ডিএনএতে আবিষ্কৃত হলো দ্বিতীয় আরেকটি স্তরের তথ্য

0
639

তাত্ত্বিক পদার্থবিদগণ ডিএনএতে দ্বিতীয় আরেকটি স্তরের তথ্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। ডিএনতে নাইট্রোজেন বেসগুলোর বিন্যাসের মাধ্যমেই তথ্য সংরক্ষণের বিষয়টি আমরা জানি- কিন্তু অন্যভাবেও ডিএনতে তথ্য থাকতে পারে; ডিএনএর ভাঁজ হওয়ার বিন্যাসের মাধ্যমে- যা আমাদের শরীরে জিনের প্রকাশ নিয়ন্ত্রন করে।

এই বিষয়য়ে জীববিজ্ঞানীরা বেশ কিছু বছর ধরে অবগত আছেন এবং তাঁরা সনাক্ত করতে পেরেছেন যে কিছু প্রোটিন ডিএনএর ভাঁজ হওয়ার জন্য দায়ী। কিন্তু কিছু পদার্থবিদ সম্প্রতি এই বিষয়টি কম্পিউটারে সিমুলেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন এবং দেখিয়েছেন কেমন করে এই গুপ্ত তথ্য আমাদের বিবর্তন নিয়ন্ত্রন করছে।

নিচের দিকের শ্রেনীগুলোতেই আমরা শিখে এসেছি ওয়াটসন এবং ক্রিক ১৯৫৩ সালে ডিএনএর ডিসূত্রক প্যাঁচানো গঠনটি আবিষ্কার করেছেন। সেই থেকে আমরা জেনে এসেছি ডিএনএর যাবতীয় কোডগুলো G, A, C, T এই অক্ষরগুলো দিয়ে তৈরি। এই অক্ষরগুলোর নানাবিদ সজ্জা ও বিন্যাসই নির্ধারণ করে আমাদের দেহে কোন প্রোটিনগুলো তৈরি হবে। যদি আপনার চোখের রং হয় বাদামী তাহলে এর কারণ হচ্ছে আপনার ডিএনএতে এই অক্ষরগুলোএর একটি বিশেষ ধরনের সজ্জা যা আপনার চোখের আইরিশে বাদামী বর্নের প্রোটিন উৎপাদনের নির্দেশনা দেয়।

কিন্তু এটিই গল্পের পুরোটা নয়। কারণ আপনার শরীরের প্রতিটি কোষ একই সুনির্দিষ্ট ডিএনএ বহন করে, কিন্তু তবু প্রতিটি অঙ্গ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এবং ভিন্ন ভিন্ন কাজ করার জন্য গঠিত হয়। আপনার পাকস্থলীর কোষগুলোর বাদামী বর্ণের চোখের প্রোটিন তৈরি করার প্রয়োজন নেই বরং এদের প্রয়োজন হজম করার জন্য এনজাইম তৈরি। তাহলে এই কাজটি কিভাবে ঘটে?
আশির দশক থেকেই বিজ্ঞানীরা জানেন দেহের কোষে ডিএনএর বিশেষভাবে ভাঁজ হওয়ার প্রক্রিয়া থেকেই এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়। পরিবেশগত বিষয়গুলোও এই প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারে, যেমন: মানাসিক চাপ থেকেও শরীরের বিভিন্ন জিনের কার্যক্রম চালু বা বন্ধ হতে পারে, এধরনের বিষয় এপিজেনেটিক্স নামে পারিচিত।

কিন্তু ডিএনএর ভাঁজ হওয়ার পদ্ধতি খুব গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রন প্রক্রিয়া। কেননা আমাদের দেহের প্রতিটি কোষ প্রায় দুই মিটার ডিএনএ ধারন করে, তাই কোষে আঁটাতে হলে একে শক্তভাবে একটি স্পুলের মতো করে বান্ডিলাকারে ভাঁজ করতে হবে। এই বান্ডিলগুলো নিউক্লিওজোম নামে পরিচিত।

এবং ডিএনএর এই ভাঁজ হওয়ার পদ্ধতির মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয় কোনো একটি কোষে ডিএনএর কোন জিনগুলো ‘পড়া’ হবে এবং সেই অনুযায়ী প্রোটিন তৈরি হবে। স্পুলের ভিতরের দিকের জিনগুলো পড়তে পারার সুযোগ নেই, কেবল বাইরের দিকের জিনগুলোই পড়া সম্ভব। এ থেকেই বোঝা যায় কেন বিভিন্ন কোষে একই ডিএনএ বিদ্যমান থাকা সত্বেও একেক কোষে একেক ধরনের প্রোটিন তৈরি হয়।

এখন পর্যন্ত বুঝতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তাত্ত্বিক পদার্থবিদগন আসলে কি করেছেন? নেদারল্যান্ডের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী  পুরো প্রক্রিয়াটিকে জিনোম স্কেল থেকে পর্যবেক্ষন করেছেন এবং কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে এই ভাঁজহওয়ার পদ্ধতি ডিএনএর মধ্যেই কোড করা রয়েছে।

হেলমুট সিয়েজেল এর নেতৃত্বে এই বিজ্ঞানীর দল বেকারীর ইস্ট এবং ফিশন ইস্টের সিমুলেশন করেন এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে এগুলোতে দ্বিতীয়মাত্রার ডিএনএর তথ্য দেন যার মাধ্যমে এই ভাঁজ হওয়ার তথ্য পরিপূর্ণ হয়। তাঁরা দেখাতে সক্ষম হোন যে এই দ্বিতীয় মাত্রার তথ্যই নির্ধারণ করে কিভাবে ডিএনএগুলো স্পুলে সজ্জিত হবে- এবং কোন প্রোটিনগুলো উৎপন্ন হবে। এ থেকে বোঝা যায় ডিএনএর এই দ্বিতীয় মাত্রার তথ্যগুলো, ডিএনএর অন্য কোডের মতোই আমাদের বিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এ থেকে বোঝা যায়, ডিএনএর মিউটেশন একের অধিকভাবে কাজ করতে পারে এবং আমাদের বিবর্তনের প্রভাব রাখতে পারে; প্রথমতঃ ডিএনএর অক্ষরগুলোর পরিবর্তন করার মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়ত: ডিএনএর ভাঁজ হওয়ার পদ্ধতি পরিবর্তনের মাধ্যমে।

-বিজ্ঞানপত্রিকা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.