মাসের ব্যবধানে সবুজ থেকে লাল হয়ে গেছে ইরানের উর্মিয়া হ্রদ

0
573

ইরানের উর্মিয়া হ্রদে ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততার জন্য সেখানে এমন কিছু অণুজীবের বিকাশ ঘটেছে যারা লাল রঙের রঞ্জক বর্ণকণিকা ধারণ করে। লবণাক্ত পরিবেশ এসব অণুজীবের টিকে থাকতে ও অধিক হারে বংশবৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে।

এই হ্রদটি ইরান ও তুরষ্কের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত । ২০১৬ সালের এপ্রিলের ২৩ তারিখে স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায় উর্মিয়া হ্রদ একদম সবুজ। মাত্র কয়েক মাসের ভেতর ঐ হ্রদের চেহারা একদম পালটে যায়। জুলাইয়ের ১৮ তারিখে তোলা ছবিতে দেখা যায় ঐ হ্রদের উপরিপৃষ্ঠ একদমই লালচে হয়ে উঠেছে। অনেকটা রেড ওয়াইন বা রক্তের বর্ণের মতো, যা আগের অবস্থা থেকে একদমই ভিন্ন।

বিজ্ঞানীদের মতে গ্রীষ্মে পানির পরিমাণ যখন কমে যায় তখন পানিতে মিশ্রিত লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ লবণের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এক গ্লাস পানিতে লবণ মিশিয়ে নিলে লবণের যে ঘনত্ব হবে ঐ পানিকে তাপে কিছুটা শুকিয়ে নিলে লবণের ঘনত্ব কিছুটা বেড়ে যাবে। উর্মিয়া লেকে এমনটিই ঘটেছিল। কিছু অণুজীব আছে এরা লবণাক্ত পরিবেশে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে। উর্মিয়া হ্রদে উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে ঐসব অণুজীব ছড়িয়ে পড়েছিল। এরা আবার সবুজ ক্লোরোফিলের বদলে লাল রঙের এক ধরনের বর্ণকণিকা ধারণ করে যার কারণে লেকের উপরিতলকে রক্তাভ বলে মনে হয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন হালোব্যাকটেরিয়েসি (Halobacteriaceae) নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া গোত্র এবং ডুনালিয়েলা (Dunaliella) নামে এক ধরনের শৈবাল গোত্র লেকের রক্তাভ রঙ তৈরি করে থাকতে পারে।

Dunaliella salina নামে এক ধরনের শৈবাল আগেও এই এলাকায় এরকম রক্ত বর্ণ তৈরি করেছিল, বলছেন স্টুটগার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী মোহাম্মদ তুরিয়ান। তিনি বলছেন “উপযুক্ত পরিমাণ লবণের পাশাপাশি অধিক পরিমাণ সূর্যালোকের উপস্থিতি থাকলে ক্ষুদ্র শৈবালগুলো লাল বর্ণের হয়ে যায়। কারণ তখন তাদের কোষের ক্লোরোপ্লাস্টে ক্লোরোফিলের বদলে ক্যারোটিনয়েড নামে এক ধরণের বর্ণ কণিকা উৎপন্ন হয় যা লাল রঙের।” এই লাল কণিকার উপস্থিতিতে পুরো এলাকা লাল হয়ে যায়।

স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি, রক্তিম হয়ে গেছে উর্মিয়া লেক।
স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি, রক্তিম হয়ে গেছে উর্মিয়া লেক।

বাংলাদেশেও বিভিন্ন পুকুরে এমনটি দেখা যায়। মাঝে মাঝে পানিতে অধিক পরিমাণ সার প্রয়োগ করলে পানি লাল বর্ণ ধারণ করে। সবুজ ব্যতীত এই ধরণের ব্যতিক্রমী কণার উপস্থিতির কারণেই রঙ বেরঙের ফুলের অস্তিত্ব আছে। লাল হলুদ সাদা ইত্যাদি রঙের ফুল উদ্ভিদ কোষে বর্ণকণিকার বৈচিত্র্যের কারণেই হয়।

যাহোক, মোহাম্মদ তুরিয়ানের বক্তব্যের পাশাপাশি নাসা আরেকটি ব্যাখ্যা দিচ্ছে। এ নিয়ে নাসা একটি বিবৃতিও প্রদান করেছে। বিবৃতিতে নাসা বলছে লবণপ্রেমী ব্যাকটেরিয়া Halobacteriaceae এর কারণেও লাল রঙ হতে পারে। এরা চুনিলাল রঙের এক ধরনের কণিকা উৎপন্ন করে। তাদের পরিমাণ যদি যথাযথ পরিমাণ বেশি হয় তাহলে তারা একটি এলাকাকে লাল করে দিতে পারে। নাসার আর্থ অবজারভেটরি স্যাটেলাইট টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই ছবিগুলো তোলা হয়েছিল।  [Live Science অবলম্বনে]

– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.