প্রাচীন মাকড়শা প্রজাতি নিয়ে গবেষণা চালানো দুষ্কর। এদের বর্হিকঙ্কাল বা আভ্যন্তরীন কঙ্কাল নেই তাই সহজে ফসিলে পরিণত হয় না। কাজেই গবেষকগণ একটি অনুদ্ঘটিত এলাকায় ১০টি আনকোরা মাকড়শার ফসিল পেয়ে বেশ উৎফুল্ল হয়েছেন। এদের আবিষ্কার করা হয়েছে দক্ষিন কোরিয়ার জিনজু অঞ্চলে।
জিনজু ফর্মেশন হল দক্ষিন কোরিয়ার একটি ভুতাত্ত্বিক অঞ্চল। এটি ৬.৬ কোটি বছর হতে ২৫.২ কোটি বছর পূর্বে মেসোজোয়িক সময়ে গঠিত হয়। এর আগে কেবল একটি মাকড়শা পাওয়া গেলেও নতুন করে ১০টি পাওয়ায় মাকড়শার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এগারোটিতে! তবে এদের মধ্যে দুটি মাকড়শার আবিষ্কার আরো বেশী উৎফুল্লকর। কারণ, এগারো কোটি বছর আগে মারা গেলেও এদের চোখগুলো এখনো অবিকৃত আছে। ইউনিভার্সিটি অব কানসাসের ভুতাত্ত্বিক পল সেলডেন এই আবিষ্কারের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, “এই মাকড়শাগুলো অদ্ভুতদর্শন রূপালী ফলকের কঠিন শিলার মধ্যে সংরক্ষিত ছিলো। প্রথম দেখাতেই এদের অবিকৃত বড় বড় উজ্জ্বল চোখগুলো স্পষ্ট হয়েছে। আমি বুজতে পারলাম এতে টাপিডাম (tapetum) উপস্থিত আছে। টাপেডাম হলো চোখের ভেতরের একধরনের প্রতিফলক গঠন যাতে আলো প্রতিফলিত হয় রেটিনায় ফিরে আসে।”
এধরনের ব্যবস্থা যেসব প্রানীর আছে তারা অন্ধকারে বেশ ভালো দেখতে পায়। মানুষের চোখে টাপেডাম নেই, তবে বেড়ালের চোখে আছে। এই কারণে বেড়ালের চোখও অন্ধকারে জ্বলজ্বল করতে দেখা যায়।
গবেষকগণের ধারনা, এই পর্যন্ত যত ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে এগুলোই সংরক্ষিত টাপেডামের প্রথম নমুনা। সেলডেন জানান, “নিশাচর শিকারি প্রানীগুলোর ক্ষেত্রে চোখে টাপেডাম থাকার প্রবণতা দেখা যায়। এই প্রথম ফসিলে সংরক্ষিত অবস্থায় টাপেডাম পাওয়া গেলো চোখের মত আভ্যন্তরীন কাঠামো অবিকৃত অবস্থায় ফসিলে পাওয়া খুবই আনন্দের বিষয়। এধরনের ঘটনা সচরাচর ঘটে না।”।
নরম শরীরের প্রানীগুলো, যেমন, মাকড়শা সাধারণত এম্বারে আবদ্ধ হয়ে সংরক্ষিত হয় এবং ফসিলে পরিণত হয়। এর ফলে এদের নরম শরীর পচে যাওয়ার হাত হতে রক্ষা পায়। তবে গবেষকগণ মনে করেন যদি এই মকাড়শাগুলো এ্যাম্বারে আবদ্ধ হতো তাহলে হয়তো টাপেডাম অবিকৃত থাকত না। মাকড়শা প্রজাতিদুটোর নাম দেওয়া হয়েছে Koreamegops samsiki এবং Jinjumegops dalingwateri । [Science Alert অবলম্বনে]