একটি নতুন প্রকাশিত পর্যবেক্ষন প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন, কিভাবে ৩১ বছর বয়সী একজন আপাত সুস্থ মানুষকে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর এম্বুলেন্সে করে তাদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছিল।
জরুরী বিভাগে আনার পর ঐ ব্যাক্তির খিঁচুনি হয়, এবং শারীরিক পরীক্ষায় দেখা যায় যে তিনি বিভ্রান্ত, অবসাদগ্রস্থ এবং অবচেতন অবস্থায় ছিলেন।
পরবর্তীতে তিনি প্রকাশ করেন যে, বেশ কয়েকদিন ধরে তার মাথাব্যাথা এবং বমি বমি ভাব ছিল। সেই সময়ে তিনি কোনকিছুর নাম মনে রাখতে পারছিলেন না। এছাড়া, গত পাঁচ বছর ধরে তিনি “বাম কানে থেমে থেমে ব্যথা এবং শ্রবণশক্তি হারানোর” কথা ও ডাক্তারদের জানান।
ডাক্তারেরা তার খুলিতে সিটি স্ক্যান চালিয়ে মস্তিষ্কের চারপাশের কলাতে পুঁজ ভর্তি অনেক ফোঁড়া আবিষ্কার করেন, এবং তার কান থেকে নিঃসৃত স্রাব এই সংক্রমণের মূল কারণ সিউডোমোনাস এরেগিনোসা নামক একটি বিপজ্জনক রোগ সৃষ্টিকারী উপাদানকে সনাক্ত করতে সহায়তা করে।
এই ক্ষেত্রে চিকিৎসক দলটি মনে করেন পি আউরুগিনোসা মানুষটির এই অবস্থার জন্য দায়ী, যা বহিঃ-কর্ন কলার মৃত্যুজনিত প্রদাহ (এনওই) নামে পরিচিত। এই অবস্থায় মানুষের শ্রবণ গহ্বরের বহিরভাগের (ইএসি) কলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
কিন্তু এই ভয়ঙ্কর ব্যাকটেরিয়া ঐ মানুষের খুলির ভিতরে গেল কিভাবে?
একটি ছোট শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্য উত্তরটির খোঁজ পাওয়া গেল। কটন বাডের ছোট একটা অংশ ঐ ব্যাক্তির কানে আটকে ছিল। যদি তার কান ব্যাথা এবং শ্রবণ হ্রাসের লক্ষণগুলি আমলে নেয়া হয়, তাহলে সম্ভবত কয়েক বছর ধরে ঐ কটন বাডের টুকরোটি ঐখানে আটকে ছিল।
গবেষকরা তাদের রিপোর্টে ব্যাখ্যা করেন যে, ইএসি এর ভিতরে কোনকিছু আটকে পড়ার কারনে বহিঃ-কর্ন কলার মৃত্যুজনিত প্রদাহ সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, যা “সাঁতারুর কান” নামেও পরিচিত। কিন্তু এটি যে এনওই সৃষ্টির কারণ ও হতে পারে তার কোন হদিস খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সৌভাগ্যক্রমে রোগীর কান হতে কটন বাডের অংশ অপসারন এবং আট সপ্তাহ ধরে তাকে প্রচুর এন্টিবায়োটিক দেয়ার ফলে সে সম্ভাব্য বেশ বড়সড় স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা এড়াতে সক্ষম হয়েছে।
লেখক আরো জানান যে, “এন্টিবায়োটিকের কোর্সের সমাপ্তি শেষে, রোগী বেশ ভালই ছিল। তার স্নায়ুতন্ত্রের বা কান থেকে নিঃসৃত স্রাব সংক্রান্ত উপসর্গগুলির কোন সমস্যা দেখা যায়নি”।
“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, কান পরিষ্কার করার জন্য তিনি আর কটন বাড ব্যবহার করছেন না!”
যদিও ঐ ব্যাক্তির এই কঠিন বিপত্তিটি কিছুটা হাসির খোরাক হতে পারে, গবেষকরা বলছেন যে, ঐ ব্যাক্তির অভিজ্ঞতাটি আমাদের কাছে আরেকটি সদ্য প্রমাণ, যেন কেউ কখনোই কানে কিছু না ঢোকায়, এমনকি কান পরিষ্কার করার জন্যে ও না। প্রকৃতপক্ষে, কান পরিষ্কার করার কোন প্রয়োজনই নেই।
প্রতিবেদনটি আরো জানায় যে, “কানের ভিতরে কটন বাডের ব্যবহার একটি সাধারণ ব্যাপার। এবং এর ব্যবহার দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, কানের পর্দা ফেটে যাওয়া, কানের ময়লার কারনে সৃষ্ট প্রদাহ, সংক্রমণ এবং কটন বাডের অবশিষ্টাংশ থেকে যাওয়ার মত ব্যাপারগুলোর মূলকারণ বলে দীর্ঘকাল ধরে স্বীকৃত”।
-পুলক বড়ুয়া