২০১৭ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছেন মহাকর্ষ শিকারি তিন বিজ্ঞানী রেইনার ওয়েইস, ব্যারি ব্যারিস আর কিপ থর্ন। কিন্তু তাদের চলার পথ মসৃণ ছিল না। প্রথম দিকে একাই লড়েছেন ওয়েইস, তারপর সঙ্গী হন কিপ থর্ন আর ডোনাল্ড ড্রেভর। ড্রেভর এবছর মারা গেছেন। তাই নোবেলের স্বাদ থেকে তিনি বঞ্চিত হলেন। তিন বিজ্ঞানীর লাইগো তৈরির দীর্ঘযাত্রার কাহিনি বর্ণনা করতেই এই আর্টিকেল।
গত শতাব্দীর ষাটের দশক। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্লাদিমির ব্রাগিন্সিকির নেতৃত্বে একদল গবেষক দেখালেন, এক ধরনের মহাকর্ষ তরঙ্গ শণাক্ত করা সম্ভব। তারপরেই মূলত ওয়েবার কাজে লেগে পড়েন। তাঁরা বললেন, দুটি কৃষ্ণগহ্বর পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে একটি বৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর তৈরি করে। তার ফলে মহকর্ষ তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের মহাকর্ষ তরঙ্গ শণাক্ত করা সম্ভব। এর পরেই ওয়েবারের ব্যর্থ প্রচেষ্টা।
ওয়েবারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু ওয়েবারই সাহস যুগিয়েছিলেন অন্যদের। তরুণ বিজ্ঞানীরা উৎসাহিত হয়েছিলেন। সবচেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ হন রেইনার ওয়েইস। জন্ম জার্মানির বার্লিনে। ইহুদি পরিবারে। বাবা চিকিৎসক এবং কমিউনিস্ট। মা অভিনেত্রী এবং খৃষ্টান ঘরের মেয়ে। হিটলারের রোষে পড়তে আর কি চাই! সুতরাং সপরিবারে জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্টে পালিয়ে আসেন ওয়েইসের বাবা। ওয়েইসের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে টানাটানি করব না। তাতে বইয়ের কলেবরই শুধু বাড়বে। তিনি এমআইটিতে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হন। ছাত্রদের সাধারণ আপেক্ষিকতা পড়াতেন। রেফারেন্স বইয়ের তালিকায় ওয়েবারের মহাকর্ষ তরঙ্গও অন্তর্ভূক্ত ছিল। মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্তের জন্য ওয়েবার যে পদ্ধতির কথা লিখেছিন তা কিছুতেই ওয়েইসের মাথায় ঢুকছিল না। ছাত্রদের পড়াবেন কী!
বিকল্প পদ্ধতির তালাশ করলেন ওয়েইস। তিনি কাল্পনিক এক যন্ত্রের ছবি আঁকলেন মনে মনে। তাঁর কল্পিত যন্ত্রটার দুটো বাহু থাকবে। বাহু দুটো থাকবে পরস্পরের সমকোণে। মহাকর্ষ তরঙ্গ প্রবাহিত হলে একটা বাহুর দৈর্ঘ্য বেড়ে যাবে। তখন সেই বাহুর সমকোণে থাকা বাহুটির দৈর্ঘ্য কমে যাবে। পরমুহূর্তে যে ঢেউ আসবে সেটা প্রথম বাহুটির দৈর্ঘ্য কমিয়ে দেবে এবং দ্বিতীয় বাহুটি প্রসারিত হবে।
শুধু ভাবলেই তো চলবে না। যন্ত্রটা ঠিকঠাক মতো কাজ করবে কিনা সেটাও তো এক প্রশ্ন। পৃথিবীতে যেসব মহাকর্ষ তরঙ্গ আসে তা খুব দুর্বল। একটা বস্তু সেই দুর্বল তরঙ্গের প্রভাবে কতটুকু সংকুচিত-প্রসারিত হবে সেটা মাপাও দুরূহ কাজ। কারণ, সেই সংকোচন-প্রসারণের পরিমাণও অতি সামান্য। তাছাড়া বয়ে যাওয়া তরঙ্গ শুধুমাত্র পৃথিবীর একটা বস্তুকে সংকুচিত-প্রসারিত করবে না, তার প্রভাবে পৃথিবীর সকল বস্তুর সংকোচন-প্রসারণ হবে সমান অনুপাতে। শুধু বস্তু নয়। পৃথিবী নিজেও সমান অনুপাতে সংকুচিত-প্রসারিত হবে।
রেইনার ওয়েইস
ধরা যাক, ওয়েইসের কল্পিত যন্ত্রটির একটি বাহু প্রসারিত হলো এবং অন্য বাহুটির সংকোচন ঘটল। কিন্তু কতটুকু হলো? এটা বুঝতে হলে স্কেলের সাহায্য নিতে হবে। মুশকিল হলো স্কেলটির সংকোচন-প্রসারণ ঘটেছে সমান অনুপাতে। এমনকি আমাদের শরীরেরও একই অবস্থা। তাই সংকোচন-প্রসারণটা মাপার উপায় নেই।
তাহলে উপায়?
