প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে পরমাণু গবেষণা বেশ গতিলাভ করে। এই সময়ে পরমাণুর মুল কণিকার অনেকগুলো আবিষ্কৃত হয়েছিলো এবং অনেকগুলোর বিষয়ে ভবিষ্যৎবানী করা হয়েছিলো।
তবে বিশ্বযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে মুসোলিনি এবং হিটলারের তাড়া খেয়ে বিপুল পরিমান পরমাণু বিজ্ঞানীকে ইউরোপ বিভিন্ন দেশ থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বা মিত্র দেশগুলোতে চলে আসতে হয়। একই সময়ে নিউট্রন দ্বারা আঘাতের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম পরমাণুকে ভেঙ্গে শক্তিউৎপাদন পদ্ধতিও আবিষ্কৃত হয়েছিলো।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিজ্ঞানীমহলে তখন এই বিষয়টি বেশ আতঙ্ক হিসেবে দেখা দেয়। কারণ সেই সময় সবাই বুঝে গিয়েছিলো মিত্র ও অক্ষ শক্তির মধ্যে যারাই আগে ইউরেনিয়ামের শক্তি যুদ্ধে কাজে লাগতে পারবে তারা অন্যদের চেয়ে যুদ্ধে বিপুলভাবে এগিয়ে থাকবে। হাঙ্গেরীর বিজ্ঞানী ড. লিও জিলার্ড ১৯৩৯ সালের দিকে ইউরেনিয়ামের মাধ্যমে একটি চেইন রিএ্যাকশন ঘটিয়ে পারমানবিক বোমা তৈরির সম্ভাবনা দেখতে পেলেন। সেই সময় তিনি হিটলারের ভয়ে পালিয়ে ব্রিটেনে অবস্থান করছিলেন।
তিনি তখন আরো দু’জন বিজ্ঞানীকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরতত আইনস্টাইনকে চেপে ধরলেন এই বিষয়টি নিয়ে, অর্থাৎ ইউরেনিয়ামের ফিশনের মাধ্যমে পারমাণবিক বোমা তৈরির গবেষনার জন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেজিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টকে লেখার জন্য। আইনস্টাইনের খ্যাতি তখন বিশ্বজোড়া। আইনস্টাইন লিখলে প্রেসিডেন্ট বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করতে বাধ্য হবেন এই আশা থেকেই আইনস্টাইনকে দিয়ে অনুরোধ করানো হয়েছিলো।
আইনস্টাইন রাজী হলেন এবং রুজভেল্টকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানালেন (ছবিতে রুজভেল্টকে লেখা আইনস্টাইনের একটি চিঠি দেখানো হলো)। রুজভেল্ট চিঠি পেয়ে এর গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং এর দ্বারা অনুপ্রাণীত হয়ে বছরে শেষে এক শনিবারে সেই কার্যাদেশ জারি করলেন যা পরবর্তীতে ম্যানহাটন প্রোজেক্ট নামে পরিচিতি লাভ করে-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই ধরনের একটি অর্থহীন নাম রাখা হয়েছিল এর মূল উদ্দেশ্য আড়াল করার জন্য।
এই প্রোজেক্টের জন্য জিলার্ডের চাপ প্রয়োগের সময়টি ছিলো বেশ ভাগ্যপ্রসূত। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই ধরনের কাজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা কমই ঘটে। যদি রুজভেল্ট সইয়ের কাজটি পরবর্তী কার্যদিবস সোমবারের জন্য ফেলে রাখতেন তাহলে এটি আর স্বাক্ষরিত না-ও হতে পারত- যেই শনিবারে তিনি এটি স্বাক্ষর করেন সেটি ছিল ৬ ডিসেম্বর, ১৯৪১, এবং তার ঠিক পরের দিনই জাপান পার্ল হারবার আক্রমন করে বসে। কে বলতে পারে রুজভেল্ট এই বিষয়টি নিয়ে আবারো ভাবার সময় পেতেন কিনা।
প্রোজেক্টটি খুব দ্রুত বেগে অগ্রসর হলো এবং এবং ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে একটি পারমাণবিক বোমা (আরো যথাযথভাবে বললে একটি নিউক্লিয় ফিশন বোমা) তৈরি হলো, যখন জার্মান বাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে গেল এবং হিটলার আত্মহত্য্যা করলেন। এই বোমাটিকে সেই সময় একটি নিরাশ্রয় জাপানের উপর ১৯৪৫ সালের ৬ এবং ৮ আগস্ট নিক্ষেপ করা হলো।