কিছুদিন আগে বিরল বোম্বাই বা h/h রক্তের গ্রুপ বিশিষ্ট এক বাংলাদেশীর চিকিৎসার জন্য মুম্বাই থেকে চারজন ভারতীয় রক্ত পাঠিয়েছিলেন। এটি যেহেতু একটি বিরল রক্ত তাই এটি কোনো ব্লাড ব্যাংকে জমা রাখা হয় না, শুধু তা-ই নয় প্রচলিত ABO গ্রুপ ব্যবস্থার পরীক্ষা পদ্ধতিতে এই গ্রুপ সনাক্তও হয় না। অথচ অন্য কোনো গ্রুপের রক্ত এই গ্রুপের রোগীকে দেওয়া হলে পরিণাম হবে ভয়াবহ। এ সম্বন্ধে একটি ছোটখাট নোট নিন্মরূপ:
h/h ব্লাডগ্রুপ বা Oh ব্লাড গ্রুপ কিংবা বোম্বাই ব্লাড গ্রুপ একধরনের বিরল রক্তের গ্রুপ। এই রক্তের গ্রুপটি ড. ওয়াই. জি. ভেন্ডে ১৯৫২ সালে তৎকালীন বোম্বাই বা বর্তমান মুম্বাইতে আবিষ্কার করেন।
প্রথম যথন এই ধরনের বিরল রক্তের গ্রুপ বিশিষ্ট রোগীটিকে সনাক্ত করা হলো তা অন্যান্য গ্রুপের রক্তের সাথে অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া দেখালো। এই রক্তের সেরাম অন্যান্য ABO গ্রুপের রক্তের লোহিত কণিকার সাথে ক্রিয়া করে। তবে এই রক্তের লোহিত কণিকা ABO গ্রুপের কোনো এন্টিজেন ধারন করে না বরং অজানা একধরেন এন্টিজেন পোষন করে।
O রক্তের গ্রুপে বিদ্যমান H এন্টিজেনটি h/h গ্রুপের (বোম্বাই গ্রুপের) রক্তের পাওয়া যায় না যার ফলে এধরনের রক্তে A এন্টিজেন বা B এন্টিজেন উৎপাদন করা যায় না (কেননা এই দুটি এন্টিজেন H এন্টিজেন থেকে উৎপন্ন হয়)। এই কারণে বোম্বাই রক্তের গ্রুপ বিশিষ্ট দাতাগণ ABO রক্তের গ্রুপ বিশিষ্ট্য সবাইকে লোহিত রক্ত কণিকা দান করতে পারেন। তবে অবশ্যই এই ক্ষেত্রে রেসাস ফ্যাক্টর (অর্থাৎ Rh+ বা Rh-) আমলে নিতে হবে। কিন্তু এই রক্তের ব্যক্তিগণ ABO ব্যবস্থার কারো কাছ থেকে রক্ত নিতে পারেন না (এসব গ্রুপে অবশ্যই A অথবা B বা উভয়ই অথবা H এন্টিজেন থাকে)।
কাজেই যেহেতু বোম্বাই রক্তের গ্রুপ বিশিষ্ট ব্যক্তির শরীরে ইতিপূর্বে এই এন্টিজেনগুলো অনুপস্থিত ছিলো তাই এধরনের রক্ত শরীরে প্রবেশ করলে এই এন্টিজেনগুলোর প্রতি রোগ প্রতিরোধ জনিত কারণে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং জটিলতা দেখা দেয়। তার চেয়ে ভয়ঙ্কর সমস্যা হলো এই ধরনের রক্তের গ্রুপ শনাক্ত করার জন্য বিশেষ পরিক্ষার প্রয়োজন, কেননা সাধারন ABO গ্রুপ পরীক্ষায় এধরনের রক্ত O হিসেবে দেখা যায়।
এই বিরল রক্তের গ্রুপটি মানব জনসংখ্যার ০.০০০৪% এর মধ্যে বিদ্যমান, অর্থাৎ প্রতি এককোটিতে ৪০ জন। তবে মুম্বাইয়ের মতো কিছু স্থানে এর পরিমান আরো বেশি, প্রতি ১০০০০ জনে ১ জন বোম্বাই রক্তের গ্রুপ বিশিষ্ট।
H জিনের দুটি প্রচ্ছন্ন অ্যালীলের উপস্থিতি থেকে এধরনের বিরল রক্তের গ্রুপ তৈরি হয়। বিভিন্ন সময় যেমন বিরল জীনগত বৈশিষ্ট সম্পন্ন জীব দেখা যায় এটিও তেমনই।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক