মাইটোকন্ড্রিয়ার একাল সেকাল

0
760

মাইটোকন্ড্রিয়া… জীবিত কোষের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি অঙ্গাণু। মাইটোকন্ড্রিয়া কিভাবে এলো? এই বিষয়ে চমৎকার একটি তত্ব আছে, যাকে বলা হয় ‘এন্ডোসিম্বায়োটিক থিওরি’। কিভাবে এককালের স্বাধীন ব্যাক্টেরিয়া বহুকোষীর পরাধীন হলো সেইসব ব্যাপার নিয়ে এই থিওরী। ছোটবেলা থেকেই আমরা জেনে এসেছি- মাইটোকন্ড্রিয়া হচ্ছে কোষের পাওয়ারহাউস। কথাটি ভূল নয়, তবে আরো কিছু আনুষঙ্গিক ঘটনা-চক্রে এর গুরুত্বপূর্ন অংশগ্রহণ আগ্রহীদের এর সম্পর্কে আরো জানতে উৎসাহী করেছে। একজনের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, মাইটোকন্ড্রিয়া কি শুধুই কোষের পাওয়ারহাউস? এর কাজ কি শুধুই কোষের জন্য জটিল কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয়া? আমাদের জীবনাচরন, রোগব্যাধী,প্রতিকূলতার মধ্যে টিকে থাকা, এসব বিষয়ে এর প্রত্যক্ষ কোন প্রভাব কি আছে? আস্ত একটা নিজস্ব জিনোম নিয়ে মাইটোকন্ড্রিয়া করে কি?

সর্বোচ্চ এক মাইক্রোমিটার ব্যাসার্ধ্যের এই লজেন্স আকৃতির অঙ্গাণুটি প্রায় প্রত্যেক বহুকোষীর কোষে পাওয়া যায়। কোষের ভেতরে কি মাইটোকন্ড্রিয়া তৈরি হতে পারে? হ্যাঁ, তবে যদি আরেকটি মাইটোকন্ড্রিয়া আগে থেকেই থাকে। তাহলে, আমার দেহের প্রথম মাইটোকন্ড্রিয়াগুলো কি কেউ সিরিঞ্জ দিয়ে পুশ করে দিয়েছিল? মোটেই না। এর জন্য আমাদের মায়েদের ধন্যবাদ দিতে হবে। আমরা শুধু আমাদের মায়ের থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া পেয়ে থাকি। কারন? নিষেকের সময় শুক্রাণুর যেই অংশটিতে মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে তা নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাপারটা মোটামুটি সব প্রজাতির ক্ষেত্রেই সত্যি। যেহেতু নানান প্রজাতির নানান কোষের, নানান রকম আচার-ব্যাবহার, তাই অন্যান্য নানান রকম বৈচিত্র্যের সাথে সাথে মাইটোকন্ড্রিয়ার সংখ্যাতেও পার্থক্য দেখা যায়, যা হতে পারে মাত্র ১ থেকে কয়েক হাজার।

এইবার দ্বিতীয় জিনোমের কথায় আসি। মানুষের জিনোমের মূল জিনোমের তুলনায় মাইটোকন্ড্রিয়ার জিনোম কিন্তু একদমই ছোট। মানুষের যেখানে প্রায় ৩ বিলিয়ন বেসযুগল, মাইটোকন্ড্রিয়ার সেখানে প্রায় ১৬,৬০০। তবে, মানুষের সম্পুর্ন জিনোম সিকোয়েন্স করতে প্রায় ২০০০ সাল চলে আসলেও, ১৯৮৭ সালেই মাইটোকন্ড্রিয়ার জিনোম সিকোয়েন্স করা হয় এবং ৩৭ টি জিন শনাক্ত করা যায়। ১৯৯০ এর দিকে জানা গেলো যে এর মধ্যে ১৩ টি জিন এটিপি তৈরিতে সাহায্যকারী বিভিন্ন প্রোটিন তৈরি করে, বাকী জিনগুলো যেই প্রোটিন তৈরি করে সেগুলো আবার অন্য আরেক প্রোটিন তৈরি করে। তাহলে মাইটোকন্ড্রিয়া শুধু শক্তি নয়, প্রোটিনও তৈরি করে। ‘মাইটোকন্ড্রিয়া কোষের পাওয়ার হাউস’-এই একমাত্র দাবীর বাইরে প্রথম প্রমাণ হিসেবে এটাকে ধরা যায়। তবে মাইটোকন্ড্রিয়াকে পুরোপুরি সচল থাকার জন্য আরো একশ রকম প্রোটিন দরকার, যা অবশ্য এক নম্বর জিনোম অর্থাৎ নিউক্লিয়াস থেকেই তৈরি হয়। বলে রাখা ভালো, জিন কিন্তু সরাসরি প্রোটিন তৈরি করেনা। এরা শুধু প্রোটিনের জন্য প্রয়োজনীয় এমিনো এসিডের সিকোয়েন্স বহন করে, তার থেকে প্রোটিন পর্যন্ত আসা আরেক এলাহী কারবার।

