আমরা যখন বলি পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে, তখন আসলে পুরোপুরি সত্যি বলি না, দুটি বস্তুর একটি যখন অপরটির চারপাশে ঘোরে তখন অপরটিও প্রথম বস্তুর চারপাশে ঘোরে (চিত্র দ্রষ্টব্য)। তবুও আমরা বলিনা সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে, তার কারণ দুইয়ের ভরের পার্থক্য। দুটি বস্তুর ভরের পার্থক্য যত বেশি হবে একের সাপেক্ষে অপরের ঘুর্ণনের পরিধিতেও ততোই পার্থক্য থাকবে। সেই কারণে পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্য যখন ঘোরে তখন তা এতোই অকিঞ্চিৎকর যে তা কার্যত উপলব্ধি করা যায় না, এই ক্ষেত্রে সূর্যের বৃত্তাকার কক্ষপথ এমনকি তার নিজের ব্যসকেও অতিক্রম করে না। তবে বৃহস্পতির মতো বড়ো গ্রহের সাথে তুলনা করলে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। এই ক্ষেত্রে বৃহস্পতির সাপেক্ষে সুর্যের বৃত্তাকার কক্ষপথ তার ব্যসকে অতিক্রম করে। তাই বর্তমানে একদল বলতে চাইছেন বৃহস্পতি সূর্যের চারদিকে ঘোরে এটা বলা ঠিক না। বরং এরা একে অপরের চারদিকে ঘোরে।
গ্রহের প্রভাবে একটি নক্ষত্রের এই ধরনের গতিকে ঠিক কক্ষপথে ঘোরা বলা যায় না, বরং বলা যেতে পারে দোদুল্যমান অবস্থা। এই দোদুল্যমান অবস্থার একটি বড় গুরুত্ব আছে। নক্ষত্রের আলোয় গ্রহগুলো আলোকিত হয়, তাই এদের পৃষ্ঠ নিঃসৃত আলো হয় খুবই নিস্প্রভ। এই কারণে সৌরজগতের বাইরের কোনো গ্রহকে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে সরাসরি সনাক্ত করা যায় না, এই ক্ষেত্রে নক্ষত্রের উপর এর প্রভাবটি পর্যবেক্ষণ করা হয়। দোদুল্যমান নক্ষত্র যখন গ্রহের প্রভাবে সামান্য ঘুরতে থাকে তখন সে একসময় আমাদের কাছ থেকে সামান্য দূরে সরে যায়, এই সময় তার নিঃসৃত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়, আবার যখন আমাদের কাছে আসতে থাকে তখন তার নিঃসৃত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য হ্রাস পায়। একে ডপলার প্রভাব বলে। এই বিষয়টি শব্দের ক্ষেত্রেও পর্যবেক্ষণ করা যায়। আপনি ফুটপাতে হাঁটার সময় পেছন থেকে আপনার দিকে একটি এম্পুলেন্স এগিয়ে আসলে তার সাইরেন তীক্ষ্ণ শোনা যায় আবার এম্বুলেন্স আপনাকে অতিক্রম করে যখন দুরে সরে যায় তখন তার শব্দ ভোঁতা শোনায়।
নক্ষত্রের এই ডপলার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করে তাকে কেন্দ্র করে কতদূর দিয়ে গ্রহ ঘুরছে, সেই গ্রহের আকার কেমন এসব গণনা করা যায়। এভাবেই বোঝা যায় একটি নক্ষত্রের কতটা দূরত্বে একটি গ্রহ আবর্তন করলে তাতে তরল পানি পাওয়া যেতে পারে, এবং এ থেকেই সম্ভাব্য প্রাণ ধারণযোগ্য গ্রহ নির্ধারণ করা হয়। এ যাবৎ হাজারেরও অধিক এধরনের সৌরজগৎ বহির্ভুত গ্রহ সনাক্ত করা হয়েছে।
মহাবিশ্বে এমন অনেক নক্ষত্র এমনকি ব্ল্যাক হোলের ব্যবস্থা আছে যেখানে দুটি নক্ষত্র বা ব্ল্যাকহোলের ভর কাছাকাছি থাকে এবং এরা দুজনে একের অপরের চারদিকে অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি আকারের বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকে। এই ধরনের নক্ষত্র ব্যাবস্থাকে দ্বৈত নক্ষত্র ব্যবস্থা বলা হয়। বৃত্তাকারে ঘুর্ণনরত প্রতিটি বস্তুই গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ আকারে শক্তি নিঃসরণ করতে থাকে এবং বস্তু দুটি কাছাকাছি হতে থাকে। একসময় এরা খুব কাছাকাছি চলে আসে এবং বিপদজনক গতিতে ঘুরতে ঘুরতে পরস্পরের সাথে একীভূত হয়। এই কাছাকাছি অবস্থায় এরা তীব্র শক্তি নির্গত করে। এই ধরনের কাছাকাছি দুটি ব্ল্যাকহোলের দ্বৈত ব্যবস্থায় নির্গত মহাকর্ষীয় তরঙ্গই প্রথমবারের মতো কিছুদিন আগে সনাক্ত করা হয়েছিলো। এই তীব্র বিকিরিত অবস্থাতেও এদের নির্গত শক্তির পরিমান খুবই সামান্য। আমাদের পৃথিবীও ঘূর্ননরত অবস্থায় শক্তি বিকিরণ করতে করতে ক্রমশঃ ও অতি ধীরে সূর্যের নিকটবর্তী হচ্ছে। এটি এতোই ধীর যে, কয়েক কোটি বছরেও পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে উল্লেখযোগ্য কোনো দুরত্বের পার্থক্য তৈরি হবে না।
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
yeah