টেলিভিশন: তখন এবং এখন

1
622

গত একশ বছরে টেলিভিশন নানাভাবে আকার এবং আকৃতি বদলেছে। নিচের ভিডিওতে ১৯২০ সাল হতে আজ পর্যন্ত টেলিভিশনের বিবর্তন দেখানো হবে।

১৯২০

১৯২০ সালের টেলিভিশন ছিলো যান্ত্রিক। প্রথম মডেলটিতে ডানপাশে একটি ছোট পর্দায় ছিলো টেলিভিশন এবং তার সাথে বিরাটাকায় একটি আলমারি। বর্তমান প্রযুক্তির সাথে তুলনা করলে প্রথম টেলিভিশনটিকে বেশ সরলই বলতে হবে।

সাথে টেলিভিশনের পর্দার আকৃতিও কিম্ভুত, অষ্টভুজাকার।

এর প্রযুক্তিটি অসাধারণ হলেও মান ছিলো অতি সাধারণ। বিশেষ উপায়ে মেকআপ না নিলে মৌখিক অভিব্যক্তিগুলো এতে বোঝা দুষ্কর ছিলো।

১৯৩০

১৯৩০ সালে আমরা আরো নিখুঁত টেলিভিশন প্রত্যক্ষ করেছিলাম। ডিজাইন এবং রেজ্যুলেশনও ছিলো আগের চেয়ে উন্নত।

এই দশকে ভিডিওর মানে বিশাল উল্লম্ফন সৃষ্টি হয়। দশকের শুরুতে স্ক্যানরেখার সংখ্যা ১০০ হতে দশকের শেষ নাগাদ ৪০৫ এ উন্নীত হয়।

১৯৪০

১৯৪০ এর দশকে আরো উন্নত রেজুলেশনের টিভি বাজারে চলে আসে। সেই সাথে এটি NTSC স্ট্যান্ডার্ডে উন্নীত হয়। শব্দেও অগ্রগতি হয় এবং স্ক্যান লাইন ৪৮০ তে পৌঁছায়।

এই দশকে ১২ ইঞ্চির অধিক সিআরটি পর্দা তৈরি করা দুষ্কর ছিলো। তাই বড়পর্দার টিভিগুলোতে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে ছবি দেখানো হতো।

১৯৫০

১৯৫০ এর দশকে প্রথম রঙিন টিভি বাজারে আসে। কিন্তু উচ্চমূল্যের কারণে পরবর্তী দশকের আগ পর্যন্ত খুব বেশী রঙিন টিভি বিক্রি হয়নি।

১৯৬০

রঙ্গিন টিভি বিক্রিতে ধুম পড়ে যায় ৬০ এর দশকে। এগুলো আরো সহজ্যলভ্য হয় এবং বর্ণেও অগ্রগতি ঘটে।

জাঁকালো টিভিগুলোতে আরো একধরনের ফিচার যুক্ত হয়। এটি হলো রিমোট কন্ট্রোল।

১৯৭০

১৯৭০ এর দশকে সকল প্রকার ডিজাইনের ও চাহিদার টিভি তৈরি হতে থাকে। এর মধ্যে একটি ছিলো আপগ্রেডযোগ্য টিভি, সাথে পরিবর্তনযোগ্য সার্কিটবোর্ড ছিলো। ফিউচারিস্টিক টিভিগুলোতে ছিলো বাঁকানো ডিজাইনের নকশা। রঙিন টিভিগুলো অবশ্য খেলনার সাথেই বেশী মানানসই ছিলো। সেই সাথে ছিলো বহনযোগ্য কম্বো। এতে সাধারণত টিভির সাথে রেডিও এবং ক্যাসেট প্লেয়ার যুক্ত ছিলো।

১৯৮০

১৯৮০ দশক নাগাদ টিভিকে ফার্নিচার হিসেবে ব্যবহার যুগ শেষ হয়ে যায়। এগুলো বড় পর্দাযুক্ত রঙ্গিন প্রোজেশন টিভির দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো স্পেস কমান্ড টিভি।

তবে আশির দশকের বিশেষ অবদান হলো এলসিডি টিভি প্রদান। এগুলো ছোট এবং কম পিক্সেলের হলেও টেভিভিশন প্রযুক্তির একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হয়। সেই সাথে বহনযোগ্য সিআরটি টিভিগুলোও আরো সুলভ এবং নিত্যনতুন ফিচার যুক্ত করে তৈরি হয়।

১৯৯০

১৯৯০ এর দশকটি একচেটিয়া দখলে ছিলো সনির ট্রিনিট্রন প্রযুক্তির। সনির পেটেন্ট সময়সীমা পার হয়ে গেলে অন্যরাও এই প্রযুক্ত ব্যবহার সুযোগ পায়।

