জিন সম্পাদনা ব্যবহার করে মানব কোষ থেকে HIV মুক্ত করায় সফলতা

0
795

অনেক চেষ্টা-চরিত্রের পর বিজ্ঞানীরা CRISPR/ Cas9 জিন সম্পাদনা পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদর্শন করতে সক্ষম হলেন কিভাবে হিউম্যান ইমিউন সেল DNA থেকে HIV মুক্ত করা যায়। একই সাথে তাঁরা অপরিবর্তীত কোষগুলোকে পুনরায় সংক্রমিত হওয়া থেকে প্রতিরোধ করতেও সক্ষম হচ্ছেন।

যদি আপনি CRISPR/Cas9 জিন সম্পাদনা পদ্ধতি সম্পর্কে না শুনে থাকেন তবে ২০১৬ তে এই বিষয়ে অনেক কিছু্ জানার জন্য প্রস্তুত থাকুন। কারণ জেনেটিক রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রনে এটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট জিনকে সঙ্কীর্ণ করে DNA এর অংশগুলোর ‘কাট এন্ড পেস্টের’ মাধ্যমে এর কর্মকান্ড পরিবর্তন করতে বিজ্ঞানীদের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।

সম্প্রতি মানব ভ্রুণের উপর এই CRISPR/Cas9  ব্যবহার করার জন্য যুক্তরাজ্যে গবেষকরা অনুমতি পেয়েছেন যার ফলে তাঁরা IVF এর সাফল্যের হার বৃদ্ধি এবং গর্ভপাতের পরিমান কমানোর পদ্ধতি নিরুপন করার পদ্ধতি উদ্ভাবনে কাজ করতে পারবেন। ইতিমধ্যে ২০১৫ সালে চীনের বিজ্ঞানীরা মানব ভ্রুণে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেন ।

এ বছরের শুরুর দিকে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো জীবন্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর Duchenne muscular dystrophy নামে একটি জেনেটিক রোগের উপর CRISPR / Cas9 ব্যবহার শুরু করেন এবং এটা এখন ভবিষ্যতে এইচআইভি জন্য একটি  সম্ভাব্য  চিকিত্সা হিসাবে বাস্তব সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।

Picture1

এই কৌশলে ‘ছুরি দিয়ে কাটা’ পদ্ধতিতে একটি কোষের মধ্যে ডিএনএকে নিশানা করা হয় এবং তখন তাদের কোনভাবে পরিবর্তন অথবা ‘সম্পাদনার’ জন্য প্ররোচিত করা হয়। CRISPR বলতে বোঝায় প্রোক্যারিওট থেকে নিষ্কাশিত ডিএনএ’র নির্দিষ্ট পুনরাবৃত্তির ক্রম। আর ব্যাকটেরিয়ার মতো এক কোষী জীব – যা একটি আরএনএ-নির্দেশিত এনজাইমের সাথে যুগলভাবে অবস্থান করে তাকে Cas9 বলা হয়। তাই যদি আপনি মানুষের কোষের মধ্যে একটি ভাইরাসের ডিএনএ সম্পাদনা করতে চান, তবে ভাইরাসের সম্মুখীন হওয়ার জন্য আপনার দরকার হবে একটি ব্যাকটিরিয়া এবং আরএনএ’র সাথে একটি সূত্র যা ভার্চুয়াল ডিএন’র অনুরূপ ক্রম তৈরি করে।  এই ‘গাইড আরএনএ’ Cas9 এনজাইমের সম্মুখে যুক্ত হবে এবং একইসঙ্গে সমকক্ষ ভাইরাস খোঁজ করবে। এধরনের কোনো ভাইরাস সনাক্ত হয়ে গেলে Cas9 এটাকে কেটে ফেলবে এবং ধ্বংস করে দেবে। এই পদ্ধতির সাহায্যে টেম্পেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ T সেল থেকে HIV-1 ডিএনএ আলাদা করতে সক্ষম হয়েছেন এবং পরবর্তীতে যখন এই কোষগুলো ভাইরাসের প্রতি উন্মুক্ত অবস্থায় ছিল তখনও পুনরায় সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত ছিল।

HIV এর বিরুদ্ধে সংগ্রামের এ এক বিরাট সাফল্য অর্জন

প্রধান গবেষক কামেল খালিলি বলেন “আবিষ্কারটি বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।” “গবেষকগণ আমাদের জিন সম্পাদনার মাধ্যমে  CD4 T-সেলের ডিএনএ থেকে HIV  দূর করার কার্যকারিতা প্রদর্শন এবং স্থায়ীভাবে আক্রান্ত জেনোমের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন।”

তিনি আরও বলেছেন, “তাঁরা এটাও দেখিয়েছেন যে, পদ্ধতিটি কোষকে পুনরায় আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং প্রযুক্তিটি কোষের জন্য নিরাপদ ও কোন বিষক্রিয়াও হয়না।”

জিন-সম্পাদনা কৌশলটি HIV তে আসার পূর্বে যখন পরীক্ষা করা হয়েছিল তার চেয়ে এবারের অগ্রগতি হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা এবারই প্রথম চিন্তা করলেন কিভাবে পুনরায় সংক্রমণ হওয়া রোধ করা যায়, যা বর্তমান প্রতিষেধক ঔষধের চেয়ে একটি সুন্দর সুরক্ষা প্রদান করে। এই বিষয়টি এই গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। পূর্বেকার ঔষধের ক্ষতিকর দিকটি হলো যদি আপনি এই ঔষধ নেয়া বন্ধ করেন তবে HIV T- সেলে পুনরায় উৎপাদন হওয়া শুরু করে।

খালিলি বলেন, “HIV সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রতিষেধক ঔষধ খুব ভালো।” “কিন্তু প্রতিষেধক থেরাপির রোগীরা যদি ঔষধ নেয়া বন্ধ করে তবে তারা দ্রুতই পুনরায় HIVতে আক্রান্ত হওয়ার সমস্যায় ভোগে।” এই কৌশলটিকে মানব কোষের জন্য আরও অধিক উপযোগী করার এখনোও অনেক কাজ বাকি আছে বিশেষ করে যখন এর যথার্থ ‘কাটিং’ প্রক্রিয়ায় পূর্ণতা আসে- তবে অবশ্যই এটি একটি উত্তেজনাপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ।

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.