‘পেশী স্মৃতি’র প্রকৃত কোন অস্তিত্ত্ব নেই

0
347

আমাদের মাঝে অনেকেই রয়েছেন যারা ‘পেশীর স্মৃতি’তে বিশ্বাস করে থাকেন। কিন্তু গবেষকগণ এমন কিছু প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন যার মাধ্যমে তাঁরা বলছেন আসলে ‘পেশী স্মৃতির’ আদৌ কোন অস্তিত্ব নেই। পেশী স্মৃতি বলতে পেশীর এমন ক্ষমতাকে বোঝানো হয় যা এর দৈনন্দিন নড়াচড়া মনে রাখতে পারে। এমনকি পেশী কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও তা স্মরণ করতে পারে।

যদিও এটা তাদের প্রত্যেকের কাছে দুঃসংবাদের মতো যারা এখনো মনে করেন ছোট বেলায় তারা যেভাবে স্কেট বোর্ড নিয়ে খেলা করেছেন সেটা এখনও করতে পারবেন। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে অতীতে কোন কাজের দক্ষতা অর্জিত হয়ে না থাকলেও জীবনের পরবর্তী অংশে তা শেখা যায়।

স্টকহোমের ক্যারোলিংকা ইন্সটিটিউট থেকে মেলিন লিন্ডম লাইভ সাইন্স কে বলেন, “যদি ছোট বেলার কোন দক্ষতা আপনার নাও থেকে থাকে তবে আপনি একজন প্রশিক্ষিত ব্যাক্তির মতোই কোন দক্ষতায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন, তাতে কোন অসুবিধা হবেনা। আর এটা সেদিক থেকে অনেককে উৎসাহিত করছে।”

কোন নির্দিষ্ট কাজ করার পর তা কত সময় পর্যন্ত মাংসপেশীতে জেনেটিক ভাবে অবস্থান করে তা তদন্ত করার জন্য লিন্ডম ও তাঁর দল ২৩ জন ব্যাক্তিকে নিয়োগ করেন। তাদের প্রত্যেককে এক পা দিয়ে মিনিটে ৬০ টি করে লাথি মারতে বলা হয় ৪৫ মিনিটের জন্য। আর এই ব্যায়ামটি প্রতি সপ্তাহে চারবার করে তিন মাস চালিয়ে যেতে বলা হয়।

তারপর নয় মাস বিরতি দিয়ে অংশগ্রহণকারীদের আবার অনুরূপ ব্যায়ামটি করতে বলা হয়, তবে এবার উভয় পা ব্যাবহার করে। যখন তাদের ব্যায়াম শেষ হলো এর পর প্রত্যেকেই তাদের উভয় পায়ের মাংসপেশীর বায়োপসি পরীক্ষায় অংশ নিলো । যাতে তারা প্রশিক্ষণের পূর্বের পা এবং পরের পায়ের মাংসপেশীর জেনেটিক প্রতিক্রিয়ার পার্থক্য দেখতে পারে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণকারীরা তাদের দু পায়ের মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পায়নি। যদিও এক পা দিয়ে তারা বেশী সময় ব্যায়াম করেছে। অবশেষে দলটি এই উপসংহারে আসলেন, দীর্ঘ সময় ধরে প্রশিক্ষন নিলেও মাংসপেশী জেনেটিক পর্যায়ে কোন ক্রিয়া মনে রাখতে পারেনা।

অন্য কথায় লোক মুখের কথাই সত্যি। ‘ব্যবহার করুন নয় তো হারিয়ে ফেলবেন’ বিশেষত যদি এটা পেশী প্রশিক্ষণের বিষয় হয়।

লিন্ডম আরোও বলেন, “যদি প্রশিক্ষণের কোন সময় আপনি আপনার পা ভাঙ্গার মতো নাটকীয় কাজ করে ফেলেন, তবে যতো দ্রুত সম্ভব সেখানেই থেমে যান। কারণ আপনি মাংসপেশীর একটি বড় অংশ হারিয়ে ফেলেছেন এবং সহনশীলতার প্রশিক্ষণ দ্রুতই কাজ করে।”

কিন্তু লিন্ডমের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, কোন কাজ মনে করিয়ে দেয়ার জন্য পেশীর ভেতরের স্নায়ু এবং আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতি একসাথে মিলিত হয়ে কাজ করে। যার ফলে আমরা কিভাবে মটর সাইকেল চালাতে হয় তা ভুলে যাইনা। এমনকি যদি আমরা বছরে একবারও সেটা চালাই।

এর মানে হলো, একজন পেশাদার ক্রীড়াবিদ হয়তো তার সম্ভাব্য দক্ষতার উচ্চ মাত্রা একটি লম্বা সময়ের জন্য ধরে রাখতে পারে। কিন্তু মস্তিষ্কের চাহিদা অনুসারে তার পেশীগুলো মনে করতে পারেনা কিভাবে প্রয়োজনীয় বল উৎপন্ন করে তার দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে।

আপনাকে একটি শিশুর মতো করে টেনিস খেলতে বলা হলো যদিও আপনি এটা গত কুড়ি বছর আগে হাতে নিয়েছিলেন। আপনার মস্তিষ্ক হয়তো জানবে কিভাবে এটা খেলতে হয় কিন্তু আপনার মাংসপেশী আপনাকে একজন সফল খেলোয়ারের মতো করে খেলার সঠিক পথ মনে করে দিতে পারবেনা।

লিন্ডম বলেন, “আপনার স্নায়ু শিখেছে পেশীর কোন অংশকে পরিচালনা করলে একটি নির্দিষ্ট নড়াচড়া করা সম্ভব হবে।ওদি আপনি আপনার মাংসপেশীকে প্রশিক্ষিত না করেন তবে সে পয়োজনীয় বল প্রয়োগ করে কাজটি সমপন্ন করতে পারবেনা।”

দলটি বলেন এই কারণেই আমাদের মাংসপেশী ‘ভুলে যায়’ এবং বিবর্তনের ধারায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে বেড়ে উঠতে থাকে। তাহলে কি আমাদের মাংসপেশীকে সচল ও প্রস্তুত রাখার জন্য প্রচুর ক্যালরি খরচ করতে হবে, যদিও এটার প্রয়োজন ছিলোনা?

লিন্ডমের মতে, মাংসপেশীকে বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় সচল রাখা আসলেই খরচসাধ্য ব্যাপার। তাই মাংসপেশী ব্যাবহারের প্রয়োজনীয়তা না থাকলে দেহের শক্তি খরচ করার কোন কারণ নেই।

সবশেষে, আপনি যদি একজন দক্ষ খেলোয়ার হতে চান এবং আপনার দক্ষতা ও উপযুক্ততা বজায় রাখতে চান তবে সম্ভবত আপনাকে অনুশীলন করে যেতেই হবে। অন্যথায় আপনি হয়তো জানবেন কিভাবে কোন নির্দিষ্ট কাজ করতে হয়  কিন্তু আপনার পেশী হয়তো শেষ পর্যন্ত সেটা সঠিকভাবে প্রদর্শণ করতে ব্যার্থ হবে।

-শফিকুল ইসলাম  

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.