সুখবরটি হল যে, আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সময় আরো বেগবান হয় না। কিন্তু খারাপ খবরটি হল, বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্কের প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষমতা কমতে থাকার কারনে আমাদের এরকম মনে হয়। এ সপ্তাহে ইউরোপীয় রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণা পত্রে এই দাবী করা হয়েছে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনে হতে থাকে বালি-ঘড়ির বালি অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে উপরের প্রকোষ্ট হতে নিচের প্রকোষ্টে পড়তে শুরু করে আমাদের সবাইকে এক অনিবার্য পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাড্রিয়ান বেজান তার গবেষনায় এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, “ঘড়ির সময়” এবং “মনের সময়” এর মধ্যে বৈপরীত্য আমাদের এই ভ্রান্তির জন্যে দায়ী।
একটি বিবৃতিতে বেজান বলেন, “মানুষের মন তখনই সময়ের পরিবর্তন অনুধাবন করতে পারে যখন অনুধাবিত চিত্রগুলি পরিবর্তিত হয়”। অন্যভাবে বলতে গেলে, “বর্তমান, অতীতের থেকে আলাদা মানসিক দৃষ্টিভংগি পরিবর্তিত হওয়ার কারনে, ঘড়ির সময়ের কারনে নয়”।
গবেষণা পত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, “মানুষের মনের দ্বারা অনুধাবিত চিত্রগুলির পরিবর্তনের যে গতি, তা বয়স বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হ্রাস পেতে থাকে,” এবং যেহেতু শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে প্রতি সেকেন্ডে বেশি পরিমানে মানসিক চিত্র গ্রহণ করতে এবং প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম, তাই শিশুদের দিনগুলি অনেক বেশি দীর্ঘ মনে হয়।
মানুষের চোখ ক্রমাগতভাবে সঞ্চরণশীল এবং একটি চিত্র প্রক্রিয়াজাত শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে চোখ অন্য আরেকটি চিত্রের দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। মানুষের চোখ যখন কোন নির্দিষ্ট চিত্রের দিকে স্থিরভাবে তাকিয়ে থাকে, তখন চোখের এই দ্রুত সঞ্চরনশীলতাকে “স্যাকাড” বা চোখের ঝটকা বলা হয়। এই সঞ্চরনশীলতার মাঝে মাঝে চোখ অল্প সময়ের বিরতি দেয় যাকে ফিক্সেশন বা স্থিরতা বলে।
পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে গড় প্রাপ্তবয়স্কদের চোখ প্রতি সেকেন্ডে তিন থেকে পাঁচটি স্যাকাড তৈরি করে যার মাঝখানে থাকে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিসেকেন্ডের ফিক্সেশন। গবেষনায় আরো দেখা গেছে যে, শিশুদের ক্ষেত্রে ফিক্সেশনের সময় আরো উল্লেখযোগ্যভাবে কম। যার কারনে শিশুরা আরো অনেক বেশি স্যাকাড তৈরি করতে এবং প্রতি সেকেন্ডে আরো বেশি চিত্র গ্রহন করতে সক্ষম।
ফিক্সেশনের সময়ের এই পরিবর্তনের কারণটি হল, যখন আমরা বুড়ো হতে থাকি, তখন আমাদের মস্তিষ্কের রেটিনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রক্রিয়াজাত করতে আরও বেশি সময় লাগতে শুরু করে। বেজানের মতে, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা ক্রমবর্ধমানভাবে জটিল স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ঘটাই। যার মানে হল, মস্তিষ্কের পৃথক অংশগুলিতে পৌঁছানোর জন্য সংকেতগুলির আরও অনেক বেশি পথ ভ্রমণ করতে হয়। তাছাড়া, স্নায়ুপথের ক্ষতির কারনে অনেক বেশি বাঁধার মুখে পড়ে এই বৈদ্যুতিক সংকেতগুলির গতি আরো হ্রাস পায়।
একটি সমান্তরাল ব্যাখ্যা হতে পারে যে, আমরা আমাদের জীবনকে দেখি একটা সময়ের সাপেক্ষে চিত্র দেখার মত। প্রতি সেকেন্ডে যত বেশি চিত্র ধারন করা হবে, সময়ের গতি তত বেশি ধীর মনে হবে। কিন্তু আমরা যখন প্রতিটি চিত্রের মধ্যে সময়ের ব্যবধান বাড়াতে শুরু করি তখন প্রতিটি ফ্রেমের মধ্যে আরো বেশি পার্থক্য ঘটতে থাকে এবং এতে করে ঘটনাগুলি বেশ দ্রুত ঘটছে বলে এক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। [iflscience অবলম্বনে]
-পুলক বড়ুয়া
Enhanced my knowledge