অক্টোপাসের ডিএনএ এতোই অদ্ভুত যে একে ভিনগ্রহের বলে প্রতীয়মান হয়!

0
693

অক্টোপাসের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে এর যেই জীনোম পাওয়া যায় তাতে অদ্ভুতুড়ে বুদ্ধিমত্তার ছাপ লক্ষ্য করা যায়। এই ধরনের বুদ্ধিমত্তা কেবল মেরুদন্ডী প্রানীর ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অথচ জীনগতভাবে তথা বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অক্টোপাস মোরুদন্ডী প্রানীর চেয়ে অনেকটাই পৃথক।

চোষকের সারিযুক্ত আটটি কর্মক্ষম শুঁড়, ক্যামেরার মতো চোখ, শরীরব্যাপী ক্যামোফ্ল্যাজের সাজসজ্জা এবং অদ্ভুতুড়ে বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অক্টোপাস দুনিয়ার অন্য যেকোনো জীবের চেয়ে ব্যতীক্রম। এইসব পার্থক্যের সাথে যদি এর অস্বাভাবিক বিশাল জিনোম যুক্ত করা যায় তাহলে মোলাস্কা পর্বভুক্ত এই প্রানীটিকে ভিন্ন গ্রহের বিবর্তিত কোনো প্রানী বলেই মনে হয়।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর নিউরোবায়োলজিস্ট ক্লিফটন র‌্যাগসডেল কৌতুক করে বলেন, “এটাই এলিয়েন জাতীয় কোনো প্রাণীর প্রথম জিনোম সিকোয়েন্স।” এই জিনোম সিকোয়েন্সের কাজটি বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ মিলে করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলি, জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব হাইডেলবার্গ এবং জাপানের ওকিনাওয়া ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি। তাছাড়া গবেষকগণ অক্টোপাসের ১২ টি টিস্যুর জিনের কর্মকান্ডও উদঘাটন করেছেন।

হিব্রু ইউনিভার্সিটি অব জেরুজালেমের নিউরোবায়োলজিস্ট বেনি হকনার বলেন, “এই জিনোম সিকোয়েন্সিংটি খুবই গুরুত্বপূর্ন। কারণ এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কেমন করে অক্টোপাসের এমন অনন্যোসাধারণ বুদ্ধিমত্তার উদ্ভব ঘটেছে।” হকনার দীর্ঘ ২০ বছর ধরে অক্টোপাস নিয়ে গবেষনা করছেন। গবেষকগণ জানতে চান, সেফালোপড জাতীয় মোলাস্ক পর্বভুক্ত একটি প্রানীর কেমন করে এতটা চালাক হতে পারে যাতে করে তারা জটিল গোলকধাঁধার সমাধান করে মজাদার খাবার কাঁকড়ার কাছে পৌঁছে যেতে পারে।

বিশাকার জিন পরিবার:

বিষ্ময়করভাবে, অক্টোপাসের জিনোমের আকার প্রায় মানুষের জিনোমের সমান এবং এতে আরো বেশি সংখ্যক প্রোটিন কোড করার জিন- প্রায় ৩৩,০০০ হাজারটি বিদ্যমান, অথচ মানুষের প্রোটিন কোড করার জিন রয়েছে ২৫,০০০ এর চেয়ে কম।

র‌্যাগসডেল বলেন এই মাত্রাতিরিক্ত ফলাফল বিশেষ কিছু জিনপরিবারের বিবর্ধিত কর্মকান্ডের ফল। এর মধ্যে একটি বিশেষ গ্রুপ হলো প্রোটোক্যাঢেরিন, যা স্নায়ু কোষ এবং নিজের মধ্যে স্বল্পপাল্লার মিথষ্ক্রিয়া নিয়ন্ত্রন করে। অক্টোপাসের এই ধরনের ১৬৮ টি জিন রয়েছে যা স্তন্যপায়ীর চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি। এগুলো অক্টোপাসের অস্বাভাবিক বড় মস্তিষ্ক এবং অঙ্গসমূহের আভ্যন্তরীন গঠনের সাথে ঐকতান স্থাপন করে। অক্টোপাসের ৫০ কোটি নিউরনের- যা ইঁদুরের চেয়ে ছয়গুন বেশি, দুই তৃতীয়াংশ এর মাথা থেকে শুড়ের দিকে বিন্যাস্ত, যাতে মেরুদন্ডী প্রানীর স্পাইনাল কর্ডের মতো কোনো দীর্ঘ রজ্জু নেই। এর ফলে এর শুঁড়গুলোতে স্বাধীন গণনার ক্ষমতা তৈরি হয় যার ফলে শুড় গুলো এমনটি আলাদা হয়ে গেলেও বেশ ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা চালাতে পারে। এই ধরনের কর্মকান্ড নমনীয় রোবট তৈরি নিয়ে গবেষনারত গবেষকদের অক্টোপাস নিয়ে কাজ করতে উৎসাহ তৈরি করে। হকনার এমনই একজন রোবোটিস্ট গবেষক।

জিংক ফিঙ্গার ট্রান্সক্রিপশন সংক্রান্ত একটি জিন পরিবার উন্নয়নের সাথে জড়িত, যা অক্টোপাসের মধ্যে অধিকতর হারে দেখা যায়। ১৮০০ টি জিন নিয়ে গঠিত এই পরিবারটি প্রানীজগতের মধ্যে দ্বিতীয়। প্রথমটি হলো হাতি, যার এধরনের জিন রয়েছে ২০০০ টি।

এই বিশ্লেষণে আরো দেখা যায় শতশত বিশেষায়িত জিন বিশেষ বিশেষ টিস্যুতে প্রকাশিত রয়েছে যা শুধু অক্টোপাসেই পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অক্টোপাসের চোষকে এমন জিনগুচ্ছ রয়েছে যা নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে। এ্রর ফলে এদের চোষকের মাধ্যমে স্বাদগ্রহনের ক্ষমতা তৈরি হয়।

গবেষকগণ অক্টোপাসের চামড়ায় ছয়টি জিন প্রকাশিত দেখতে পেয়েছেন যারা রিফ্লেক্টিন নাম প্রোটিন তৈরির সাথে জড়িত। এই প্রোটিনগুলো অক্টোপাসের চামড়ায় আলোর প্রতিফলন পরিবর্তন করে বিভিন্ন বর্ণ তৈরি করতে পারে, এর ফলে অক্টোপাসের বিভিন্ন ধরনের ছদ্মবেশ পদ্ধতির একটি তৈরি হয়। অন্য পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে এর চামড়ার টেক্সচার, বিন্যাস ও উজ্জ্বলতা।

নিজের গুহা থেকে উঁকি দিচ্ছে একটি তরুন অক্টোপাস
নিজের গুহা থেকে উঁকি দিচ্ছে একটি তরুন অক্টোপাস

আরেকটি আবিষ্কার অক্টোপাসের বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি সম্বন্ধে ধারনা দেয়। এর জিনোমের মধ্যে এমন ব্যবস্থা রয়েছে যার ফলে টিস্যুগুলো প্রোটিনের মধ্যে পরিবর্তন তৈরি করে তাদের কর্মকান্ড বদলে ফেলতে পারে। ইলোক্ট্রোফিজিওলজিস্টদের ধারনা এই ক্ষমতার ফলেই অক্টোপাস তাদের স্নায়বিক নেটওয়ার্কের মধ্যে অন্যসাধারণ শিখন পদ্ধতি এবং স্মৃতিগঠন আয়ত্ত করতে পারে। [nature.com অবলম্বনে]

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.