সৌরজগতের অন্যতম লাল, পাথুরে গ্রহ মঙ্গল। টেলিস্কোপের সাহায্যে পৃথিবী থেকে রাতের আকাশে তাকালে যাকে লাল বর্ণের, উপগ্রহ সমেত একটি চলমান বিন্দুর মতন দেখায়। মঙ্গলের ভূ-পৃষ্ঠ পাথুরে এবং ধূলো দিয়ে আবৃত। কিন্তু বিলিয়ন বছর পূর্বে মঙ্গলের বুক চিড়ে বয়েছে, আমাদের পৃথিবীর মতন-ই, উষ্ম জলধারা। ছিল নদী-নালা, বিশাল সমুদ্র। ছিল আমাদের পৃথিবীর মতন আবহাওয়া।
কিউরিসিটি রোভার, মঙ্গলে গবেষণারত পৃথিবী থেকে নিয়ন্ত্রিত রোবট, সম্প্রতি মঙ্গলের ভূ-পৃষ্ঠের গেইল খাদের উপরের পৃষ্ঠের পাথর ও ধুলি কণা গবেষণা করে সেখানে উচ্চ পার্সেন্টেজের ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইডের সন্ধান পেয়েছে। এই শিলাগুলো গঠিত হবার সময়কাল ২ থেকে ২.৫ বিলিয়ন বছর। বর্তমানে সেখানে আরও ব্যাপক গবেষণা করার জন্য গেইল খাদের পাশে একটি বেস ক্যাম্প বসানো হয়েছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন আরও বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে এই শিলার উপস্থিতি পাওয়া যাবে।
যখন এই শিলা গঠিত হয়েছে , তখন মঙ্গলে পৃথিবীর মতন পরিবেশ ছিল। কারণ ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড তৈরির শর্তই হচ্ছে বাতাসে উচ্চ পরিমাণে অক্সিজেন থাকতে হবে। তবে এখনও এটা নির্ধারণ করা কঠিন যে ঠিক কতটুকু পরিমাণ অক্সিজেন সেখানে ছিল। অক্সিজেনের প্রভাবে এই ধরণের শিলার সৃষ্টিকে বলা হয় গ্রেট অক্সিজেন ইভেন্ট (Great Oxigen Event)। এই গ্রেট অক্সিজেন ইভেন্টের কারণেই প্রাণ সৃষ্টির অনুকুল আবহাওয়া তৈরি হয়। যেখানে খুব ধীরে ধীরে কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে অক্সিজেনের রূপান্তর ঘটে। ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থিত উপাদান সমূহ যখন আর অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারেনা তখন বাকি মুক্ত অক্সিজেনগুলো, অক্সিজেন বেস বায়ুমন্ডল গঠনে লেগে পড়ে।
আমাদের পৃথিবীতে অক্সিজেনের উপস্থিতির কারণেই এই ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড যৌগটি রয়েছে সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ জুড়ে। মঙ্গলে এই শিলার উপস্থিতি ইঙ্গিত করে, সেখানেও একসময় অক্সিজেন বিশিষ্ট বায়ুমন্ডল ছিল, ছিল উষ্ম জলের প্রবাহ। যার কারণেই সৃষ্টি হয়েছে ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড। নাসার কিউরিসিটি রোভারের এ গবেষণা ফল সূচনা করেছে এক নতুন দিগন্তের। বিজ্ঞানীরা নতুনভাবে বিশ্লেষণ করতে শুরু করেছেন মঙ্গলকে। লাগাতার গবেষণা করে চলেছেন একদল বিজ্ঞানী মঙ্গলের গাঠনিক ইতিহাসকে আরও বিস্তারিতভাবে জানার জন্য।
-সাফায়েত আহমেদ