প্রায় ৯৯ মিলিয়ন বছর আগে এক অল্প বয়ষ্ক ডায়নোসর একটি আঠালো ফাঁদে আটকা পড়ে এবং এর লেজের একটি খন্ড সেখানে ফেলে যায়। ডায়নোসরের ফেলে যাওয়া অবশিষ্ঠাংশই জীবাশ্মবিজ্ঞানীদের জন্য বড় ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে এদের বিবর্তনের উপর নতুন করে আলোকপাত করার। কোটি কোটি বছর পরে সম্প্রতি গবেষকগণ আম্বরের মাঝে সংরক্ষিত একটি পালকসহ নরম টিস্যুর লেজের সন্ধান পেয়েছেন।
নতুন এক গবেষণায় গবেষকগণ অসাধারণ এই নমুনার বর্ণনা করেছেন। মাংসভোজী এবং পালক বিশিষ্ট এই প্রাণীটিকে নোনাভিয়ান থিরোপড প্রজাতির ডায়নোসর হিসেবে শনাক্ত করা হয়। আম্বরের এই সংরক্ষণ ডায়নোসরের জীবতত্ত্বের যে ছবি প্রদান করছে তা জীবাশ্ম নথিতে পাওয়া যায় না এবং এটি বিলুপ্ত ডায়নোসরের গঠনপ্রণালীতে থাকা পালকের এক বিরল আভাস দিয়ে যায়। এই বিষয়টি বিজ্ঞানীদেরকে ডাইনোসরের পারিবারিক ইতিহাসে পালকের বিবর্তন বুঝতে সাহায্য করবে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, গত দুই দশক ধরে নোনাভিয়ান ডাইনোসরের শরীরে পালক উৎপাদিত হওয়ার বিভিন্ন ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও অতি সম্প্রতি পাওয়া এই পালকগুলো একটি অসম্পূর্ণ ছবি উপস্থাপন করে। জীবাশ্ম পালক সাধারণত সংকুচিত ও বিকৃত হয়ে থাকে যা থেকে ত্রিমাত্রিক আকারে পুণর্গঠন করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় ভূতাত্বিক নথিতে এগুলোকে কোন প্রকার কঙ্কালের অবশিষ্ঠাংশ ছাড়াই পাওয়া যায়। ফলে ফসিলবিদদের পক্ষে এদের প্রজাতি শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
কিন্তু আম্বর এগুলোকে ত্রিমাত্রিক গঠনের সাথে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করে রাখে। গবেষণায় উল্লেখিত লেজের টুকরোটির আকার প্রায় ১.৪ ইঞ্চি (৩৬.৭ মিলিমিটার) বলা হয়েছে এবং এর উপরের দিক দিয়ে ঘন পালকে আবৃত। যা দেখতে লালচে বাদামী এবং নিচের দিকে সরু হয়ে গিয়েছে।
কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (CT) স্ক্যানের মাধ্যমে নরম কোষ যেমন ত্বক, লিগামেন্ট ও পেশী পরীক্ষা করে দেখা যায় এগুলো বেশিরভাগই কার্বন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়চ্ছে। লেখক উল্লেখ করেন, লেজটিতে অন্তত আটটি কশেরুকা রয়েছে এবং হাড়ের গঠন ইঙ্গিত করছে সম্ভবত এতে প্রায় পঁচিশটি কশেরুকা ছিলো। এটাও বোঝা যাচ্ছে যে, ডায়নোসরটি পূর্ণ বয়স্ক ছিলনা। আর এই লেজের হাড় দেখে ধারণা করা হচ্ছে এটি থিরোপড প্রজাতির coelurosaur নামের একটি ডায়নোসর ছিলো যার বৈশিষ্ট্য অনেকটা পাখিদের মতো ।
এই আশ্চর্যজনক আবিষ্কারটি আম্বরের এক অনন্য ভূমিকা প্রকাশ করে যার মাধ্যমে বিজ্ঞানীদের দেখার সুযোগ করে দেয় লক্ষ লক্ষ বছর আগে প্রানীগুলো দেখতে কেমন ছিলো। সেই সাথে এদের বিবর্তিত ও বিলুপ্ত প্রজাতির মধ্যে কিরূপ সম্পর্ক ছিলো।
এক বিবৃতিতে গবেষনাটির সহরচয়িতা এবং কানাডার রয়েল সাসকাচোয়ান জাদুঘরের কিউরেটর রায়ান ম্যাককেলার বলেন, “আম্বরের টুকরোটি প্রাচীন বস্তুতন্ত্রের ক্ষুদ্র দৃশ্যপট সংরক্ষণ করেছে তবে এটি আণুবীক্ষণিক বিবরণ ত্রিমাত্রিক আকারে সংরক্ষণ করেছে, যা অন্যান্য ক্ষেত্রের বেলায় গবেষণা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এটি জীবাশ্ম সম্পদের হিসেব রক্ষায় একটি নতুন উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।” [লাইভসাইন্স অবলম্বনে]
-শফিকুল ইসলাম