লেখার শুরুর দিকে মাইটোকন্ড্রিয়াকে পরাধীন বলা হলেও, মনে হয়না এই পরাধীনতা নিয়ে মাইটোকন্ড্রিয়ার কোন আক্ষেপ আছে। সে দিব্যি কোষের এই মাথা থেকে ওই মাথায় ছুটে বেড়ায়। একই মাইটোকন্ড্রিয়া ইচ্ছেমত মোটা-চিকন-লম্বা-খাটো হয়ে নিজের আকার পরিবর্তন করে। মাঝে সাঝে, ক্ষেত্রবিশেষে জালের মত একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে নিজেদের উপাদান আদান-প্রদান করে আবার ক্যাপসুল আকারে ফিরে যায়। কিছু কিছু পরিস্থিতিতে এরা নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে যখন শক্তির প্রয়োজন বেড়ে যায়, আবার নিজে কোন কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হলে বা ঠিক মত কাজ করতে না পারলে মরেও যায়। হুম, তাদেরও চমৎকার একটা সামাজিক জীবন আছে।

একটি নিউরন যখন সক্রিয় হয়, অর্থাৎ অন্য নিউরনের সাথে যোগাযোগ করে তখন নিউরনের নানা প্রান্ত থেকে মাইটোকন্ড্রিয়াগুলো সিন্যাপ্সের দিকে ছুটে যায়। আর এই বিষয়টাই স্মৃতিশক্তির প্রখরতার সাথে জড়িত থাকতে পারে। কারণ, সিনাপ্সে অধিক মাইটোকন্ড্রিয়ার উপস্থিতি বৈদ্যুতিক সংকেত আদান-প্রদান জোরালো করে। দূর্বল স্মৃতির অধিকারী ইঁদুরের ‘ওয়ার্কিং মেমরীর’ সাথে জড়িত নিউরনে অধিক স্মৃতির অধিকারী ইঁদুরের তুলনায় কম মাইটোকন্ড্রিয়া পাওয়া গেছে। যদিও এখনো স্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না এখানে কি ঘটছে, কিন্তু মাইটোকন্ড্রিয়া যে স্মৃতিশক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে-এটাই হলো মাইটোকন্ড্রিয়ার বিশাল কাজের তালিকার সাম্প্রতিক সংযোজন।

মাইটকন্ড্রিয়া আমাদের কোষের জন্য শক্তি তৈরির সাথে সাথে এক ধরনের আয়নিত অণুর সৃষ্ট করে যাকে ফ্রী র্যাডিকেল বলে। ধারনা করা হয় এই ফ্রী র্যাডিকেল গুলো কোষের নানা অংগানুর ক্ষতি সাধন করে এবং ধীরে ধীরে মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যকরিতা নষ্ট করে দেয়। তবে, ফ্রী র্যাডিকেল শুধু এই ক্ষতিই করেনা, তারা স্টেম সেল-এর পরিনত হওয়া এবং ভাইরাসের আক্রমনে নিরাপত্তা প্রতিক্রিয়া তৈরিতেও কাজ করে। আরো দেখা গেছে, সীমিত ক্যালোরি কিংবা সীমিত খাদ্যগ্রহনের ফলে যে সুসাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূর নজির রয়েছে তার কারন মূলত মাইটোকন্ড্রিয়ার তৎপরতা এবং ফ্রী রেডিকেল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ফ্রী-রেডিকেল সহ মাইটোকন্ড্রিয়ার ফ্যাক্টরগুলো আসলে সময়ের গ্রাস থেকে সম্ভবত আমাদের রক্ষা করতে পারে। এর কারনেই আমরা সুসাস্থ্যের জন্য কায়িক পরিশ্রমকে গুরুত্ব দেই, কারন এটা দেহের শক্তির প্রয়োজনীয়তা এবং মাইটোকন্ড্রিয়ার তৎপরতা দুইটাই বাড়ায়। এই মাইটোকন্ড্রিয়ার দৌড়ঝাঁপ বাড়ানোর জন্য আমাদেরও দৌড়ঝাঁপ করা লাগে এছাড়াও অনুকূল খাদ্যাভ্যাস কিংবা বিশেষ ওষুধও কাজে লাগতে পারে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষনায় দেখা গেছে, বৃদ্ধ ইঁদুরের পেশীতে GDF-11 ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে পুশ করলে তার শক্তি সামর্থ্য ফিরে আসে। যা মূলত মাইটোকন্ড্রিয়ার পুনরুদ্ধারের দ্বারা পেশীতন্তু পুনর্গঠনে সাহায্য করে। কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনার পাওয়া গেছে আরো চমকপ্রদ তথ্য। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করা কিছু ইঁদুর, যারা দ্রুত বুড়িয়ে যেতো কারন তাদের মাইটোকন্ড্রিয়ার মিউটেশনের প্রবনতা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, তাদের ৫ মাস সপ্তাহে তিন দিন করে সহনশীল ব্যায়াম করিয়ে এই ত্রুটিপূর্ন মাইটোকন্ড্রিয়া একেবারে ঢেলে সাজানো সম্ভব হয়েছে। তাদের মধ্যে অতিরিক্ত মিউটেশন এবং দ্রুত বার্ধক্যের লক্ষনগুলো আর পাওয়া যায়নি। তাহলে বলাই যায়, মাইটোকন্ড্রিয়া আমাদের জীবন দৈর্ঘ্যের সাথেও জড়িত।

