বৈজ্ঞানিক গবেষনাপত্রগুলো সাধারণতঃ কাটখোট্টা ধরনের ও নিরস হয়ে থাকে। ভারী ভারী শিরোনামে, যথাযথ তথ্যের উপস্থিতিই দেখা যায় এসব লেখায়। কিন্তু এর মধ্যে এই গবেষণাপত্রটি ব্যাতিক্রম যা প্রকাশিত হয়েছে Meteoritics & Planetary Science জার্নালে। গবেষনাটির শিরোনাম: তুতানখামেনের ছোরার উল্কাপিন্ডীয় উৎস।” হ্যাঁ, তুতানখামেনের ছুরি এসেছে দুনিয়ার বাইরে থেকে।
বালক ফারাও রাজা, তুতানখামেন খৃষ্টপূর্ব ১৩৩২ থেকে ১৩২৩ সাল পর্যন্ত মিশর শাসন করেছেন। ১৯২২ সালে খননের মাধ্যমে তাঁর কবর উন্মোচিত করা হয়, যেখানে তাঁর সুশোভিত অলংকৃত ছোরাটিও রাখা ছিলো। ইতালীও এবং মিশরীয় গবেষকদের একটি দল এক্স-রে বিশ্লেষনের মাধ্যমে দেখেছেন ছুরিটির ফলে সামান্য নিকেল ও কোবাল্ট মিশ্রনসহ মোটের উপর লোহা দিয়ে তৈরি। এর মানে হলো এই ছোরাটি সৌরজগতের সবচেয়ে প্রাচীন বস্তুগুলোর একটি, লৌহ উল্কা দিয়ে তৈরি হয়েছে।
উক্লাপিন্ডীয় ছোরা শুধুই লোভনীয় পর্যায়ের সুন্দরনয়, বরং এতে মিশরীয় হস্তশিল্পের ছাপ রয়েছে যা থেকে দেখা যায় প্রাচীন মিশরীয় শিল্পীগণ লৌহযুগের অনেক আগেই পৃথিবীতে আগত উল্লাপিন্ডের লোহা ব্যবহার করে এই শিল্পের বিকাশ শুরু করেছিলেন।
যে প্রযুক্তির মাধ্যমে ছুরির উপাদান বিশ্লেষণ করা হয়েছে তা হলো X-ray fluorescence spectroscopy। এই ক্ষেত্রে পরীক্ষাধীন নমুনাকে শক্তিপ্রদানের মাধ্যমে উত্তেজিত করা হয়। তারপর সেই উত্তেজিত নমুনার বিভিন্ন পরমাণু বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে শক্তি বিকিরণ করে। যার মাধ্যমে গবেষকগণ একটি নমুনায় অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের পরমাণুকে আলাদাভাবে শনাক্ত করতে পারেন। এতে পরীক্ষিত নমুনাটিরও কোনো ধরনের ক্ষতি সাধিত হয় না, ফলে প্রাচীন মূল্যবান বস্তুগুলোকে সুরক্ষিত অবস্থায় পরীক্ষা করা যায়।
২০ টি সংরক্ষিত উল্কাপিন্ডের উপাদানের রেকর্ড বিশ্লেষণ করে, এবং ছুরির উপাদানের সাথে মিলিয়ে দেখে গবেষকগণ উল্কাপতনের স্থানও নির্ধারণ করে ফেলেছেন, যা প্রাচীন শহরের আলেজান্দ্রিয়ার কাছাকাছি পশ্চিম দিকে অবস্থিত। উল্কাপিন্ডটিকে সংগ্রহ করার জন্য মিশরীয়দের কয়েকশ কিলোমিটার অতিক্রম করে এই স্থানে পৌঁছাতে হয়েছে। ফলে ধারনা করা হয়, তাঁরা উল্কাটিকে আকাশে থাকা অবস্থায় পতিত হতে এবং খন্ড-বিখন্ড হয়ে যেতে দেখেছেন।
-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
২. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া