একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব এবং তাই সকলের মনোযোগ প্রত্যাশা করব।
একটি ব্যাক্টেরিয়ার যখন বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে তখন তার ডিএনএতে প্রতিলিপি হয়। সবসময় ডিএনএর অবিকল প্রতিলিপি হয় না। কখনো কখনো ভুল হয়ে যায়। এই ভুলগুলোকে মিউটেশন বলে। মিউটেশনই একটি জীবের বিবর্তনের একক। ডিএনএ যেহেতু জীবের সব বংশগতির বৈশিষ্ট্য ধারণ করে তাই মিউটেশন হলে তার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। এভাবে ছোট ছোট মিউটেশনের ফলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে গিয়ে একসময় তা অনেক বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি করে। মিউটেশন কখনো কখনো জীবের টিকে থাকার জন্য ভালো হয়। যখন ভালো হয় তখন ভালো বৈশিষ্ট্যের জীবগুলোর টিকে থাকার প্রবণতা বেড়ে যায় প্রতিযোগীতার কারণে এবং অন্যরা অপেক্ষাকৃত ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এটাই বিবর্তনের মূলনীতি।
এখন আমাদের শরীরে যখন ব্যক্টেরিয়া আক্রমন করে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটায় তখনো এদের মিউটেশন চলতে থাকে। আমরা যখন এন্টিবায়োটিক সেবন করি তখন তা এই ব্যক্টেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলতে শুরু করে। কিন্তু যদি কোনো মিউটেশনে সেবনকৃত এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে সামান্য প্রতিরোধ তৈরি হয় তাহলে সেগুলো মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সবার শেষে। এই অবস্থায় কেউ যদি মাঝপথে এন্টিবায়োটিক সেবন বন্ধ করে দেয় তাহলে অপেক্ষাকৃত প্রতিরোধকারী ব্যক্টেরিয়াগুলো বেঁচে যাবে এবং তারাই বংশবৃদ্ধি ঘটাবে।
কিন্তু এন্টিবায়োটিকের ডোজ সম্পূর্ণ করলে এইসব ব্যক্টেরিয়াই মারা যেত কেননা এদের মধ্যে তখনো প্রতিরোধ তেমন তৈরি হয় নি। কিন্তু বারংবার যদি এভাবে ডোজ সম্পূর্ণ না করে এন্টিবায়োটিক সেবন করা হতে থাকে তাহলে এই প্রক্রিয়ায় একসময় ব্যাক্টেরিয়ার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে বাড়তে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। ফলে তখন আর ওই এন্টিবায়োটিকটি এই বিশেষ ব্যক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে আর কোনো ধরনের প্রতিরোধ তৈরি করতে পারবে না।
এধরনের ঘটনাই ঘটছে সারা পৃথিবী জুড়ে। দিন দিন রোগের জীবাণুগুলো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে এবং যথেচ্ছা সেবনে এন্টিবায়োটিকগুলো কার্যকারিতা হারাচ্ছে। যদিও মাঝে মাঝে নতুন এন্টিবায়োটিক তৈরি হচ্ছে কিন্তু সেগুলো যথেষ্ট নয়। এভাবে চলতে থাকলে একসময় সাধারণ সব জীবাণুঘটিত রোগও আর নিরাময় করা যাবে না, এবং ছোটখাট কাটা-ছেঁড়ায়, কাশিতে মানুষের মৃত্যু ঘটবে। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সামান্য কাটা-ছেঁড়া হালকা জ্বর ইত্যাদি হলেই দোকানে গিয়ে দুচারটি এন্টিবায়োটিক কিনে এনে সেবন করতে দেখা যায়। এতে একদিকে যেমন রোগ নিরাময়ে কোনো কাজে আসে না, অপরদিকে ডোজ পূর্ণ না করায় জীবানু অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। কাজেই এন্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষেত্রে সর্বদাই অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। সাধারণ ভাইরাস জ্বরে এন্টিবায়োটিক কোনো কাজে আসে না, বরং ব্যক্টেরিয়া বা অন্যান্য জীবাণুঘটিত রোগের ক্ষেত্রেই এন্টিবায়োটিক কাজে দেয়। আর এন্টিবায়োটিক একবার সেবন করলে তার ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে। দু-চারটি খেয়ে বাদ দেওয়া যাবে না।
এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে না পারলে আপনার নিজের এবং সন্তান/সন্ততির ক্ষেত্রেই এর কুফল পড়বে। আপনার জীবদ্দশাতেই তা দেখে যেতে হতে পারে আপনাকে। আপনি বিবর্তনে বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, এন্টিবায়োটিকের এই কুফল উপেক্ষা করতে হলে আপনাকে এই সতর্কতা মেনে চলতেই হবে। তাই আসুন সচেতন হই, যথেচ্ছা এন্টিবায়োটিক ব্যবহার বর্জন করি আর অন্যদের মাঝে এই সচেতনতা ছড়িয়ে দিই।
-ইমতিয়াজ আহমেদ
সম্পাদক, বিজ্ঞান পত্রিকা
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]
বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত ভিডিওগুলো দেখতে পাবেন ইউটিউবে। লিংক:
১. টেলিভিশনঃ তখন ও এখন
২. স্পেস এক্সের মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা
3. মাইক্রোস্কোপের নিচের দুনিয়া