নতুন এক গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, উল্কাপিন্ড পৃথিবীতে আঘাত হানার লক্ষ লক্ষ বছর আগেই ডায়নোসরের অনেক প্রজাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। আর এর মাধ্যমে জীবাশ্মবিদ্যা সম্পর্কে চলা একটি দীর্ঘতম বিতর্কের অবসান হতে পারে। এই গবেষণা ডাইনোসরদের পরিণতি সম্বন্ধে আমাদের জানতে সহায়তা করবে।
যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্রিস ভেনডিট্টি বলেন, “ডায়নোসরের বিবর্তন সম্পর্কে দীর্ঘ বিতর্ক রয়েছে যে, উল্কাপিন্ডের প্রভাব পর্যন্ত তাদের শক্তিশালী আধিপত্য ছিল নাকি ধীর গতিতে ক্রমশ [নতুন প্রজাতির উদ্ভব বিলোপ হয় অথবা সে সময়ের আগেই ধ্বংস হয়ে যায়।”
ভেনডেট্টি ও তাঁর দল সে সময়ে কি ঘটেছিল তা জানার জন্য পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণ এবং জীবাশ্ম দলিলে সংরক্ষিত তথ্য নিয়ে ওনিথিসিয়ানস (তৃণভুজি), থেরোপডস (মাংসাশী যেমন টি-রেক্স) ও সওরোপডস (দীর্ঘ গলা বিশিষ্ট উদ্ভিদভুজি) ডায়নোসরের প্রধান তিনটি বংশ তালিকা তৈরি করেন।
তাঁরা দেখলেন যে, ২২০ মিলিয়ন বছর আগের প্রাক্তন ট্রায়াসিক যুগে যখন ডায়নোসর প্রচুর পরিমানে জন্মাতে শুরু করে তখন কোন নির্দিষ্ট প্রজাতির মৃত্যুর ১০০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে পুনরায় তারা আগের অবস্থানে ফিরে যেতে সক্ষম হতো। সেই দশ মিলিয়ন বছর পূর্বে ৯.৬ কি.মি. চিকসজুলুব নামের উল্কা পৃথিবীতে আঘাত হানে।
এই গবেষণার পূর্বে অনেক বিজ্ঞানী মনে করতেন যে, ডায়নোসররা সে সময় পর্যন্ত সমৃদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে যে, এই দলটি দীর্ঘমেয়াদি পতনের মুখে পড়ে এবং এই কারনই মূলত এদের ধ্বংস হওয়া তরাণ্বিত করে।
রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গবেষক মানাবো সাকামোটো বলেন, “যদিও গ্রহাণু প্রভাব এখনোও ডায়নোসরদের চূড়ান্ত অন্তর্ধানের জন্য দায়ী। তবে এটা স্পষ্ট যে, তারা একটি বিবর্তনীয় অর্থে তাদের মৌলিকত্ত্ব পেরিয়ে এসেছিল।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের গবেষণাটি এই ক্ষমতাশালী জীবকূলের ভাগ্য সম্পর্কে আবারও এক যুগান্তকারী তথ্য প্রদান করবে। অল্প সময়ের মাঝে হঠাৎ রহস্য উধঘাঠিত হবে যা কফিনের শেষ পেরেকটি ঠুকে দেবে। অন্য কোন কারণ যা ডায়নোসরের নতুন প্রজাতির বংশবৃদ্ধি দ্রুত প্রতিহত করেছিল এবং তাদের আগের প্রজাতি ধ্বংস হয়েছিল।”
বিজ্ঞানীরা এখন ভাবছেন যখন ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে চিক্সজুলুব নামের উল্কা পৃথিবীতে আঘাত হানে ও মিলিন মিলিয়ন টন ময়লা বায়ুমন্ডলে মিশে যায়। যা সূর্যের রশ্মিকে আটকিয়ে দেয় ও স্বল্প সময়ের জন্য আবহাওয়া শীতল করে দেয়। সেই সাথে ব্যাপকহারে বৃক্ষরাজি মারা যায়। কিন্তু যখন অধিকাংশ ডায়নোসর এই পরিবর্তীত পরিবেশের মাঝে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারছিল না। ঠিক ঐ সময়ে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মতো এক প্রজাতি অবশেষে অস্তিত্ব রক্ষায় ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। দলটি ধারণা দেন যে, গ্রহাণু প্রভাবের ফলে ডায়নোসরদের প্রাধান্য বিস্তারের দুর্বলতা স্তন্যপায়ীদরে টিকে থাকার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেয়।
ভেনডিট্টি বলেন, “ডায়নোসরদের পতন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বিশাল সুযোগ করে দেয়, এবং মানুষ তাদের মধ্যে অন্যতম এক সদস্য। এই প্রভাব পৃথিবীতে প্রাধান্য বিস্তার করার জন্য স্তন্যপায়ী প্রজাতিকে ডায়নোসরের স্থানে প্রতিস্থাপন করতে প্রস্তুত করে।”
গবেষণাটি আমাদের এই ভবিষ্যৎবাণী করতে সহায়তা করে যে, যেসকল প্রাণী এখনো টিকে রয়েছে তারা ধ্বংস হওয়া থেকে সুরক্ষিত নয়। যেমন সেইসব প্রজাতি যারা যতো দ্রুত ধ্বংস হচ্ছে ততো দ্রুত বংশ বিস্তারে সক্ষম হচ্ছেনা। সাকামোটো বলেন, “মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দ্রুত গতিতে বিভিন্ন প্রজাতি ধ্বংস হচ্ছে, এতে আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জীববৈচিত্র সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য প্রকাশ করছে।”
কিন্তু এখনও একটি প্রশ্নের উত্তর সবাই জানতে চাচ্ছেন যে, এই গবেষণা কি উল্কাপিন্ডের বিষয়টি অগ্রাহ্য করে এটাই বুঝাতে চাচ্ছে ডায়নোসর অন্যকোন ভাবে ধ্বংস হয়েছে?
ভেনডিট্টি বলেন, “যদি গ্রহ-নক্ষত্রের নির্দিষ্ট আবক্র পথ চলমান থাকে এমনকি উল্কাপিন্ডও আঘাত না হেনে থাকে তবে তারা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে খুব দরিদ্র প্রজাতি হিসেবে ছিল কিংবা সবাই একসঙ্গে বিলুপ্ত হতে পারে।”
তবে এডেনবার্গের জিবাশ্মবিজ্ঞানী স্টিফেন ব্রাসেট এ বক্তব্যের সাথে একমত নন। তিনি বলেন, “ হতে পারে গ্রহাণু প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম জোরালো ধারণা কারণ, একসময় ডায়নোসরদের বিবর্তনীয় ক্ষমতা শক্তিশালী ছিলো যা পরবর্তীতে আর ততোটা ছিলনা। কিন্তু আমি মনে করি যদি প্রহাণু প্রভাব না-ই থেকে থাকে তবে আপনার চারপাশে আজ ডায়নোসর থাকতো।”
⚫ শফিকুল ইসলাম