মানবজাতির কারণে গত ৫০০ বছরে ৩২২ টি বন্য প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে আর এর দুই তৃতীয়াংশই ঘটেছে গত দুই যুগের মধ্যে। সম্প্রতি জার্নাল সায়েন্সের প্রকাশিত একটি বিশেষ সংখ্যায় এ কথা জানা যায়।
গবেষকগদের মতে মানব সৃষ্ট কারণে অনেক প্রাণীর অস্তিত্ব এখন হুমকির সম্মুখীন বিশেষ করে উভচর ও অমেরুদন্ডী প্রাণীদের ব্যাপারে তাঁরা বেশ উদ্বিগ্ন। বাস্তুবিদ, প্রাণীবিদ্যাবিদ এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস যে, প্রাণীদের এই বিলুপ্তি বন্ধে এখনই কোন পদক্ষেপ না নেয়া হলে অতি শীঘ্রই আমরা বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক এবং সামাজিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবো যেখান থেকে আর ফেরার এবং ঐ অবস্থা থেকে পুনুরুদ্ধারের কোন সুযোগ থাকবেনা।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রোডোলফো ডিরজো ডিসকভারি নিউজ-কে জানিয়েছেন, “যদি মানব জাতির বর্তমান বৃদ্ধির অনুপাত চলমান থাকে তবে ২১০০ সালের মধ্যে জনসংখ্যার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে, প্রায় ২৭ বিলিয়ন। যা পরিষ্কারভাবে অস্থিতিশীল এবং অভাবনীয়।”
ডিরজো এবং তাঁর সহকর্মীরা উন্নয়নশীল এবং কার্বন-নিরেপেক্ষ প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন ও পণ্য দ্রব্য আরও দক্ষতার সাথে উৎপাদন বৃদ্ধি, ভোগের পরিমাণ হ্রাস করা এবং অপচয় রোধ করার মাধ্যমে “মানুষের মাথাপিছু জন্ম কমানো”-র ডাক দিয়েছেন। তাঁরা আরও বলেন, আমাদেরকে মানব জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ নিম্নগামী করা নিশ্চিত করতে হবে।
জার্নালের অন্য দুজন লেখক হল্ডার রজার্স এবং জশ টিউক্সবারি বিশ্বাস করেন, এসব প্রাণী মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় একটি বিষয় কিন্তু ভারসাম্যের বিবেচনায় খাদ্য, চাকুরী, শক্তি, অর্থ এবং উন্নয়নের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। যতক্ষণ আমরা পশুপাখিদের আমরা বাস্তুতন্ত্রের অংশ হিসেবে অপ্রাসঙ্গিক ভাবতে থাকবো ততক্ষণ আমরা প্রাণীদের হারাতেই থাকবো।
প্রাণীদের বাঁচিয়ে রেখে বাস্তুতন্ত্রকে সুস্থ রাখলে আন্তর্জাতিকভাবে এর সুফল বড় আকারে দৃষ্টিগোচর হবে। লুক হফম্যান ইন্সটিটিউট অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড এর পরিচালক টিউক্সবারি দক্ষিণ এশিয়ার মেকং নদী অববাহিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই অঞ্চলের মৎস্য সম্পদ প্রায় ৬০ মিলিয়ন মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করছে। এদিকে রজার্স আরও যোগ করে বলেন, নামিবিয়া পর্যটকেদের মাঝে ৭০ ভাগই প্রকৃতি ভিত্তিক পর্যটক যা এই দেশের অর্থনৈইক প্রবৃদ্ধির ১৪.২ শতাংশ।
টিউক্সবারি আরো বলেন, “ল্যাটিন আমেরিকায় তিমি প্রদর্শনীর আয় নেহায়েত কম নয়, বছরে ২৭৫ মিলিয়ন ডলার। হাঙ্গর প্রদর্শনীতেও আয় হয় বছরে ৩১৪ মিলিয়ন ডলার যা সরাসরি ১০,০০০ চাকুরীর যোগান দিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি এবং অন্যান্য গবেষকের মতে মানুষের স্বাস্থ্য, পরাগায়ন, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, পানির গুণগত মান, খাদ্যের সহজলভ্যতা এবং অন্যান্য জটিল বিষয়গুলোও বাস্তু স্থিতিশীলতার উপর নির্ভশীল।
গবেষকদের বিশ্বাস মানুষ ব্যতীত অন্যান্য প্রাণীর অর্থনৈতিক গুরুত্বের সীমা আরোপ করা আমাদের একটা মস্তবড় ভুল। টিউক্সবারি বলেন, “বন্যপ্রাণীরা আমাদের বস্ত্রের মতো এবং একটি বাস্তব ও বিবর্তনীয় অর্থে এসব প্রাণী আমাদেরকে সেটাই তৈরী করেছে যা আমরা এখন আছি। পৃতিবীর প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকে বন্যপ্রাণীদের হারিয়ে যাওয়া সমগ্র মানব জাতির জন্যই একটি ক্ষতি।” [Seeker- অবলম্বনে]
-শফিকুল ইসলাম