প্রাচীন সিল্ক রোডটি গোবি মালভূমির নিচু অঞ্চল এবং পাহাড়ের পাদদেশে সমতলের দীর্ঘ এলাকা জুড়ে একেবেকে অবস্থিত বলে মনে করা হয়, যা পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে পণ্য ও সংস্কৃতির অবিশ্বাস্য বিনিময়ের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু নতুন কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ লুকিয়ে ছিলো একটি সুউচ্চ সমাধিস্থলে যা থেকে ধারনা করা যায় তিব্বতের উচু টিলা বরাবর পূর্বে বাণিজ্য পথের শাখা ছিল। ২০০৫ সালে তিব্বতের নাগারি জেলায় সন্নাসীরা ১,৮০০ বছরের পুরনো একটি সমাধি আবিষ্কার করেন যা সমুদ্র পিষ্ঠ থেকে ৪.৩ কি.মি. উচ্চতায় অবস্থিত। ২০১২ সালে গবেষক দল যখন সেই সমাধি খনন কাজ শুরু করেন সেখান থেকে প্রচুর পরিমান প্রতিভূ চীনা পণ্য খুঁজে পান যা তাঁদের বিস্মিত করে। তাঁরা ধারনা করেন সিল্ক রোডের এই শাখা ধরেই ব্যবসায়ীরা চীন থেকে তিব্বতে ভ্রমণ করেছিলেন যা ইতিহাস থেকে হারিয়ে গিয়েছিল।“আবিষ্কারটি ছিল বিস্ময়কর” বলেন হিউয়ান লু, যিনি চীনা বিজ্ঞান একাডেমীর একজন আর্কিওবোটানিষ্ট, ইনস্টিটিউট অফ জিওলজি এন্ড জিওফিজিক্স ইন বেইজিং। অন্যান্য হস্তনির্মিত জিনিসের মাঝে প্রত্নতত্ত্ববিদরা আবিষ্কার করেন চীনা অক্ষরে “ওয়াং হু” লেখা (অর্থ “রাজা” এবং “নেতারা”) সুক্ষ সিল্কের টুকরো, খাটি সোনার তৈরি মুখোশ এবং একটি সিরামিকের ও ব্রোঞ্জের পাত্র।
সেখানে তাঁরা চায়ের কুঁড়ি সদৃশ কিছু একটা খুঁজে পান। তিব্বতে চায়ের ইতিহাস সপ্তদশ শতকের কিন্তু এ কুঁড়ি ৪০০ থেকে ৫০০ বছরের পুরনো হবে। লু ও তার সহকর্মীরা এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে নমুনার রাসায়নিক বিশ্লেষণ করেন এবং সেখানে যথেষ্ট পরিমানে থিনাইন ও ক্যাফেইন শনাক্ত করেন, এছাড়া চায়ে এক ধরনের এমিওনো এসিডও পাওয়া যায়। তাছাড়া, অবশিষ্টাংশ চায়ের রাসায়নিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট ২,১০০ বছর আগে পাওয়া হান রাজবংশের একজন চীনা সম্রাটের সমাধীর চায়ের মতোই ছিল এবং উভয় দক্ষিন চীনের ইউনানে জন্মানো চায়ের মাঝে বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়। লু বলেন “এ থেকে বোঝা যায় যে এই চাসমূহ [তিব্বতি সমাধি থেকে পাওয়া] চীন থেকে এসেছে।” গবেষণাটি সম্প্রতি Scientific Reports জার্নালএ প্রকাশিত হয়।
তিব্বত এবং চীনের মাঝে এধরনের প্রাথমিক যোগাযোগ সম্পর্কে ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের একজন আর্কিওবোটানিস্ট মার্টিন জোন্স বলেন “ তিব্বতের সিল্ক রোডটি মূলত অতি উচ্চতার কারণে অবহেলিত হয়েছে।” ছবিতে প্রতিয়মান হয় যে, সিল্ক রোডটি যা পনের শতকে উসমানীয় সম্রাজ্যকর্তৃক বন্ধ করে দেওয়া হয় তা একটি উচ্চ পর্যায়ের ত্রিমাত্রিক সংযোগ ছিল। এটি শুধু সুবিশাল রৈখিক দূরত্বই পার করেনি বরং সুউচ্চ পর্বতও অতিক্রম করে গেছে।
এছাড়া অন্যান্য গবেষণাতেও দেখা যায় য়ে, ৩০০০ খ্রি: পূ: সময়ে এশিয়ার এই পর্বতসমূহে বণিজ্যের লক্ষণ নথিভুক্ত আছে- রাস্তাগুলি এখন এশিয়ার অভঃন্তরীন পার্বত্য অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ রোয়ান ফ্লাড বলেন “এর মানে দাড়ায় যে এই পথ তৈরির জন্য পর্বতরাজি কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। এই পথগুলো সংস্কৃতি, ধ্যান-ধারণা ও প্রযুক্তির বিনিময়ের পথ হিসেবে প্রভাবিত হতে পারে।”
⚫ শফিকুল ইসলাম