এমন এক স্কেল খুঁজে বের করতে হবে যার ওপর মহাকর্ষ তরঙ্গের কোনো প্রভাব নেই। মহাকর্ষ তরঙ্গ বয়ে গেলে যার সংকোচন প্রসারণ ঘটবে না।
কী সেই বস্তু?
লাইগো ইন্টারফেরোমিটারের ডায়াগ্রাম
আলো! একমাত্র আলোই মহাকর্ষ তরঙ্গের প্রভাবমুক্ত। আলোকে থামানো যায় না। আলোর বেগও শূন্য মাধ্যমে একটুও কমবেশি হয় না। এখন ধরা যাক ৩ কোটি কিলোমিটার লম্বা একটা লোহার দ-। অবশ্য এতবড় দ- পৃথিবীতে রাখা সম্ভব নয়। তবুও বোঝার সুবিধার জন্য ধরে নিলাম। একটা আলোক রশ্মি দ-টির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাঠানো হলো। আলোর গতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার। তাহলে আলোক রশ্মিটি দ-ের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছতে সময় নেবে ১০০ সেকেন্ড।
ধরা যাক, খুব শক্তিশালী একটা মহকর্ষ তরঙ্গ বয়ে গেল দ-টির ওপর দিয়ে । ফলে দ-টি ৩ লক্ষ কিলোমিটার প্রসারিত হলো। দ-টির মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াল ৩ কোটি ৩ লক্ষ কিলোমিটার। সেই মুহূর্তে আরেকটা আলোক রশ্মিকে পাঠানো হলো দ-ের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। যেহেতু দ-ের দৈর্ঘ্য ৩ লক্ষ কিলোমিটার বেড়ে গেছে তাই দ-টিকে পার হতে আলোক রশ্মিটি আগের থেকে এক সেকেন্ড বেশি সময় নেবে। অর্থাৎ দ-ের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে আলোক রশ্মির সময় লাগবে ১০১ সেকেন্ড।
একই দৈর্ঘের (৩ কোটি কিলোমিটার) আরেকটি দ- নেওয়া যাক। এবার আরেকটি মহাকর্ষীয় ঢেউ এলো। এবং দ-টি সংকুচিত হলো। সংকোচনের পরিমাণও ৩ লক্ষ কিলোমিটার। তারমানে দ-টির দৈর্ঘ্য কমে দাঁড়াল ২ কোটি ৯৭ লক্ষ কিলোমিটারে। এখন দ-টির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে আগের মতোই আলোক রশ্মি পাঠানো হলো। যেহেতু দ-ের দৈর্ঘ্য ৩ লক্ষ কিলোমিটার কমে গেছে, সুতরাং আলো দ-ের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে ১ সেকেন্ড কম নেবে। দ- পেরোতে আলোর মোট সময় লাগবে ৯৯ সেকেন্ড।
এখন বিষয়টা অনেক সহজ মনে হচ্ছে। আসলেই সহজ হত, যদি ৩ কোটি কিলোমিটারের কোনো দ- দিয়ে মহাকর্ষ তরঙ্গ শণাক্তের যন্ত্র বানানো যেত। সেই সাথে খুব শক্তিশালী মাহকর্ষ তরঙ্গও যদি পৃথিবীতে আসত। কিন্তু তা সম্ভব নয়। তাই আমাদের সাধ্যের ভেতর যা আছে তাই দিয়েই চেষ্টা করে যেতে হবে। ওয়েইস এমনই কিছু চিন্তা করলেন। আমাদের ওই কল্পিত দ- ও আলোক রশ্মির মতোই ব্যাপারটা। তবে দুটো দ-ের বদলে থাকে দুটো ফাঁপা নল বা টানেল। টানেল দুটো পরস্পরের সমোকোণে। আর ব্যবহার করা হবে আলোর ব্যাতিচার ধর্মের।
আলোর ব্যাতিচার ধর্মকে কাজে লাগিয়ে মহাকর্ষ তরঙ্গ শণাক্ত করা সম্ভব বলেছিলেন দুই সোভিয়েত বিজ্ঞানী। তাঁরা হলেন, মিখাইল গার্টসেনস্টেইন ও ভøাদিস্লভ পুস্তোভোইত। সেটা ১৯৬২ সালের কথা।