তবে, এইসব নতুন পাওয়া ক্রিয়াকলাপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তা হল ‘হিউম্যানিন’ এর সাথে মাইটোকন্ড্রিয়ার সম্পর্ক। ‘হিউম্যানিন’কে প্রায় এক দশক আগে মানুষের মগজের কোষে শনাক্ত করা গেছে। বেটা এমাইলয়েড প্রোটিন নিউরন ধ্বংস করে, যার ফলে আলঝেইমার হয়। হিউম্যানিনের কাজ এই বেটা এমাইলয়েডকে দমন করা। ডায়বেটিক ইঁদুরে হিউম্যানিন প্রয়োগ করে ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে ‘সুগার টলারেন্স’ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। আর্থেরোস্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত ইদুরে এটা প্রয়োগ করার ফলে এদের ধমনীতে রক্ত জমাট বাধার প্রবনতা কমে গেছে- যা হৃদরোগের প্রধান কারন। যা মানুষের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা সম্ভব হতে পারে। মানুষের জিনোমে অনেকগুলো হিউম্যানিনের মত কাছাকাছি সিকোয়েন্স থাকলেও, মাইটোকন্ড্রিয়ার একটি জিনের মধ্যে নেস্টেড অবস্থায় হুবুহু এই সিকোয়েন্স আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন হিউম্যানিন আসলে মাইটোকন্ড্রিয়ার জিনোমের থেকে তৈরি হয়, আর মানুষের জিনোমে এর আবছা উপস্থিতির কারনটা বিবর্তনীয়। মাইটোকন্ড্রিয়ার জিনোমে এরকম প্রায় ৫০০ ‘রাশিয়ান ডল’ জিনের অস্তিত্ব শনাক্ত করা গেছে। ব্যাক্টেরিয়ার জিনোমও এইরকম বহুসংখ্যক নেস্টেড জিন ধারনের জন্য বিখ্যাত। যদিও এখনো অপ্রকাশিত তবে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক ডঃ পিনচাস কোহেনের এই গবেষনা মাইটোকন্ড্রিয়ার পূর্বপুরুষ যে ব্যাক্টেরিয়া তার পক্ষে চমৎকার একটি ব্যখ্যা দেয়।

মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ আসলে কোষের মৌলিক ক্রিয়ার নিবিড়ভাবে জড়িত, এবং সম্ভবত শুরু থেকেই জড়িত রয়েছ- তা যখনই হোক। “সকল প্রকৃতকোষী যাদের ডিএনএ ভিত্তিক নিউক্লিয়াস আছে, তাদের মাইটোকন্ড্রিয়াও রয়েছে কিংবা ছিল”(Giradia গোত্রের এক পরজীবির মাইটোকন্ড্রিয়া থাকেনা) ব্যাপারটি এটাই বলে- যেই ব্যাক্টেরিয়ার সাথে মিথস্ক্রিয়ার ফলে মাইটোকন্ড্রিয়া তৈরি হয়েছে, তা আমাদের এতদিনের ধারনারও বহু আগে ঘটেছিল। অন্তত ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে নিউক্লিয়াসের বিবর্তনের আগে তো বটেই। একটা থিওরী দেয়া যায়, এক কোষী প্রাণের বহুকোষের দিকে যাওয়ার বড় একটা বাধা ছিলো শক্তির সমস্যা। মাইটোকন্ড্রিয়া অধিগ্রহনের মাধ্যমে এই সমস্যা কোষ দূর করতে পারে। তাই বলা যায়, মাইটোকন্ড্রিয়া আসলে বিবর্তনের কোন পরোক্ষ দর্শক নয়, বরং একটি বিশ্বস্ত দ্বিতীয় জিনোম, এবং জিনগত উপযোজনের দ্বিতীয় উৎস।

