মিশরের প্রাচীন শহরে ফারাও সম্রাটের ভূগর্ভস্থ নৌকা সমাধির সন্ধান মিলেছে

0
443

নীল নদের পশ্চিম অংশ মিশরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলোর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল এখান থেকে একটি রাজকীয় নৌকা সমাধি আবিষ্কার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে সমাধিটি মিশরের মধ্য রাজ্যের শক্তিশালী শাসকদের মাঝে অন্যতম ফারাও তৃতীয় সেনওসরেট এর।

ফারাও তৃতীয় সেনওসরেট কে প্রাচীন মিশরের ১২তম রাজবংশের সবচেয়ে প্রভাবশালী শাসক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তৃতীয় সেনওসরেট ১৮৭৮ খ্রিঃপূঃ থেকে ১৮৩৯ খ্রিঃপূঃ পর্যন্ত শাসন করেন। সে সময়ে জাতিটি প্রচুর সমৃদ্ধি, ক্ষমতা এবং নগর উন্নয়নে এগিয়ে ছিল।

৩,৮০০ বছর বয়সী রাজকীয় কক্ষটির ভেতরের দেয়ালগুলোতে ১২০টি প্রাচীন নৌকার বহর খোদাই করা রয়েছে এবং সাথে একটি কাঠের নৌকার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। যা প্রমাণ করে ১৮৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেও  রাজবংশীয়দের সমাধীর পাশে নৌকা কবর দেয়ার রীতি অনুশীলন করা হতো।

পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রত্নতত্ত্ববিদ জোসেফ ওইংগার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে বলেন, “এটা আমাদের অনেকটা হতভম্ব করেছে, আমরা ভেবেছি এটা কোন সমাধি হবে।”

বিশাল এই ভূগর্ভস্থ হলটি একসময় ২১ মিটার লম্বা এবং ৪ মিটার চওড়ায় বিস্তৃত ছিল। ১৯০১ সালে প্রাচীন এবিডোস শহরের নিচে বালির মাঝে সরু নালাযুক্ত একটি ছাদ দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। কিন্তু যখন খনন কাজ পরিচালনা করা হচ্ছিল তখন এর ছাদ ধ্বসে পরে। আর তখন থেকে আজ পর্যন্ত প্রকল্পটি পরিত্যাক্ত ছিল।

ওইংগার এবং তাঁর দল গত দুই বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন প্রায় ১০০ টির মতো মৃৎশিল্পের পাত্রের গুদাম ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।

গবেষক জানান, “খোলা পাত্রগুলো মূলত তরলে ভর্তি যা ‘বিয়ারের গুদাম’ হিসেবেই পরিচিত। সম্ভবত এগুলো বিভিন্ন তরল সংরক্ষণ এবং পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত হতো।”

বিশেষ কিছু কারণে হয়তো এই নৌকা চিত্রিত করা হয়েছিল। ১২০ টি নৌকা ভূগর্ভস্থ এলাকায় প্রায় চার শতাব্দী পর্যন্ত টিকে ছিল, যেখানে এদের অধিকাংশই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। নৌকাগুলোতে কিছু গবাদি পশু, হরিণ এবং ফ্লোরাল নকশা বিক্ষিপ্তভাবে খোদাই করা রয়েছে। এদের মঝে কিছু নৌকার ব্যাপ্তি প্লাস্টার দেয়ালের ১.৫ ফুট উচ্চতায়  রয়েছে। যার ফলে আপনি পরিষ্কারভাবেই এদের পাটাতন, কেবিন, পাল এবং কিছুক্ষেত্রে এদের দাঁড়টানা লক্ষ্য করতে পারবেন।

এই খোদাই করা নৌকা দিয়ে ফারাওয়ের নিজের বহরকে বুঝানো হচ্ছে নাকি মিশরের অন্যসব সাধারণ নৌকাকে বুঝানো হচ্ছে এটা পরিষ্কার নয়। আর এখন পর্যন্ত জানার কোন উপায় নেই কার জন্য এসব অলঙ্করণ করা হয়েছিলো। কিন্তু এটা রাজকীয় সমাধিস্থলের পাশে নৌকা সমাহিত করার একটা দীর্ঘ ঐতিহ্যকেই বহন করে।

গবেষক আরও জানান, “যদিও এই চিত্রগুলোকে ঘিরে বহু প্রশ্ন রয়েছে, তবে স্তম্ভিতকর প্রশ্নটি হচ্ছে কোন বিশেষ কারণে একই জায়গায় এত সংখ্যক নৌকা এক সঙ্গে আঁকা হয়ে থাকতে পারে?”

বাইরের কিছু পাত্র
বাইরের কিছু পাত্র
কক্ষের ভেতরের চিত্র
কক্ষের ভেতরের চিত্র
খোদাইকৃত নৌকার চিত্র
খোদাইকৃত নৌকার চিত্র

তৃতীয় সেনওসরেটের সাথে নৌকা সমাধির একটা যোগসূত্র থাকতে পারে কারণ, নৌকার ধ্বংসাবশেষ তাঁর সমাধির পাশেই পাওয়া গেছে এবং এদের দুটো সমাধির তারিখ ও একই সময়ের। গবেষকরা জানান, নৌকা সমাধিটি তৃতীয় সেনওসরেটের সমাধিস্থ কমপ্লেক্সের প্রবেশ পথের ৬৫ মিটার পূর্বে অবস্থিত।

যেহেতু ব্যবহুল কাঠ দিয়ে বানানো হয়েছিল তাঁর সমাহিত করা নৌকাটি সেহেতু দীর্ঘদিনে হয় বাকিটা চুরি হয়েছে অথবা পচে গিয়েছে। শুধুমাত্র এর কয়েক টুকরো তক্তা প্রত্নতত্ত্ববিদরা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। নৌকা সমাহিত করার একটা কারণ হতে পারে, তৃতীয় সেনওসরেট তাঁর পরবর্তী জীবনের জন্য ভূগর্ভে রসদ জমা রাখাতে পছন্দ করতেন। যার ফলশ্রুতিতেই ৩,৮০০ বছর পরেও আমরা ঐসব খোদাইকৃত নৌকার চিত্র দেখতে পাচ্ছি।

-শফিকুল ইসলাম

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.