আমাদের সমুদ্রগুলো আবর্জনায় পূর্ণ। মানুষের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টির সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাগুলোর একটি হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় আবর্জনার স্তুপ। এটি আবর্জনাপূর্ণ একটি বিশাল ঘুর্নী যা প্লাস্টিক এবং অন্যান্য সামুদ্রিক আবর্জনায় পূর্ণ এবং আকারে একটি সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণভাবে বললে, প্লাস্টিক পুরোপুরি পচে যেতে ৪৫০ বছর লেগে যেতে পারে এবং আমরা প্রতিনিয়ত অধিকতর হারে এগুলো সমুদ্রে নিক্ষেপ করছি- কাজেই সহসাই এসব সামুদ্রিক আবর্জনার স্তুপ নির্মূল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
যদিও এই আবর্জনাগুলো পরিস্কার করা এবং আরো বেশী পরিমানে যাতে না জমে তা বন্ধ করার প্রতিই আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ তবে এসবের পাশাপাশি বিজ্ঞান আরো কিছু উদ্যোগ তৈরি করেছে যার মাধ্যমেও এসব হতে নিঃষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব। সম্প্রতি Science Advances জার্নালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের একটি যৌথগবেষক দল একটি গবেষনা প্রকাশ করেছেন যাতে এই ধরনের প্লাস্টিক আবর্জনাকে জ্বালানীর উৎসে পরিণত করার কথা বলা হয়েছে।
প্লাস্টিকসমুহ কার্বন-অক্সিজেন-হাইড্রোজেন পরমাণুর লম্বা চেইনের মাধ্যমে গঠিত হয়, যা জীবাষ্ম জ্বালানী থেকে প্রস্তুত হয়, এই বিষয়টিই এই গবেষণার মূলনীতি। তাই বিপরীতপ্রক্রিয়ায় প্লাস্টিকসমূহকে একধরনের জীবাষ্ম জ্বালানীতে পরিণত করা সম্ভব হতে পারে। গবেষকগণ তাঁদের গবেষনা পলিইথিলিনের উপর কেন্দ্রীভুত করেছেন। এটি সবচেয়ে বহুল প্রচলিত প্লাস্টিক বস্তুগুলোর একটি এবং এটি সরল আণবিক গঠন বিশিষ্ট। চাইনিজ একাডেমী অব সায়েন্সের গবেষক এবং এই গবেষনাদলের নেতৃস্থানীয় জিয়াংকিং জিয়া বলেন, “পলিইথিলিন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত প্লাস্টিক, যা বছরে ১০০ মিলিয়ন মেট্রিকটন উৎপাদিত হয়।”
পলিইথিলিন প্রাকৃতিকভাবে ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য অস্বাভাবিক দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয় এবং কোনো বস্তুর সাথে বিক্রিয়া করতে তীব্র পরিস্থিতির প্রয়োজন হয়, যা এদেরকে জ্বালানীতে রূপান্তরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সাধারণ উচ্চতাপ প্রয়োগে কাজ হবে না, কেননা এতে আনবিক চেইনগুলো বিশৃঙ্খলভাবে ভেঙ্গে যাবে এবং বিভিন্ন ছোট ছোট উপাদানে বিভক্ত হয়ে পড়বে, যাদের ভিন্ন ভিন্ন রাসায়নিক ধর্ম থাকবে। এই বিষয়টি আমলে নিয়ে গবেষকগণ প্রভাবক প্রয়োগ করেন। প্রভাবক হলো সেই বস্তু যা বিক্রিয়াকালে উপস্থিত থেকে নিজে অপরিবর্তিত থাকে কিন্তু রাসায়নিক বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধি করে।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক