নিজের বাসস্থান রক্ষার্থে আত্মঘাতী বোমা দিয়ে জাবপোকার শত্রু নিধন!

0
995

শেক্সপীয়ারের নাটকের রাজা পঞ্চম হেনরি যখন তার সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন: “আরো একবার, প্রিয় বন্ধুরা, আরো একবার ঐ প্রাচীরের ফাটল দিয়ে আক্রমনকারী শত্রুদের আঘাত কর; অথবা আমাদের ইংরেজ যোদ্ধাদের মৃতদেহ দিয়ে প্রাচীরের ফাটলগুলো বন্ধ করে দাও”, সম্ভবত তিনি আক্ষরিক অর্থে এই চিন্তাটা করেননি। তবে যাই হোক, কিছু জাবপোকা (aphid), ইংরেজ বা অন্য কোন জাতির হোক না কেন, ঠিক এই কাজটিই করে থাকে। প্রায় সময় নিজের জীবনের বিনিময়ে তারা শরীর থেকে তরল নিক্ষেপ করে তাদের বাসস্থানের দেয়ালের ফাটল মেরামত করে অন্য পোকামাকড়দের আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়। এই পদ্ধতির প্রাণরাসায়নিক ভিত্তির অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জাবপোকার বিবর্তনের উপর আলোকপাত করেছেন।

সামষ্টিক মঙ্গলের উদ্দেশ্যে সামাজিক প্রাণীর আত্মত্যাগের ব্যাপারটি প্রানীবিজ্ঞানীদের জন্যে বেশ আগ্রহের বিষয়। মৌমাছি এবং অন্যান্য কিছু প্রানী বিবর্তনের স্থুল বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকার করে। বিবর্তনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী টিকে থাকার জন্যে স্বার্থপরতা সর্বাগ্রে প্রয়োজন এবং অন্যের প্রতি দয়াবান ও যত্নবান হওয়া ভুল অভিযোজনের নামান্তর। যদিও বা এই পদ্ধতির বিবর্তনীয় সুবিধাগুলি এখন ভালভাবে বোঝা যায়, এই ধারা কীভাবে সৃষ্টি হল, তা আরো রহস্যময়।

জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এর ডঃ মায়াকো কাতসুকেক জাবপোকাদের মধ্যে “আত্মঘাতী বোমা হামলা” নামে পরিচিত এই রকম এক সামাজিক আচরণ পর্যবেক্ষন করেছেন। হাজার হাজার জাবপোকা উইচ-হেজেল গাছের গল (সাধারনত পাতার নিচের অংশে দৃশ্যমান ছোট ছোট অসংখ্য সাদা রঙয়ের গুটিকা) এ বাস করে নিজেদের বৈরী আবহাওয়া ও শিকারীদের কাছ থেকে আত্মরক্ষা করে।

কাতসুকেক জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমীর কার্যবিবরনীতে লিখেছেন যে, যখন প্রজাপতি এবং মথের শূককীট গল বা গুটিকার দেয়াল ভাঙতে সফল হয়, “যোদ্ধা জাবপোকারা ফেটে গিয়ে প্রচুর পরিমানে শরীরের তরল স্রাব ছড়িয়ে দেয়, এবং তাদের পায়ের সাহায্যে এই তরল স্রাবটি গাছের ক্ষতস্থানে মিশিয়ে প্লাস্টারের মত জোড়া লাগিয়ে দেয়।” জাবপোকারা এই প্রক্রিয়াতে তাদের দেহের ক্ষতিজনিত কারনে মত্যুবরন না করলেও, অন্য জবপোকার দেহ নিঃসৃত রস দ্বারা শ্বাসরোধ হয়ে বা সুরক্ষা দেওয়ালের ভুল পাশে অবস্থানের কারনে মারা যেতে পারে।

কাতসুকেক এবং তার সহ-লেখকগণ খুঁজে পেয়েছেন যে, জাবপোকার শরীরের গহ্বরে এমন লিপিড রয়েছে যা দেহ থেকে বেরুনোর পর কঠিন আকার ধারন করে। জাবপোকার দেহের পৃথক অংশে সংরক্ষিত প্রোটিন এবং অ্যামিনো এসিড টাইরোসাইন একত্রিত হয়ে বৃহদ অনু গঠন করে, যা এই দেহ নিঃসৃত স্রাবকে কঠিন আকার পেতে সাহায্য করে।

জাবপোকাদের এই পদ্ধতি অনুসরণ করে সম্ভবত আমরা একদিন আরও ভাল জলরোধী আঠা তৈরির উপায় খুঁজে বের করতে সক্ষম হব, তবে ইতিমধ্যে কাতসুকেক এর অতীত নিয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। বাসস্থান সংরক্ষন করতে যে অনুর ব্যবহার করা হয়, সাধারন জাবপোকারা সেই একই অনুগুলো রোগ প্রতিরোধ বা নিজ দেহের ক্ষতস্থান সারানোর কাজে ব্যবহার করে। তবে, যোদ্ধা জাবপোকারা বহিঃশত্রুর আক্রমণ ঠেকাতে এই অনুগুলো প্রচুর পরিমানে উৎপাদন করে।

জীববিজ্ঞানীগণ প্রানীদের নিজ গোত্র রক্ষার এই প্রক্রিয়াকে “সামাজিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তারা একক আত্মরক্ষার বিকল্প হিসেবে বৃহত্তর সম্প্রদায়ের প্রতিরক্ষার বিষয়টি প্রত্যাশা করেননি। কাতসুকেকের কাজটি দেখায় যে জাবপোকাদের এবং সম্ভবত অন্যান্য সামাজিক পতঙ্গের মধ্যে ও এই দুই ধরণের প্রতিরোধ ব্যবস্থা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

জাবপোকারা নিশ্চিতভাবেই রাসায়নিক যুদ্ধের বিশেষজ্ঞ। অন্যদিকে, ভিন্ন প্রজাতির কীটপতঙ্গেরা এই কৌশল ব্যবহার করে পিঁপড়দের বোকা বানিয়ে তাদের বাসস্থানে নিয়ে যায় এবং তাদের দেহাভ্যন্তরীণ তরল শুষে নেয়। [iflscience অবলম্বনে]

-পুলক বড়ুয়া

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.