টিভি এবং ভিসিআরের সমন্বিত যন্ত্র এই দশকে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এদের সাথে এফএম রেডিওও যুক্ত করে দেওয়া হতো। পুরো দশক ধরে ক্যাসিও তাদের বহনযোগ্য এলসিডি টিভিগুলোর উন্নতি ঘটিয়ে চলে।

পরবর্তী দশক মাতিয়ে চলা ফ্ল্যাট স্ক্রিন এইচডি টিভি এই দশকের শেষেই প্রথম চালু হয়। এর মূল্য ছিলো সাত হাজার ডলার।

তবে দাম হাতের নাগালে হওয়ায় দুইহাজার সাল হতে পরবর্তী দশকেও সিআরটি টিভিগুলো যথেষ্ট জনপ্রিয়তা ধরে রাখে।

এগুলো একে দামে সস্তা, তার উপর একটি কনভার্টার বক্স ব্যবহার করে এগুলোর মাধ্যমে এইচডি চ্যানেলগুলোও টিউন করা যেত।

এই দশকে এলসিডি টিভিগুলো প্লাসমা টিভির সাথে প্রতিদ্ধন্দিতার সুযোগ পায় এবং এলসিডির এইচডি ভার্সন সুলভ হয়। পরবর্তীতে এলইডি টিভির আবির্ভাব ঘটে। এগুলো সবদিক থেকই ছিলো অন্যদের চেয়ে এগিয়ে।

পুরো দশক জুড়ে এইচডি টিভি ক্রমশঃ স্মার্ট হতে থাকে। এগুলো ব্যবহারকারীর কম্পিউটার হতে কন্টেন্ট প্রদর্শন করতে শুরু করে। তাছাড়া সরাসরি ইন্টারনেটের বিভিন্ন সার্ভার থেকেও এগুলো কন্টেন্ট পরিবেশন করতে শুরু করে।

২০১০

এরপরে আমরা ২০১০ এর যুগে প্রবেশ করি। আমরা সুলভে উচ্চ প্রযুক্তির টিভি কেনার সুযোগ পাই।  ফোর কে, এলইডি, থ্রিডি এসব প্রযুক্তি এই দশকেরই অবদান।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাঁকানো পর্দার টিভির প্রচলন শুরু হয়। এতে গ্লেয়ার হ্রাস পায় এবং পাশ্বীয় দর্শনের সুযোগ তৈরি হয়। কম্পিউটার মনিটর হিসেবে এই পর্দাগুলো খুবই প্রয়োগযোগ্য হয়। তবে টিভি সাধারণত দূর হতে দেখা হয় বলে এই ক্ষেত্রে তেমন জনপ্রিয় হয়নি।

ওয়ালপেপার টিভি হলো এই দশকের সবচেয়ে চমৎকার প্রযুক্তিগুলোর একটি। এই টিভিগুলো ক্রেডিট কার্ডের মতো পাতলা করে তৈরি করা হয়।

সর্বাধুনিক ফিচারহলো অমবিয়েন্ট মোড। এর মাধ্যমে টিভিকে ঘরের ডেকরেশনের সাথে মেলানো যায় এবং একে একটি শিল্প হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।

২০২০

২০২০ এর দশক এখনো শুরু না হলেও বেশকিছু নতুন প্রযুক্তির অঙ্গীকার এখনই শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে রোল করার উপযোগী টিভি। বন্ধ অবস্থায় এটি পুরোপুরি লুকোনো অবস্থায় থাকবে এবং কন্টেন্টের আকার অনুযায়ী প্রয়োজনমাফিক বেরিয়ে আসবে। ক্যালেন্ডার এবং মিউজিক অপ্লিকেশনের জন্য এটি খুবই উপযোগী। তাছাড়া অতিপ্রশস্ত পর্দার সিনামাগুলো দেখার ক্ষেত্রে উপর-নিচের কালো বারও দূর হবে এতে।

স্বচ্ছ কাচের টিভিও সম্পূর্ণ আলাদা একধরনের টিভি প্রযুক্তি হবে। তবে বিনোদনের চেয়ে আলঙ্কারিক ক্ষেত্রেই এটি বেশী প্রয়োগযোগ্য হবে।

দ্বি-পার্শীয় টিভির মাধ্যমে বানিজ্যিক প্রয়োগ এবং গেমিং ইত্যাদি আরো সহজ হয়ে আসবে।

প্রযুক্তি খুব দ্রত বদলে যাচ্ছে এবং সেই সাথে পাল্লা দিয়ে টিভিও বদলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে টিভিপ্রযুক্তিতে আর কীকী যুক্ত হতে পারে বলে আপনাদের ধারনা?

1 মন্তব্য

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.