বায়ু জাহাজের গল্প

0
589

এ্যারোপ্লেন আবিষ্কারের আগে হাইড্রোজেন গ্যাসে ভরা বেলুনে চড়ে মানুষ আকাশ ভ্রমণ করেছে। কিন্তু সাধারণ বেলুনে চড়ে উপরের দিকে ওঠা যতটা সহজ ভূমির সমান্তরালে একস্থান থেকে অপর স্থানে ভ্রমন করা ততোটাই কঠিন। তাই বেলুনকে সমান্তরালে ভ্রমনযোগ্য করার জন্য এয়ার শিপ (air ship) বা বায়ু জাহাজের আবির্ভাব ঘটে। ১৮৭৪ সালে সর্বপ্রথম একজন জার্মান, কাউন্ট ফার্দিনান্দ ভন জেপেলিন এই ধরনের বায়ু জাহাজের একটি ব্যবহারিক নকশা প্রণয়ন করেন। ১৮৯০ সালে প্রথম সফল জাহাজটি নির্মান সম্পন্ন হয়। তাঁর নামানুসারে এগুলো জেপেলিন নামেই পরিচিতি লাভ করে। একটি ক্যাপসুলাকৃতির ডুরালুমিনের তৈরি দৃঢ় কাঠামোর উপরে কাপড় জড়িয়ে এই বায়ুজাহাজের বেলুন তৈরি করা হয়। এগুলোর সাথে স্থিতিশীলতার জন্য কিছু পাখনা যুক্ত করা হয়। নিচের দিকে যাত্রীবহনের চেম্বার এবং পানিতে ভাসমান জাহাজের মতোই ইঞ্জিনযুক্ত প্রপেলার থাকে। এগুলোকে নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমেই জ্যাপেলিনের গতি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়।

এই জেপেলিনগুলো অল্প সময়ের মধ্যে ইউরোপে যাত্রী স্থানান্তরের জন্য বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এ্যারোপ্লেন উদ্ভাবনের পরেও এগুলোর জনপ্রিয়তা অব্যহত থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বোমারু বিমান হিসেবেও এগুলোর যথেষ্ট কদর ছিলো। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে বোমারু ও যুদ্ধ জেপেলিনগুলো যাত্রীবাহী জাহাজে রূপান্তরিত হয়।

কিন্তু এই বায়ু জাহাজগুলোর একটি বড় ত্রুটি ছিলো। এদের বেলুনে হালকা গ্যাস হিসেবে ব্যবহার করা হতো হাইড্রোজেন। হাইড্রোজেন অত্যন্ত দাহ্য হওয়ায় কোনো কারণে বেলুনে ফাটল ধরলে খুব সহজে আগুন ধরে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিলো ১৯৩৭ সালের ৬ মে জার্মানীর যাত্রীবাহী বায়ু জাহাজ LZ ১২৯ হিন্ডেনবার্গে। যুক্তরাষ্ট্রের লেকশায়ারে স্থাপিত মাস্তুলে ভেড়ার সময় স্ট্যাটিক ইলেক্ট্রিসিটির প্রভাবে আগুন ধরে গেলে ৯৭ জন যাত্রীর মধ্যে ৩৫ জন এবং ভুমিতে অবস্থিত একজন কর্মী সহ মোট ৩৬ জন নিহত হয়। ইতিহাসে এটি হিন্ডেনবার্গ ডিজেস্টার নামে পরিচিত।

japeline
হিন্ডেনবার্গ ডিজেস্টার

জেপেলিন কোম্পানী পরবর্তীতে হাইড্রোজেনের পরিবর্তে হিলিয়াম ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের যাত্রীবহন চালিয়ে যেতে চাইলেও তৎকালীন ইউরোপে হিলিয়াম সহজলভ্য না হওয়ায় এবং ইতিমধ্যে এ্যারোপ্লেন জনপ্রিয় হতে থাকায় জ্যাপেলিনের মৃত্য ঘটে। তবে একবারে পুরোপুরি বিলুপ্তি এর ঘটেনি। মাঝে মাঝে কিছু কিছু স্থানে খুব সীমিত পরিসরে জ্যাপেলিনে যাত্রী পরিবহন বিদ্যমান থেকেছে। সামরিক ক্ষেত্রে পন্য আনা-নেওয়ার কাজেও এর ব্যবহার রয়েছে। এখনো এর নতুন নতুন নকশা তৈরি ও নির্মান চালু রয়েছে।

-বিজ্ঞান পত্রিকা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.