নিচের প্রথম চিত্রে তিনটি রং পৃথকভাবে দেওয়া হয়েছে, যথাক্রমে হলুদ, ফিরোজা এবং ম্যাজেন্টা। তবে আপনারা কেউই সম্ভবতঃ এই রংগুলোর আলোক রশ্মি দেখছেন না। আপনারা দেখছেন লাল, সবুজ এবং নীল! অন্ততঃ আপনাদের চোখে লাল, নীল এবং সবুজ রংএর আলোক রশ্মি প্রবেশ করছে।
বিষয়টিকে আরেকটু বিশদ ব্যাখ্যা করি। ধরি, আপনি পাশের ছবিটির মতো একটি হলুদ রংএর লেবুর ছবি তুললেন, তারপর সেটিকে কম্পিউটারের মনিটরে দেখলেন। তাহলে আপনি যখন লেবুটিকে সরাসরি দেখবেন তখন সত্যিই হলুদ রং দেখবেন। কিন্তু মনিটরে যখন ছবি দেখবেন তখন দেখবেন লাল ও সবুজ রং!
আমাদের চোখে দর্শনের অনুভুতির জন্য তিন ধরনের সেন্সর তথা রিসেপ্টর রয়েছে, এগুলো হচ্ছে লাল, সবুজ ও নীল। তাই এগুলোই হচ্ছে মৌলিক রং। তাহলে বাকী রংগুলো মানুষ কিভাবে দেখে? বাকী রংগুলো এই তিনটি সেন্সরের যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়। সূর্যের আলোতেই তো অনেকগুলো রং আছে। এর সবগুলো কিন্তু মানুষ তিন ধরনের সেন্সর ব্যাবহার করেই দেখে থাকে। যেমন: হলুদ রং এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য লাল ও সবুজের মাঝামাঝি। হলুদ রং তাই লাল ও সবুজ এই দুই ধরনের সেন্সরেই উদ্দীপনা তৈরি করে। নিচের ছবিতে দেখুন, প্রতিটি রিসেপ্টরের পাল্লা বেশ খানিকটা করে একে অপরের উপর ওভারল্যাপ করে। কাজেই আপনি যখন লেবুটি হাতে নিয়ে দেখছেন তখন সত্যিই তাকে হলুদ রং এরই দেখছেন কারণ তা একই সাথে লাল ও সবুজ রিসেপ্টরে অনুভুতি তৈরি করছে।
এখান থেকে আরেকটি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আমরা যদি চোখে হলুদ আলো নিক্ষেপ না করে লাল ও সবুজ আলোর মিশ্রন নিক্ষেপ করি তাহলেও তা হলুদের অনুভূতি তৈরি করবে। হলুদ আলো যেমন লাল ও সবুজ সেন্সরকে উদ্দীপিত করে, লাল ও সবুজের মিশ্রনও এই দুই সেন্সরকে উদ্দীপিত করবে এবং ফলাফল হবে একই। তাই, হলুদ আলো তৈরির জন্য আমরা লাল ও সবুজ এর মিশ্রন সহজেই ব্যাবহার করতে পারি।
একই ভাবে সবুজ ও নীলের সংমিশ্রনে আসমানী/ ফিরোজা, লাল ও নীলের মিশ্রনে গোলাপী বা ম্যাজেন্টা । এই প্রতিটি রংএর অনুপাত কমিয়ে বা বাড়িয়ে আমরা হালকা বা গাঢ় বিভিন্ন ধরনের শেড পেতে পারি। এভাবেই আমাদের চোখে অসংখ্য রং সনাক্ত হয়। কম্পিউটার বা বিভিন্ন যন্ত্রের মনিটরে ঠিক এই মূলনীতির মাধ্যমেই রং তৈরি করা হয়। এসব মনিটরে কেবলমাত্র তিনধরনের রং বিশিষ্ট আলোকউৎস ব্যবহার করা হয় এবং এদের বিভিন্ন কম্বিনেশনেই সবগুলো রং তৈরি করা হয়। তাই আপনি যখন লেবুর ছবি তুলে তা মনিটরে দেখবেন তখন কিন্তু সেটি লাল এবং সবুজ রংএর মিশ্রন হিসেবেই দেখবেন। একই কথা ফিরোজা রংটির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
কিন্তু, ম্যাজেন্টার বিষয়টি ভিন্ন। গ্রাফের ছবিতে দেখুন নীল এবং লাল এর সেন্সরের রংএর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পাল্লা প্রায়সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজেই এমন কোনো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রং পাওয়া যাবে না যা লাল এবং নীল উভয় সেন্সরেই যথেষ্ট পারিমান অনুভুতি তৈরি করবে। তাই ম্যাজেন্টা তৈরি করতে হলে একক কোনো একক তরঙ্গের মাধ্যমে করা যাবে না বরং লাল এবং নীল আলোর মিশ্রনেই তৈরি করতে হবে। প্রকৃতিতে যেসব ম্যাজেন্টা রং আছে সেগুলো আলাদা আলোকতরঙ্গের মিশ্রনেই তৈরি হয়। রংয়ের দর্শন প্রক্রিয়া নিয়ে যদি কারো সংশয় রয়ে যায় তাহলে পূর্ব প্রকাশিত এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন।
-ইমতিয়াজ আহমেদ
সম্পাদক, বিজ্ঞান পত্রিকা
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]