বেশ কয়েকদিন ধরেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই রেডিও টেলিস্কোপটি নিয়ে বিজ্ঞানপাড়ায় গুঞ্জন। অবশেষে এই টেলিস্কোপটির নির্মাণকাজ সম্পূর্ণরূপে সমাপ্ত করলো চীন। এই টেলিস্কোপটি প্রায় ৩০ টি ফুটবল মাঠের সমান। চীনের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের পাহারী এলাকার একটি প্রদেশে এর অবস্থান। ১৯৯৪ সালে চীনে এমন বৃহৎ আকৃতির একটি টেলিস্কোপ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করা হয় এবং ২০০৭ সালে জাতীয়ভাবে তার অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১১ সালে Five hundred meter Aperture Spherical Telescope বা সংক্ষেপে FAST এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এবছর জুলাইয়ে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় এবং এবছরের সেপ্টেম্বরেই এটিকে ব্যবহার করা হবে।
মহাবিশ্বের অমীমাংসিত ও রহস্যময় ব্যাপারগুলো নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য ব্যবহার করা হবে এই টেলিস্কোপটিকে, যেমন ব্ল্যাকহোল, পালসার, বহির্জাগতিক বুদ্ধিমান প্রাণী ইত্যাদি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করা হবে এটিকে ব্যবহার করে। এমনটাই জানিয়েছে চীনের সংবাদ সংস্থাগুলো।
১৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই টেলিস্কোপটি মহাশূন্য থেকে আসা বিভিন্ন রেডিও তরঙ্গ শনাক্ত করবে এবং এর শনাক্তকরণ এতটাই নিখুঁত হবে যা এর আগে পৃথিবীতে নির্মিত কোনো রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে সম্ভব হয়নি। এটি ব্যবহার করে মহাবিশ্বের একদম শুরুর দিকে এর উৎপত্তির রহস্য উদঘাটনেও ব্যবহার করা হবে। উৎপত্তির শুরুর দিকে মৌলিক কণার অবস্থা এবং সেই ধারা অনুযায়ী বর্তমান মহাবিশ্বের অবস্থা ইত্যাদি নিয়েও গবেষণা করা হবে এখানে।
এই টেলিস্কোপে নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে মোট ৪ হাজার ৬০০ টি ত্রিভুজ আকৃতির প্যানেল।
এটি ব্যবহার করে চীনের জ্যোতির্বিদরা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে হাইড্রোজেন গ্যাসের সার্ভে করা, পালসার সন্ধান করা এবং সম্ভাব্য বুদ্ধিমান সত্তা প্রেরিত রেডিও সিগনাল খুঁজে বেড়াতে পারবে। চীনের জন্য এই টেলিস্কোপটি একটি বড় ধরনের মাইলফলক। FAST প্রজেক্টের প্রধান নান রেনডং বলেছেন- চীনের সময় হয়েছে তার নিজের জন্য যথেষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন ও বড় আকৃতির একটি টেলিস্কোপ ব্যবহার করার। আর বিজ্ঞানের কোনো জিনিস মানেই সীমানাবিহীন। পৃথিবীর যেকোনো দেশে বিজ্ঞানের কোনো উন্নয়ন হলে সেটি আদতে সব দেশেরই উন্নয়ন। তার উপর এটি শুধু চীনের বিজ্ঞানীরাই ব্যবহার করবে এমন নয়, সমস্ত পৃথিবীর বিজ্ঞানীরাও প্রয়োজন অনুসারে এটি ব্যবহার করতে পারবে। এমনটাই জানিয়েছেন এই প্রজেক্টের প্রধান।
পৃথিবী এখন সিগনালবাহী যন্ত্রপাতিতে ভরে গেছে। মোবাইল টেলিভিশন সহ অনেক যন্ত্র আছে যারা বৈদ্যুতিক সিগনাল প্রেরণ ও গ্রহণ করে থাকে। রেডিও টেলিস্কোপের আশেপাশে এই ধরনের সিগনালের আনাগোনা থাকলে ব্ল্যাকহোল বা পালসার বা অন্য কোনোকিছু থেকে আসা তরঙ্গ নিখুঁতভাবে ধরা সম্ভব হবে না। পরিমাপে ত্রুটি থাকবে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য জনবহুল এলাকা থেকে অনেক দূরে এটি স্থাপন করা হয়েছে। মূলত তরঙ্গ দূষণ থেকে বাঁচতে সব ধরনের রেডিও টেলিস্কোপই জনপদ থেকে দূরে স্থাপন করা হয়। আলোক টেলিস্কোপকেও আলোক দূষণ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পাহাড়ের চুড়ায় উঁচু দালানের ছাঁদে স্থাপন করা হয়।
আশা করা যায় মহাবিশ্বের নানা অমীমাংসিত রহস্য ও মানবজাতির অস্তিত্বের আদিম জিজ্ঞাসাগুলোর উত্তর পেতে সাহায্য করবে এই টেলিস্কোপ। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় বিশাল ভূমিকা পালন করবে এই টেলিস্কোপ এমন আশাই করি আমরা। [Live Science ও IFLScience অবলম্বনে]
– সিরাজাম মুনির শ্রাবণ