কাজাখস্তানে রহস্যময় প্রকান্ড সৃতিস্তম্ভের সন্ধান লাভ

0
521

প্রত্নতত্ত্ববিদগণ কাজাখস্থানে কাসপিয়ান সাগরের কাছাকাছি ১,৫০০ বছর বয়সী প্রকান্ড আকারের এক পাথুরে স্মৃতিস্তম্ভ আবিষ্কার করেছেন। এর গঠন যুক্তরাজ্যের স্টোনহেঞ্জের কথা স্বরণ করিয়ে দেয়। এতে ভূমির ভেতর পৃথক ভাবে পাথরের ফলক বসানো রয়েছে, তবে খুব একটা বেশি গভীরে নয়।

স্মৃতি স্তম্ভটি ৩০০ একরের জায়গা জুড়ে একটি খাড়ি দ্বারা বেষ্টিত ছিল যা আয়তনে আমেরিকার ২০০ টি ফুটবল মাঠের সমান এবং গবেষকদের ধারণা এটি হুন বংশীয়দের দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছিল।

পাথরের প্রত্যেকটি ফলকের গঠন বিভিন্ন আকৃতির। যার ছোট ফলকটি লম্ব ও প্রস্থে ৪ মিটার এবং অন্যান্যগুলো ৩৪ থেকে ২৪ মিটার। এ পর্যায়ে কেউই পুরোপুরি নিশ্চিত নয় কেন পাথরগুলোর আকার এমন ভিন্ন।

কাজাখস্তান এবং রাশিয়ার গবেষকগণ এখনো এই বিশাল এবং বিস্ময়কর কাঠামো তৈরীর পেছনে কাদের অবদান থাকতে পারে তা খোঁজ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০১০ সালে এই স্মৃতিস্তম্ভটি প্রথম নজরে আসে যখন Altÿnkazgan অঞ্চলে একজন ব্যক্তির ধাতু শনাক্তকারী যন্ত্রে অদ্ভূত কিছু শব্দের সাথে একটি ফলকের পাশে এক টুকরো রূপার জিন দেখতে পান। প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে একজন অপেশাদার প্রাচীন সম্পদ অনুসন্ধানকারীর কাছে ভূগর্ভে অস্বাভাবিক কিছু খুঁজে পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এই আবিষ্কার স্থানীয় ঐ লোকটিকে কাজাখস্তানের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক মজুদ থাকতে পারে এই হিসেবেই তিনি উৎসাহিত হন তা খুঁজে বের করতে।

ফলক সম্পর্কে দলটি লিখেছেন, “এর উপরের অসাধারণ কারুকার্য এর মালিকানার একটা ধারণা দেবে বলে আশা করছি। রূপার লেখনি খুব যত্নের সাথে কারুকার্যের আকারের উপর বসিয়ে তারপর লাগানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”

কিন্তু একসময় দলটির অনুসন্ধানের পথে বাধার সৃষ্টি হয়। দুর্ভাগ্যবশত এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণার কাজে নিয়োজিত হওয়ার জন্য উপযোগী ছিলনা। এমনকি ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই অবস্থা চলার পর এই প্রবন্ধের লেখক অয়েন জরাস এ জায়গার কিছু অংশ খনন করতে পেরেছিলেন।

অবশেষে জায়গাটি আবিষ্কারের চার বছর পর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তহবিল গঠন করা হয়। দলটি দেখতে পায়, পাথরের গঠন তাঁদের ধারণারও আগের সময়ের এবং সেখানে তাঁরা আরও কিছু রূপার জিন খুঁজে পেলেন। কিন্তু এগুলো কে তৈরী করতে পারে এবং এখানে কেন বসিয়ে থাকতে পারে সে উদ্দেশ্য জানা যায়নি।

দলটি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয় তবে তাঁদের কাছে কিছু ধারণা রয়েছে। রূপার জিনের উপর পাওয়া চিহ্ন দেখে তাঁরা ধারণা করছেন, যখন রোম সম্রাজ্যের পতন হয়েছিল ঠিক ঐ সময়ের এক যাযাবর গোষ্ঠি দ্বারা এটা নির্মিত হয়ে থাকবে।

ঐ এলাকায় শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠির সম্ভাবনাই থাকতে পারে যেটা হুন নামক যাযাবর গোষ্ঠি। যারা পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ায় প্রথম ও সপ্তম শতকের মাঝে শত শত বছর এসব অঞ্চলে লুটতরাজ ও লুন্ঠন করে থাকত। যদিও দলটি বলছে, একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌছানোর পূর্বে আরো কিছু প্রমাণের প্রয়োজন রয়েছে।

দলটি আরও লিখেছে, “হুন গোষ্ঠীর পূর্ব প্রজন্মকে তাদের আবাসভূমি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য ইউরেশীয়ার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী চেষ্টা করেছে।” এখান থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, হুনরা সম্ভবত আরেকটি দল দ্বারা তাদের থেকে উচ্ছেদ হওয়ার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করেছিল। আর এই শিল্পকর্ম সেই দেশান্তরের উচ্ছিষ্ট।

ঠিক কি কারণে এই পাথরের ফলকগুলো তৈরী করা হয়েছিল সেটা জানার চেষ্টাও চলছে। একটি পাথরের পাশে কঙ্কালের দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু সেগুলোর বয়স এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। যার ফলে তাঁরা এখনও বলতে পারছেনা এটা কি পাথর গুলো কবর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা। আপনি এর দিকে খায়াল করলে কবরের মতো তেমন কিছু বুঝতে পারবেন না।

এর কাঠামো এবং নিকটবর্তী জিনের তাৎপর্য বুঝার জন্যে দলটির আরও গবেষণা ও জমি খনন করার প্রয়োজন পরবে। কিন্তু ২০১৭ সালের মধ্যেই সম্ভবত একটি বিস্তারিত ধারণা দিতে পারবে তাঁরা।

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.