মানুষ হয়তো ভাবতে পারে তারা সেই প্রস্তুর যুগেই আগুন জ্বালানোয় দক্ষতা অর্জন করেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কয়েক লক্ষ বছর পরে এই যুগেও আগুন নিয়ে বিভ্রান্তি এবং মুগ্ধতা রয়ে গেছে। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের একদল গবেষক সম্প্রতি একটি গবেষনাপত্রে নতুন একধরনের আগুনের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন যা এর আগে দেখা যায় নি। নীল ঘুর্নী নাম দেওয়া এই আগুনের শিখা পুরোপুরি নীল এবং পানির পৃষ্ঠের উপরে খুব দ্রুত পাক খেতে থাকে।
গ্লেন এল. মার্টিন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং এই গবেষনার একজন সহ-গবেষক একটি বিবৃতিতে বিষয়টি ব্যখ্যা করেন। তিনি বলেন, “গতানুগতিক হলুদ আগুনের শিখাতেও নীল বর্ণ তৈরি হয়। হলুদ রং এর জন্য দায়ী বিকিরিত ধুলিকণা; যদি অগুন জ্বলার জন্য যথেষ্ট পরিমান অক্সিজেন না থাকে তাহলে জ্বালানীর সম্পূর্ন দহনের ফলে এধরনের ধুলিকণা বা ধোঁয়া তৈরি হয়। আগুনের নীল রং নির্দেশ করে এতে কোনো ধোঁয়া নেই বা থাকলেও খুব সমান্য পরিমানে আছে এবং জ্বালানী সুষমভাবে পুড়ছে।”
কিন্তু নতুন এই আগুনের ঘুর্ণী শুধু মাত্র একটি সুন্দর ছবি তোলার জন্য তৈরি করা হয় নি। এর মাধ্যমে প্রবাহী পদার্থের ঘুর্নীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষনা করা যাবে। গবেষকরা আরো মনে করেন, গবেষনাগারের বাইরেও দৈনন্দিন জীবনে এর প্রয়োগ রয়েছে। যেহেতু এ্ই আগুন একটি পরিচ্ছন্ন শিখা তৈরি করে, তাই তেল নিঃসরণজনিত দূষন প্রতিরোধে একে কাজে লাগানো যাবে।
এই গবেষনার একজন সহ-গবেষক এবং অধ্যাপক মাইকেল গোলনার ব্যখ্যা করেন, “আগুনের এই ঘুর্নী অন্য যেকোনো দহনের চেয়ে জ্বালানীকে আরো কার্যক্ষম উপায়ে পোড়ায় কেননা এই আগুন জ্বালানীর পৃষ্ঠের সুষম এবং তীব্র দহনের ফলে সৃষ্টি হয় এবং জ্বালানীর দহন আরো দ্রুত এবং সম্পূর্ণ হয়। পানির উপরে আমাদের এই পরীক্ষায় আমরা দেখেছি আগুনের এই ঘূর্নী কিভাবে আরো কার্যকরভাবে জ্বালানীকে টেনে নেয়। যদি আমরা উচ্চমাত্রায় এধরনের নীল ঘুর্নী তৈরি করতে পারি আমরা জ্বালানী পোড়ানো জনিত পরিবেশদুষন আরো ভালো ভাবে রোধ করতে পারব এবং তেল নিঃসরণ পরিষ্কার করতে পারব আরো সহজে“।
গবেষকগণ এখনো এই ধরনের নীল ঘূর্নী তৈরির পেছনের কার্যকারণ পুরোপুরি জানেন না, তবে তবু এই আগুনের কার্যকারীতা এবং পরিবেশের দুষনরোধের ক্ষমতায় বেশ উত্তেজিত। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও দেখুন নিচে। [Iflscience অবলম্বনে]