয়াবাহী মশকীরা দূরে থাকে দেখে।”
এই গবেষণার জন্য গবেষকরা মশাদের গ্রহণ করা রক্তের বিশ্লেষণ করেন। এই কাজটা দুই ভাগে ভাগ করে সম্পন্ন করেন। একটা অংশ গৃহের ভেতরের মশা পর্যবেক্ষণ আরেকটা অংশ বাইরের মশা পর্যবেক্ষণ। বাইরের মশাদের ৬৩% গ্রহণ করে গবাদি পশুর রক্ত। অর্থাৎ তাদের দেহে গবাদি পশুর রক্ত পাওয়া গেছে। ২০% মানুষের রক্ত, ৫% ছাগলের রক্ত ও ২.৬% ভেড়ার রক্ত। এদের সবার মাঝে মাত্র একটা মশা পাওয়া গেছে যার পেটে মুরগির রক্ত পাওয়া গিয়েছিল।
গৃহের ভেতরের মশাদের বিশ্লেষণ করার জন্য মানুষের পাশাপাশি কিছু পশু ও মুরগিকেও রাখা হয় ভেতরে। এতে দেখা যায় মানুষের রক্ত সবার উপরে, ৬৯%। গবাদি পশু ১৮%, ছাগল ৩.৩% ও ভেড়া ২%। কোনো মশাতেই মুরগির রক্ত পাওয়া যায়নি। তার উপর মশারা যেখানে মানুষের রক্ত সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে সেখানে মানুষের পাশে খাঁচায় করে মুরগি রেখে দিলে মশারা সেখান থেকে দূরে থাকে। গবেষকরা দেখেছেন এর জন্য দায়ী মুরগির দেহ থেকে নিঃসরিত এক ধরনের গন্ধ।
এই গবেষণাটি ভালোভাবেই করা হয়েছে। অল্প কিছু নমুনা থেকে তথ্য নিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হননি তাঁরা। এর জন্য গবেষকরা ৬ হাজার ৭০০ মানুষ, ১০ হাজার গবাদি পশু, ৩ হাজার ২০০ মুরগি ৮৫০ টি ছাগল এবং ৪৮০ টি ভেড়া রাখেন একসাথে। মশারা এদের সবাইকেই কামড়ানোর সুযোগ পায়।
এই গবেষণায় সম্ভাবনার দিকটি হচ্ছে, ভবিষ্যতে মশাদের তাড়ানোর জন্য এই গবেষণা কৌশল কাজে লাগানো যেতে পারে। মুরগির গা থেকে ছড়ানো গন্ধকে ব্যবহার করে এমন কিছু হয়তো তৈরি করা যাবে যা মশাকে দূরে রাখবে।
-সিরাজাম মুনির শ্রাবণ