বৃহস্পতির উচ্চ তাপমাত্রার জন্য দায়ী বিখ্যাত লাল স্পটগুলো

0
756

সূর্য থেকে দূরে অবস্থান করা একটি গ্রহ হিসেবে বৃহস্পতির তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবে যে পরিমাণ হবার কথা ছিল সে তুলনায় বাস্তবে এর তাপমাত্রা কয়েকশো ডিগ্রি পরিমাণ বেশি। অনেকদিন ধরে এর কারণ অনিশ্চিত ছিল। তবে জ্যোতির্বিদরা এখন জানেন কেন বৃহস্পতির তাপমাত্রা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি।

হাওয়াইতে অবস্থিত নাসার ইনফ্রারেড টেলিস্কোপের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে গ্রহটির উচ্চ তাপমাত্রার জন্য দায়ী এর বিখ্যাত লাল দাগগুলো। এই দাগগুলোকে Great Red Spot বা সংক্ষেপে GRS বলা হয়। একটি যৌথ ব্রিটিশ-আমেরিকান টিম এর পেছনে গবেষণা করে দেখেছেন GRS এ যে পরিমাণ তাপমাত্রা আছে এবং এসব অঞ্চল যেরকম আচরণ করে তা গ্রহটির উচ্চ তাপমাত্রার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারে। উল্লেখ্য বৃহস্পতির তাপমাত্রা ৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পৃথিবী বা সূর্যের কাছে অবস্থান করা ছোটখাটো গ্রহগুলোর পৃষ্ঠের ও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা সূর্যের বিকিরণের উপর নির্ভর করে। যে গ্রহ সূর্যের কাছাকাছি এবং পৃষ্ঠের উপর সূর্যের বিকিরণের মাত্রা বেশি সে গ্রহের তাপমাত্রা বেশি। বিকিরণের মাত্রা কম হলে গ্রহের তাপমাত্রাও কম হবে। গ্রহদের নিজস্ব বা আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া সূর্যের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। কিন্তু সৌর-পরিবারের বাইরের দিকের গ্রহগুলোর তাপমাত্রা ঐসব গ্রহের আভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। নিজস্ব প্রক্রিয়া সহজেই সূর্যের প্রভাব কাটিয়ে নিজের উপর কার্যকর হতে পারে।

গবেষকদল একটি সিমুলেশনের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, যদি শুধুমাত্র সূর্যের তাপই এখানে প্রাধান্য বিস্তার করতো তাহলে বৃহস্পতির তাপমাত্রা আজকে বরফের হিমাঙ্কের নিচে থাকতো। কিন্তু এর তুলনায় বৃহস্পতির তাপমাত্রা অত্যধিক বেশি। গবেষকরা এই অমীমাংসিত সমস্যা নিয়ে কাজ করেছেন এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখেছেন এত তাপমাত্রার উৎস কোথায়। অবশেষে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে এর পেছনে দায়ী আসলে লাল স্পটগুলো। ঐ গ্রহের তাপের বণ্টন ও তাপের সঞ্চলন নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এমনটিই জানিয়েছেন তারা।

নাসার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে গ্রহ থেকে নির্গত ইনফ্রারেড বিকিরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তারা দেখতে পান গ্রহটির দক্ষিণ অঞ্চলের তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত বেশি। ঐ অঞ্চল থেকে তাপমাত্রা অন্য অঞ্চলে সঞ্চলিত হয়। এবং ঐ অঞ্চলেই বিখ্যাত লাল দাগ বা ফুটকী বা GRS-গুলো বিদ্যমান।

GRS গুলো বৃহস্পতির জন্য ব্যতিক্রমী ও শক্তিশালী এক ধরনের উপাদান। এগুলো বৃহস্পতিকে অনন্যতা প্রদান করেছে। দাগগুলো এত বড় যে এদের ভেতর পৃথিবীর সমান দুটি গ্রহ অনায়াসে স্থান করে নিতে পারবে। এগুলো মূলত বৃহস্পতির ঘূর্ণিঝড় বা হ্যারিকেন। সৌরজগতের সবচেয়ে বড় হারিকেন সংঘটিত হয় বৃহস্পতিতে। হ্যারিকেনের ঘূর্ণনের কারণেই এগুলো অনেকটা গোলাকার হয়ে থাকে।

বৃহস্পতির স্পটগুলো মূলত অতি বিশাল ঘুর্ণীঝড়।
বৃহস্পতির স্পটগুলো মূলত অতি বিশাল ঘুর্ণীঝড়।

প্রকাণ্ড এই অঞ্চলগুলো শক্তির উৎস হিসেবেও প্রকাণ্ড। বৃহস্পতির অভ্যন্তরে উৎপন্ন হওয়া শক্তিগুলোকে সরাসরি গ্রহের পৃষ্ঠে ছড়িয়ে দেয় এই GRS গুলো। উল্লেখ্য প্রতিটা সক্রিয় গ্রহের অভ্যন্তরেই শক্তি উৎপন্ন হয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরেও এই ধরনের শক্তি উৎপন্ন হয়। পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ শক্তিগুলো অভ্যন্তরেই থাকে। অল্প স্বল্প কিছু শক্তি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত বা লাভা নির্গমনের মাধ্যমে বের হয়ে আসে।

বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার অন্যান্য গ্যাসীয় গ্রহের আচরণ অনুধাবন করতেও সাহায্য করবে। [iflscience অবলম্বনে]

– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.