১৯৬২ সালে রেইনার ওয়েইস আলোর ব্যাতিচার ধর্ম ব্যবহার করে ইন্টাফেরোমিটার যন্ত্রের ওপর একটা গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। ইন্টারফেরোমিটারের সাথে বৈজ্ঞানিকরা অনেক আগেই পরিচিত। ১৮৮৭ সালে দুই মার্কিন বিজ্ঞানী আলবার্ট মাইকেলসন এডওয়ার্ড মর্লি ইন্টারফেরেমিটার যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন তাদের ঐতিহাসিক পরীক্ষায়। ‘মাইকেলসন-মর্লির পরীক্ষা’ নামে পরিচিত সেই পরীক্ষায় প্রমাণ হয় বহুকাল ধরে কল্পিত ইথারের বলে আসলে কিছু নেই। সেই পরীক্ষায় যে ইন্টারফেরোমিটার যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয় তা মাইকলসনের আবিষ্কার। এ বিষয়ে বিস্তারিত পাবেন ২০১৬ সালে অন্বেষা থেকে প্রকাশিত আমার ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’ বইয়ে।
সেই ধরনের একটা ইন্টারফেরেমিটার আর আলোর ব্যাতিচার ধর্মকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন ওয়েইস তার মহাকর্ষ তরঙ্গ শাণক্তকারী যন্ত্রেও। অনেকেই বিশ্বাস করতেন না আলোর ব্যাতিচার ধর্ম ব্যবহার করে মহাকর্ষ তরঙ্গ শণাক্ত করা যেতে পারে। এদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন ক্যালটেকের গবেষক কিপ থর্ন। অথচ ১৯৬৮ সালে থর্নই অবশ্য মহাকর্ষ তরঙ্গ শণাক্তকরণের জন্য সত্যিকারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাকে সহয়তা দেয় ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বা ক্যালটেক। অবশ্য সে পদক্ষেপ সফল হয়নি।
বৈজ্ঞানিক সত্যকে বুঝদার বৈজ্ঞানিকরা বেশিদিন দূরে রাখতে পারেন না। থর্নও এক সময় মত বদল করেন। ততোদিনে ওয়েইস তাঁর যন্ত্রের নকশা এঁকে ফেলেছেন।
কিপ থর্ন : লাইগো প্রকল্পের সবচেয়ে বড় উদ্যোক্তা
ইন্টারফেরোমিটার যন্ত্রের জন্য তৈরির জন্য টাকা দরকার। বহু টাকা। এত টাকা কোনো বৈজ্ঞানিকের থাকার কথা নয়। এত টাকা বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষেও যোগানো সম্ভব নয়। একমাত্র সরকারই পারে এই খরচ বহন করতে। ওয়েইস সরকারের বিভিন্ন মহলে দেনদরবার করছেন। সরকারই বা একজন বিজ্ঞানীর স্বপ্নের পেছনে শুধু শুধু অর্থ ঢালবে কেন? যাচাই-বাছাই করেই না আসল সোনা চিনতে হয়। নাসার এক বৈজ্ঞানিক প্যানেলকে বোঝাতে হবে পুরো বিষয়টা।
১৯৭৫ সালের কথা। কিপ থর্নও উঠেপড়ে লেগেছেন মহাকর্ষ তরঙ্গ শণাক্তের কাজে। সেই মুহূর্তে ওয়েইসের ডাক পড়ল ওয়াশিংটনে। নাসার প্যানেলে বক্তৃতা দিতে হবে তার যন্ত্রের কার্যকারিতা তুলে ধরে। ওয়েইস থর্নকে আমন্ত্রণ জানালেন সেই অনুষ্ঠানে। থর্নের সাথে ওয়েইসের সরাসরি সাক্ষাত এর আগে হয়নি। এই সূত্রে তাঁদের দেখা হলো। রাতটাও কাটালেন দুজন ওয়াশিংটনের এক হোটেলে একই কক্ষে। সেই রাতেই ওয়েইস থর্নকে বোঝাতে সক্ষম হলেন আলোর ব্যাতিচার ধর্মকে ব্যবহার করেই মহাকর্ষ তরঙ্গ শণাক্ত করা সম্ভব।
রোনাল্ড ড্রেভার
ওদিকে ইন্টারফেরোমিটার যন্ত্র ব্যবহার করে জার্মানির গারচিংয়ে একটা যন্ত্র তৈরি হলো হাইন বিলিংয়ের নেতৃত্বে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় আরেকটা যন্ত্র তৈরি হলো। সেটা নেতৃত্বে ছিলেন রোনাল্ড ড্রেভার।
এরপর ওয়েইস, থর্ন আর ড্রেভার একত্রিত হয়ে সত্যিকার একটা যন্ত্রের পরিকল্পনা করলেন। সেটাই হলো লাাইগো।