এইবার একটা মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া তথ্য। মাইটোকন্ড্রিয়াতে তার ব্যাকটেরিয়া পূর্বপুরুষের মত ডিএনএ রক্ষনাবেক্ষনের যন্ত্রপাতি থাকেনা। যার ফলে এতে খুব দ্রুত মিউটেশন ঘটে। একটা মাইটোকন্ড্রিয়াতে একই জিনোমের কয়েকশ কপি থাকে, আবার একটি কোষে কয়েকশ মাইটোকন্ড্রিয়া থাকতে পারে। তার মানে প্রতি মুহুর্তেই এই মিউটেশনের ফলে মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএর বৈচিত্র্য পরিবর্তিত হচ্ছে। আরো চমকপ্রদ একটা আবিষ্কার, যা মাত্র গত বছর পাওয়া গেছে তা হলো- আমরা একাধিক মাইটোকন্ড্রিয়াল ভেরিয়েশন নিয়ে জন্মাই, যেই ভেরিয়েশন নিষেকের সময় ডিম্বকে তৈরি হয়। মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ যখন এত দ্রুতই বদলায়, তাহলে স্বাভাবিক জিনগত উপযোজনের তুলনায় মাইটোকন্ড্রিয়ার উপযোজন দ্রুতই ঘটে। তিব্বতে পরিচালিত সাম্প্রতিক একটি গবেষনা বিভিন্ন উচ্চতায় বসবাসকারী মানুষ এবং তাদের মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ তে নির্দিষ্ট মিউটেশনের যোগসূত্র প্রকাশ পেয়েছে। মাত্র কয়েক শত বছরের সময় স্কেলের মধ্যে নিম্ন-অক্সিজেনের সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য মাইটোকন্ড্রিয়ার মিউটেশনের সম্ভাব্যতাকেই নির্দেশ করে। এ সম্পর্কে আরো ধারনা পাওয়া যায় ফ্রুটফ্লাইয়ের ওপর একটি গবেষনা থেকে। এরা পৃথিবীর নানা প্রান্তে টিকতে পারে কারন, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ তে কিছু মিউটেশন। যা তাদের খাদ্যাভ্যাসের দ্বারা প্রভাবিত। নির্দিষ্ট পরিবেশে অভিন্ন নিউক্লিয়ার জিনোম কিন্তু ভিন্ন মাইটোকন্ড্রিয়ার জিনোমের ফ্রুটফ্লাই চাষ করে দেখা গেছে-নির্দিষ্ট কিছু মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোমধারী ফ্রুটফ্লাইয়ের সবকিছুই অন্যগুলোর চেয়ে বেশি। ধারনা করা হয়, বিভিন্ন মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম ফ্রুটফ্লাইয়ের মৌলিক কোষীয় ক্রিয়া গুলোকে প্রভাবিত করে বিভিন্ন পরিবেশে টিকে থাকতে সাহায্য করে।

মানুষের ক্ষেত্রে মাইটোকন্ড্রিয়ার উপকারী অভিযোজন শুধু প্রজন্মান্তরেই নয়, একজনের জীবদ্যশাতেও হতে পারে। স্কট উইলিয়াম এবং তার দল কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকের দশ ধরনের টিস্যু থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া সংগ্রহ করে দেখেন যে প্রতি টিস্যুতে মাইটোকন্ড্রিয়ার জিনোমে নির্দিষ্ট কিছু মিউটেশন ঘটেছে যা ব্যাক্তিভেদে খুব একটা পার্থক্য দেখায়নি। তাঁরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের কোষের ব্যাতিক্রমী চাহিদা পূরনের জন্য এই মিউটেশনগুলো ঘটেছে। অর্থাৎ, আমাদের বিকাশের সাথে সাথে মাইটোকন্ড্রিয়ার জিনোমে মিউটেশনের প্রকাশ ঘটে।

এই নতুন নতুন আবিষ্কারগুলো দিনে দিনে আমাদের কাছে মাইটোকন্ড্রিয়াকে আরো ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করছে। তবে, এর সত্যিকারের সুফল পেতে হলে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করা লাগতে পারে। ব্যাপারগুলো জনমনে উত্তেজনা বা উদ্বেগ যাই তৈরি করুক, অন্তত মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভংগী উন্নত করার এটাই সময়। [Possessed! The powerful aliens that lurk within you by Garry Hamilton, New Scientist অবলম্বনে]

-রুহশান আহমেদ
জিন প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্তির শিক্ষার্থী,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
[লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল]

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.