ওয়েইস, থর্ন আর আর ড্রেভার লাইগোর একটা খসড়া পকল্প দাঁড় করালেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হলো ২৭২ কোটি টাকা। কিন্তু টাকা দেবে কে? তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন এনএসএফ-এর কাছে অনুদান চাইলেন। টাকার অঙ্কে সেটাই এনএসএফ-এর ইতহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। স্বভাবতই সেটা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। অনেক জোতির্বিজ্ঞানী এর বিরোধিতা করলেন। কারণ মহাকর্ষ তরঙ্গ শণাক্তের ব্যাপারে তাঁরা সন্দিহান। ওয়েবারের ব্যর্থতা তাদের আত্মবিশ্বাসের ভিত নড়বড়ে করেছে। আরো একটা ব্যাপার আছে। এনএসএফ যদি এতটাকা একটা প্রকল্পের পেছনে ব্যয় করে ফেলে অন্য প্রকল্পে টাকার ঘাটতি পড়ার আশঙ্কা আছে।
দমলেন না তিন বিজ্ঞানী। লড়াই চালিয়ে গেলেন। ১৯৮১ সালে থর্ন রীতিমতো বাজিই ধরে বসলেন। বিংশ্ব শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই শণাক্ত হবে মহাকর্ষ তরঙ্গ। তাঁর বাজির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আরেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরোমিয়া অস্ট্রাইকার। ২০১৬ সালে যেহেতু মহাকর্ষ তরঙ্গ শণাক্তের প্রথম ঘোষণা এলো, সুতারাং বলার অপেক্ষা রাখে না বাজিতে থর্ন হেরেছিলেন।
এনএসএফ ওয়েইস, থর্ন আর ড্রেভারের আবেদন আমলে নেয়। কিন্তু অর্থ অনুমোদন করবে তো মার্কিন কংগ্রেস। তখন এই প্রকল্প খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞদের মত জানবার প্রয়োজন মনে করে কংগ্রেস। সেই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় হাউজ অর্ব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এক কমিটিকে। তখনই আসে প্রধান সতর্কবার্তটা।
বেল ল্যাবরেটরির বিখ্যাত বিজ্ঞানী অ্যান্টেনি টাইসনের লাইগো প্রকল্পের বিরোধিতা করেন। শক্ত যুক্তি হাজির করেন টাইসন। তিনি বলেন, পৃথিবী থেকে নেপচুনের দূরত্ব ৪,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০ কিলোমিটার। এর সাথে আর দশ লক্ষ কিলোমিটার গুন করতে হবে। তাহলে যে বিশাল দূরত্ব, সেই দূরত্বে দুটি বিন্দুর কথা ভাবুন। এখন খুব শক্তিশালী একটা মহাকর্ষ তরঙ্গ স্থানকালের ভেতর দিয়ে চলে গেল। তাহলে এই বিন্দ দুুটোর মধ্যে দূরত্ব বাড়বে অথবা কমবে। আর সেই বড়া-কমার পরিমাণ হবে মাত্র এক চুল! এইটুকু পবির্তন মাপার জন্য পাওয়া যাবে সেকেন্ডর একশো ভাগের এক সময়। তাছাড়া স্পেসের এই ক্ষুদ্র পরিবর্ত কত বছরে ঘটবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারে না কেউ! ওয়েইস, থর্ন আর ড্রেভারের যুক্তি বোধহয় আরও জোরালো ছিল। মার্কিন কংগ্রেস ও এনএসএফ অর্থ বরাদ্দ করে লাইগো প্রকল্পে।
১৯৯২ সালে লাইগোর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর পরিচালনার ভার পড়ে ক্যালটেক ও এমআইটির ওপর। সে বছর ওয়াশিংটনের লিভিংস্টোনে লাইগোর প্রথম ডিটেক্টর স্থাপনের কাজ শুরু হয়। পরের বছর লুইজানার হ্যান্সফোর্ডে দ্বিতীয় ডিটেক্টর বসানোর কাজ শুর হয়। পরে হ্যান্সফোর্ডে আরো একটা যন্ত্র বসানো হয়।
পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন এই লাইগোই হলো মহাকর্ষ তরঙ্গ শণাক্তকরণের মূল হোতা। অর্থাৎ এটা একটা ডিটেক্টর যন্ত্র। সেই যন্ত্র মহাকর্ষ তরঙ্গকে পাকড়াও করতে পারে।
[এই লেখাটি মহাকর্ষ তরঙ্গ বইয়ের অংশবিশেষ। বইটি ২০১৭ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ করেছে অন্বেষা প্রকাশন]
-আব্দুল গাফফার রনি
বিজ্ঞান লেখক
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]